পাঁচ বলে রাজা। শেষ বলে ফকির!
অল্প কথায় ওয়াংখেড়ের শনিবাসরীয় নাটককে ব্যাখ্যা করতে হলে অনায়াসে লাইনটা ব্যবহার করা যায়।
শেষ ওভারের শেষ বল করতে আসছেন দিন্দা। ক্রিজে ইংরেজ অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। জিততে ইংল্যান্ডের দরকার তিন। আগের পাঁচটা বল অসাধারণ করেছেন। দিয়েছেন মোটে ১, ১, ১, ২ এবং ১।
পাগলের মতো চেঁচাচ্ছে ওয়াংখেড়ে— ‘দিন্দা...দিন্দা.. দিন্দা।’ ভারতীয় ডাগআউট তুমুল উত্তেজিত। কানে সেকেন্ডে-সেকেন্ডে ছিটকে আসছে বাংলা পেসারের নামে তুমুল জয়ধ্বনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, কমেন্ট্রি বক্সে তিনি কী করছেন? কিছুটা প্রার্থনা, কিছুটা আর্তি মেশানো একটা গলা পাওয়া গেল, “আর যা-ই হোক, শর্ট যেন না হয়...।”
পুরো রান-আপ নিয়েও হঠাৎ ছন্দপতন। দিন্দা বলটা করলেন না। ‘ডেড বল।’ বাঙালি পেসার কী নার্ভাস? নাকি ইচ্ছে করে ইংরেজ ক্যাপ্টেনকে চমকে দিতে চাইলেন? ধোনি ডেকে নিলেন তাঁকে। মাঝপিচের এক কোণে যুবরাজ-গম্ভীররাও তখন দিন্দাকে ঘিরে। ধোনিও বৈঠকে ঢুকে পড়লেন। জয়ের হাতছানি কি তা হলে ভরিয়ে দিল টিম ইন্ডিয়ার ফাটলগুলো?
তবু শেষরক্ষা হল না।
ম্যাচের শেষ বলটা মর্গ্যান উড়িয়ে দিলেন বাউন্ডারির উপর। আর ওই এক ছক্কাতেই সিরিজ ১-১। নিমেষে রাতের ওয়াংখেড়ে নিস্তব্ধ। টেস্ট সিরিজের পর এ বার জেতা গেল না ধোনির পছন্দের টি-টোয়েন্টিতেও। ক্যাপ্টেন কুল নিজেকেও ক্ষমা করতে পারবেন কি? শেষ ওভারে মর্গ্যানকে (২৬ বলে ৪৯ ন:আ:) রান আউট করার ওই সুযোগ তিনি হেলায় হারাবেন? ইংরেজ অধিনায়ক তো কলার তোলা ঔদ্ধত্য নিয়ে ফিরতেই পারতেন না, ধোনির ও রকম অযাচিত ‘সাহায্য’ না পেলে! |
ধোনির প্রস্থান। ছবি: পিটিআই |
আর শেষ ওভারের ট্র্যাজিক নায়ক যদি বাংলার দিন্দা হন, ম্যাচের ‘ট্র্যাজেডি’ তৈরি হল সিরিজ-সেরা যুবরাজকে ঘিরে। পুণেতে ছিল ব্যাটে-বলে মস্তানি। আর এ দিন ব্যাটিং ব্যর্থতা পুষিয়ে দিলেন বল হাতে। ওয়াংখেড়েতে তাঁর বোলিং দেখে তো আকাশ চোপড়া টুইট করে ফেললেন, ‘কোনও কথা হবে না। ভারতের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার যুবরাজ!’ পুণেতে ৩-১৯ ছিল টি-টোয়েন্টিতে যুবরাজের সেরা বোলিং গড়। এ দিন সেটা বদলে দাঁড়াল ৩-১৭। আট ওভার শেষে ইংল্যান্ড ৭৯-০। ন’নম্বর ওভারে বল হাতে যুবরাজ, আর সেখান থেকেই ম্যাচের রঙ বদল। ২-০ জয়ের স্বপ্ন দেখার শুরু।
যুবরাজ যে স্বপ্নটা দেখানো শুরু করেছিলেন, সেটা ভাঙল বোলারদের ছন্দের অভাবের জন্য। অন্যতম খলনায়ক নিঃসন্দেহে পরবিন্দর আওয়ানা। যিনি শুরুতে ক্যাচ ফেললেন। আর ডেথে একের পর এক শর্ট বলের মোড়কে ম্যাচটা উপহার দিলেন ইংরেজদের। ১৯তম ওভারে বল করতে এসে দিয়ে গেলেন চোদ্দোটা অমূল্য রান। ওই ওভারটা না হলে শেষ ওভারে দিন্দার উপর এতটা চাপ পড়ত না। অশ্বিনের কথাও যত কম বলা যায় তত ভাল। চার ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান। উইকেট শূন্য। যা দেখে কোনও এক ক্রিকেট রসিক তো টুইটারে বলেই ফেললেন, ‘অশ্বিনের কি দাঁত পড়ে গিয়েছে? ওর কামড়টাই তো নেই!’ ঝাঁঝালো প্রশ্ন কিন্তু তৈরি হচ্ছে ক্রিকেটমহলে। যে উইকেটে যুবরাজ পারছেন, অশ্বিন কেন পারছেন না?
ভারতীয় ব্যাটিং নিয়েও তো চিন্তা থেকে যাচ্ছে। শুরুটা ভাল হচ্ছে, কিন্তু ‘ফিনিশ’ করার আগেই খেল খতম গম্ভীর-রাহানে-কোহলিদের। শনিবার দ্বিতীয় ওভারে রাহানে আউট হওয়ার পর রীতিমতো রাজকীয় মেজাজে ব্যাট করছিলেন কোহলি। কিন্তু ২৫ বলে ৩৮ করার পর যখন মনে হচ্ছে ৭০-৮০-র ইনিংস আসছে, তখনই মিকারের বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ। পুণের পর আবার ব্যর্থ কেকেআর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর। ১১ ওভার পর্যন্ত উইকেটে ছিলেন। ‘সেট’ হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। অথচ ২৭ বলে এল মাত্র ১৭। শেষমেশ হাল ধরল চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে বহু ম্যাচ বের করা জুটি ধোনি ও রায়না। ২৩ বলে ৫০ রানের জুটি না থাকলে ১৭৭-ও হত না।
সব মিলিয়ে, তরুণ-অনভিজ্ঞ ইংল্যান্ডকেও হারানো গেল না। হারানো গেল না এমন একটা টিমকে, যারা কি না মোটেই পাতে দেওয়ার মতো নয়। পাকিস্তান সিরিজের আগে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের আবহটা বোঝা যাচ্ছে? টেনিদার কথায় বলতে হলে, ‘ঘোর পুঁদিচ্চেরি’!
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১৭৭-৮ (কোহলি ৩৮, ধোনি ৩৮) ইংল্যান্ড ১৮১-৪ (লাম্ব ৫০, মর্গ্যান ৪৯ ন:আ:, যুবরাজ ৩-১৭, দিন্দা ১-৪৪)। |