|
|
|
|
নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, খুনের হুমকি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
একই দিনে মালদহের দু’জায়গায় ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার বিকেলে কালিয়াচকে এক ছাত্রীকে পাঁচ যুবক আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে যায়। হোটেলে রাতভর তাকে ধর্ষণ করে এক যুবক। রাতে রতুয়ায় এক বিধবা মহিলাকে গণধর্ষণের পরে গলা টিপে খুনের চেষ্টা করে চার প্রতিবেশী। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “দু’টি অভিযোগই গুরুতর। রতুয়ার অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে মনে হচ্ছে। সব থানাকে সতর্ক করে তল্লাশি চলছে। পাশের জেলাতেও সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে। কালিয়াচকের অভিযুক্ত দুই যুবকের গতিবিধির স্পষ্ট তথ্য মিলেছে। শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা যাবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটে নাগাদ কালিয়াচক এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী সুজাপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিল। বামনগ্রাম ফুটবল মাঠের কাছে তার পথ আটকায় পাঁচ যুবক। অভিযোগে ওই ছাত্রী জানায়, দু’জনের নাম সে জানতে পেরেছে। এক জন কালাম ও অন্য জন মোকদ্দর। প্রথম বর্ষের ছাত্র কালাম এলাকার এক সিপিএম নেতার ছেলে বলে পুলিশ জেনেছে। আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ও মুখে কাপড় গুঁজে ওই ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে কালিয়াচকে নিয়ে যাওয়া হয়। সারারাত তাকে একটি হোটেলে আটকে রেখে কালাম একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। সকালে বালিয়াডাঙার কাছে তাকে নামিয়ে পাঁচ জনই গাড়ি নিয়ে পালায়। শুক্রবার সকালে কালিয়াচক থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে ওই ছাত্রী। তার মায়ের অভিযোগ, “থানায় জানানোর পর থেকেই অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন ভয় দেখাচ্ছে। মামলা না তুললে খুনের হুমকি দিচ্ছে।” জয়ন্তবাবু জানান, ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। ভয় দেখানোর অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দলীয় নেতার ছেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রও। তিনি বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। যে এই জঘন্য কাজ করেছে দল কখনও তার পাশে দাঁড়াবে না।” রতুয়ার ধর্ষিতা বিধবার বয়স তিরিশের কোঠায়। বছর পনেরো আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। কিছু দিন পর একমাত্র মেয়েও মারা যায়। তার পরে শ্বশুরবাড়ি রাজারামপুর থেকে রতুয়ায় চাঁদমণি পূর্বপাড়ায় বাপের বাড়িতে ওঠেন তিনি। সেখানেই বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, রাত আটটা নাগাদ শৌচকর্ম করতে তিনি বাড়ির বাইরে বার হন। আচমকা তাঁকে জাপটে ধরে মুখে কাপড় গুঁজে দেয় চার প্রতিবেশী স্থানীয় ডাকঘরের এক পিওন আবু বক্কর এবং বাকি তিন জন সাবদুল হক, মজিবুর রহমান ও সহিমুদ্দিন শেখ। প্রত্যেকেরই বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। মহিলা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় ঘুঁষি মেরে তাঁর দাঁত ভেঙে দেয় অভিযুক্তরা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে চার জন ধর্ষণ করে মহিলাকে। অভিযোগ, চিনে ফেলায় তাঁকে শ্বাসরোধ করে মারারও চেষ্টা করে তারা। ওই সময় রাস্তায় যাচ্ছিলেন স্থানীয় মসজিদের মৌলভি মৌলানা আবুল জলিল। তিনি বলেন, “গোঙানির আওয়াজ শুনে টর্চ জ্বালাতেই দেখি কয়েকজন ছুটে পালাচ্ছে। কাউকেই চিনতে পারিনি।” খবর পেয়ে প্রতিবেশী তথা রতুয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রাশেদ আলি বাসিন্দাদের নিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালে যাওয়ার আগে পুলিশকে চার প্রতিবেশীর নাম জানিয়েই জ্ঞান হারান ওই মহিলা। জ্ঞান ফেরে শুক্রবার দুপুরে। হাসপাতালে তিনি বলেন, “বাধা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেও পেরে উঠিনি। প্রত্যেককে চিনি। মৌলভি সাহেব না পৌঁছলে ওরা আমাকে মেরেই ফেলত।”
এ দিন হরিশ্চন্দ্রপুরে একটি রাস্তার শিলান্যাস সেরে ফেরার পথে রতুয়া হাসপাতালে যান কৃষ্ণেন্দুবাবু। সঙ্গে ছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিন মন্ত্রীর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই মহিলা। তিন মন্ত্রী একযোগেই বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। এ সব বরদাস্ত করা যাবে না। পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” |
|
|
|
|
|