জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার গুজরাতের মাটিতে নিজেদের দ্বিতীয় কারখানা গড়ার কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল মারুতি। গাঁধীনগরের তখতে তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদী ফিরে আসার ঠিক পরেই। দেশের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতার দাবি, সরকারি সহায়তায় নিজেদের কেনা ৬০০ একর জমির উপরেই ওই কারখানা গড়বে তারা।
গুজরাতে প্রথম কারখানা তৈরির জন্য জুন মাসেই মোদী-সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করেছিল মারুতি-সুজুকি ইন্ডিয়া। মেহসানায় সরকারের দেওয়া ৭০০ একর জমিতে প্রাথমিক ভাবে ৪ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করার কথা জানিয়েছিল তারা। মোদীর রাজ্যে সংস্থার দ্বিতীয় কারখানাটি তৈরি হবে সেই মেহসানা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে।
শনিবার নয়াদিল্লিতে মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব বলেন, “গুজরাতে দু’জায়গায় আমাদের জমি রয়েছে। প্রথমটি সরকারের দেওয়া। আর দ্বিতীয়টি সরাসরি কিনে নিয়েছি আমরাই। তবে সেখানেও প্রয়োজনমতো সহায়তা করেছে সরকার।”
মারুতির মতো দেশের প্রথম সারির গাড়ি সংস্থা যে প্রকল্প সম্প্রসারণের জন্য প্রথম কারখানার কাছেই জমি বাছবে, তা স্বাভাবিক। তা ছাড়া, এই জমি কেনার কথা গত ২৯ অক্টোবরই জানিয়েছিল তারা। তাই সে অর্থে এই ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু শিল্পমহলের মতে, যে দ্রুততা ও মসৃণতায় জমি নেওয়ার কাজ সম্ভব হল, তা থেকেই স্পষ্ট যে, শিল্পায়নের প্রশ্নে কেন দেশে ক্রমশ মডেল হয়ে উঠছে গুজরাত।
অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে সরকার যখন শিল্পের জন্য এক ছটাকও জমি কিনতে বা কেনায় মধ্যস্থতা করতে নারাজ, তখন গুজরাতে মারুতি কিন্তু প্রথম পা রেখেছে সরকারেরই দেওয়া জমিতে। দ্বিতীয় দফায় সেই প্রয়োজন আর হয়নি। মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনে নিয়েছে সংস্থাই। কিন্তু সেই দর কষাকষিতে সরকারি সহায়তার হাত পিছনে থাকায় সহজ হয়েছে এক লপ্তে ৬০০ একর জমি পাওয়া। বহু দিন ধরেই যে দাবি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে জানিয়ে আসছে এ রাজ্যের শিল্পমহল।
শুধু তা-ই নয়। লগ্নির টানে লগ্নি আসার কথা গাড়ি শিল্পে বহুল প্রচলিত। সেই তত্ত্বের সুফলও হাতে-হাতে পেয়েছে গুজরাত। টাটাদের ন্যানো প্রকল্প সিঙ্গুর ছেড়ে সানন্দে যাওয়ার পর, গাড়ি শিল্পের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে মোদীর রাজ্য। প্রথম দফায় সেখানে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা আগেই জানিয়েছে মারুতি। কারখানা গড়ছে ফোর্ড। লগ্নির কথা জানিয়েছে ফরাসি গাড়ি বহুজাতিক পেজো-ও।
এ সবের পর এ বার গুজরাতে নিজেদের দ্বিতীয় কারখানা গড়ার বন্দোবস্তও পাকা করে ফেলল মারুতি।
গাড়ি শিল্পের হাত ধরে মোদী-রাজ্যে এখন লগ্নির ভিড় অনুসারী শিল্পেও। যে সব গাড়ি-যন্ত্রাংশ সংস্থা ন্যানোর ‘পার্টস’ জোগাতে সানন্দে কারখানা গড়েছে, এখন ফোর্ড আর মারুতির কাছেও বরাত পাচ্ছে তারা। এমনকী এই তালিকায় রয়েছে কলকাতার সংস্থাও।
শিল্পের জন্য জমির বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী পুরোপুরি হাত গুটিয়ে থাকলে, লগ্নির এই স্রোত গুজরাতে বইত কি না, সেই প্রশ্নই তুলছেন অনেকে। |