কৃষি-সরঞ্জাম কিনতে ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেবে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের নগদ ভর্তুকি প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও রাজ্যে এই ব্যবস্থাই চালু করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আগামী বছরের শুরু থেকে দেশের ৪৩টি জেলায় নগদ ভর্তুকি প্রকল্প চালু করছে কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে ভাতা, পেনশন, রেশন-সহ ৩৪টি প্রকল্প। এই সব প্রকল্পে ভর্তুকির টাকা উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে যাবে। একই ভাবে রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য কলকাতা বাদে বাকি সব জেলায় চলতি আর্থিক বছর থেকে নগদ ভর্তুকি প্রকল্প চালু করবে। এ ক্ষেত্রেও উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে যাবে ভর্তুকির অর্থ। এ জন্য ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত সপ্তাহে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় কোনও প্রকল্পের অন্তর্গত নয়। এটা একান্ত ভাবেই রাজ্যের নিজস্ব।
চাষবাসের কাজে যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহারকে জনপ্রিয় করতেই এই সহায়তা দেবে রাজ্য। এতে কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের কৃষি সাজসরঞ্জাম কেনার জন্য ১০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি পাবেন। এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বীজ, সার, কীটনাশক এবং সেচের জলের উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য যন্ত্রের প্রয়োগ বাড়াতেই রাজ্য আর্থিক সহায়তা দেবে।
এক একটি ক্ষেত্রের জন্য ভর্তুকির হার হবে ভিন্ন। যেমন, পাঁচ অশ্বশক্তি পর্যন্ত ডিজেল বা বৈদ্যুতিক পাম্প সেট কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি মিলবে। আবার, ৪০ অশ্বশক্তি পর্যন্ত ট্রাক্টর এবং আট অশ্বশক্তি বা তার বেশি ক্ষমতার পাওয়ার টিলার কেনার জন্য ভর্তুকি মিলবে ৪৫ হাজার টাকা। কৃষি-সরঞ্জাম কিনতে আগেও ভর্তুকি দিত সরকার। কিন্তু তার সঙ্গে নতুন প্রকল্পের পার্থক্য আছে দাবি করে রাজ্যের কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “আগে ভর্তুকির পরিমাণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কৃষকের কাছে একটি কাগজ পাঠানো হত। তিনি সেই কাগজ এলাকার সংশ্লিষ্ট কৃষি-সরঞ্জাম সরবরাহকারীর কাছে পৌঁছে দিতেন। সঙ্গে নিজস্ব বিনিয়োগ ও ঋণের কাগজপত্রও। এর পরেই কৃষককে যন্ত্রপাতি দিতেন তিনি। আর কৃষকের দেওয়া ভর্তুকির কাগজ সরকারের ঘরে জমা দিয়ে টাকা তুলে নিতেন।” কৃষিসচিবের মতে, “ওই প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত ছিল না।” কারণ, কৃষক তাঁর পছন্দের ‘ব্র্যান্ড’-এর যন্ত্রপাতি পেতেন না। যন্ত্র কেনার পরে তা খারাপ হলে মেরামতির নিশ্চয়তা ছিল না। আবার, অনেক ক্ষেত্রে ভর্তুকির টাকায় যন্ত্রপাতিই কেনা হত না। নতুন প্রকল্পে এই সমস্যাগুলো থাকবে না বলে দাবি কৃষিসচিবের। নতুন পদ্ধতিতে, যে ব্যাঙ্কে কৃষকের অ্যাকাউন্ট থাকবে, সেখানেই ভর্তুকির টাকা জমা পড়বে। কৃষকের কাজ হবে পছন্দের সরবরাহকারীর কাছ থেকে যন্ত্রের দামের তালিকা ব্যাঙ্কের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ব্যাঙ্ক দেখবে, ভর্তুকির বাইরে বাড়তি যে টাকা লাগছে, তা সংশ্লিষ্ট কৃষক নিজে দেবেন, নাকি ঋণের প্রয়োজন হবে? ঋণ লাগলে নাবার্ডের সাহায্য নিয়ে যন্ত্রের পুরো টাকাই সরবরাহকারীকে মিটিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক।
ভর্তুকি পেতে ব্লক স্তরে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। জেলাশাসকের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি তা বিচার করে মঞ্জুর করবে। এই প্রকল্পের জন্য জেলাগুলিতে তিন থেকে আট কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ করা হয়েছে। |