এই শীতে রাজ্যের নানা পর্যটন কেন্দ্রে ছুটির দিনগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। কিন্তু গাদিয়াড়া প্রায় সুনসান। পরিকাঠামোর অভাব ছিলই। তার সঙ্গে এ বার প্রায় ১৫টি হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলকাতার কাছে এক সময়ের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রটি বিকেলের পর থেকে ভুতুড়ে চেহারা নিচ্ছে।
৩০ বছর আগে রাজ্য সরকার হাওড়ার শ্যামপুরের গাদিয়াড়াকে পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি দেয়। এক সময়ে গাদিয়াড়া জেলারও অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত। রূপনারায়ণ-হুগলি নদীর সংযোগস্থলের প্রাকৃতিক দৃশ্যও নয়নাভিরাম। কলকাতা থেকে গাদিয়াড়া গাড়িতে যেতে সময় লাগে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। অনেকেই এক সময়ে সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে চলে যেতেন সেখানে।
কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রের স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে কখনই গাদিয়াড়ার পরিকাঠামোর দিকে সে ভাবে নজর দেওয়া হয়নি। নদীর ধারে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় পাড় বাঁধানো হয়েছে আংশিক। সেখানে বেঞ্চ বসানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তা ভেঙেচুরে গিয়েছে। অনেক জায়গায় ভেঙেছে নদীর চরও। নদীর পাড়ে আলোও নেই। অবশ্য রাজ্য পর্যটন দফতরের একটি লজ রয়েছে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ড থেকে লজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা বেশ খারাপ। গাড়িতে বা ভ্যানরিকশায় যেতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়।
তবু, এ সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বেড়ানোর নেশায় পর্যটকেরা চলে আসতেন গাদিয়াড়ায়। কিন্তু এ বার শীতের মরসুম শুরুর মাস তিনেক আগেই লাইসেন্স নিয়ে জটিলতা এবং কিছু নিয়ম-নীতির কারণে ১৫টি বেসরকারি হোটেল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তার মধ্যে কয়েকটি হোটেলে অবাধে দেহ ব্যবসাও চলত বলে অভিযোগ। |
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, লাইসেন্স থাকলেও প্রতিটি হোটেলকে কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমন ‘কাস্টমার রেজিস্টার’ রাখা। কারা হোটেলে এলেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা এবং সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বর সেই রেজিস্টারে লিখে রাখতে হয়। কিন্তু লাইসেন্স না-থাকায় এ সব নিয়মনীতি হোটেল কর্তৃপক্ষ মানেন না। গাদিয়াড়ার ওই সব হোটেল-মালিকদের অবশ্য দাবি, লাইসেন্স তাঁদের প্রত্যেকেরই রয়েছে। কিন্তু এগুলি পুনর্নবীকরণে সমস্যা হচ্ছে। হোটেল-মালিক সংগঠনের নেতা দুলাল বেরা বলেন, “জেলাশাসক প্রতি বছর লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করেন। কিন্তু সেই পদ্ধতিটি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। বিষয়টি সরল করা প্রয়োজন।”
এই সব পরিস্থিতির জন্য পর্যটক প্রায় আসছেন না বললেই চলে। আর এর প্রভাব পড়েছে বাস চলাচলের উপরেও। যাত্রীর অভাবে হাওড়া-গাদিয়াড়া রুটে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধর্মতলা-গাদিয়াড়া রুটে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস চলে। কিন্তু বিকেল চারটের পর থেকে এই রুটের বাসেরও দেখা মেলে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। পর্যটকদের সংখ্যা কমতে থাকায় গাদিয়াড়ায় খাবারের দোকানগুলিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। গাদিয়াড়া বাসস্ট্যান্ডে একটি রেস্তোঁরার মালিক সুকুমার জানা বললেন, “এক সময়ে আমার কাছে পাঁচ জন কাজ করতেন। কিন্তু এখন মাত্র একজন কাজ করেন। তাঁর বেতনও দিতে পারছি না।”
ওই পর্যটন কেন্দ্রটি দেখভালের যাবতীয় দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। পর্যটন কেন্দ্রটি যে ধুঁকছে, তা কার্যত মেনে নিয়ে জেলাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “১৫টি হোটেলের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের বিষয়টি কোথায় আটকাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে। আমি শীঘ্রই গাদিয়াড়া যাব। পর্যটন কেন্দ্রটির উন্নতির জন্য একটি সার্বিক পরিকল্পনা করা হবে। বাকি সমস্যাগুলিও ওই সময়ে খতিয়ে দেখা হবে।” |