পাছে চুরি যায়, কম্বল বাড়ন্ত হাসপাতালে
চিকিৎসায় গাফিলতি, চিকিৎসকের বদলে ফার্মসিস্ট-ই ভরসা কিংবা কোথাও চিকিৎসক-নার্সের অভাবে ধুঁকছে স্বাস্থ্য পরিষেবা, এ সবই চেনা অভিযোগ।
সরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তালিকায় এ বার নয়া সংযোজন, শীতে চাদর-কম্বলই দেওয়া হচ্ছে না রোগীদের।
কান্দি মহকুমার বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠেছে। রোগিদের একাংশের দাবি, “চাদর কম্বল থাকলেও দেওয়া হচ্ছে না।” কেন? হাসপাতালের এক কর্মী নির্বিকার গলায় বলছেন, “রোগীরা অনেক সময়েই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় ব্যাগ-বন্দি করে চাদর কম্বল করে নিয়ে চলে যান। তাই ওই সব আর দেওয়া হচ্ছে না।”
হাসপাতল বলে চেনাই দায়। বড়ঞাক সেই গ্রামীণ হাসপাতালে ঢুকে দেখা গিয়েছে, ছেঁড়া দলা পাকানো গদিতে শুয়ে আছেন রোগীরা। শীতে অনেকেই জড়সর। কেউ কেউ নিজেই বাড়ি থেকে বয়ে এনেছেন সব। কিন্তু যাঁরা দূরের গ্রাংম তেকে এসেছেন? হাঁফাতে হাঁফাতে এক রোগী বলছেন, “কী করে জানব যে সরকারি হাসপাতালেও বিছানা বগলে করে আসতে হবে!” পাশের শয্যায় শুয়ে অন্য এক রোগী জানান, এ হাসপাতালে আগে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এ বার চিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন কম্বল। তিন দিনের জ্বর নিয়ে ভর্তি আছেন সিরাজুল সেখ। তিনি বলেন, “আমি তো লেপ, কম্বল, বালিশ, চাদর সব কিছুই বাড়ি থেকে এনেছি। কোন কিছুই হাসপাতাল দেয়নি।”
বড়ঞা স্বাস্থ্য আধিকারিক তারক বর্মন অবশ্য দাবি করেছেন, এ অভিযোগ ঠিক নয়। তা হলে ঠিক টা কী? তিনি বলেন, “রোগীরা চাইলেই আমরা অবশ্যই চাদর, কম্বল তা দিই।” মানে এই ডেসেম্বরের শীতে অসুস্থ রোগীকে নিজের মুখে কম্বল চাইতে হবে?
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বলেন, “এমন অভিযোগ ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে করেননি এমন নয়, তবে হাসপাতাল থেকে কেউ কিছু নিয়ে গেল কিনা সে দিকে নজক রাখার দায়িত্ব তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের-ই। তা বলে শীতে চাদর-কম্বল দেওয়া হবে না!” বিষয়টা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক তথা বড়ঞা ব্লক রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রতিমা রজক বলেন, “এমন অভিযোগ তো শুনিনি। এ যদি হয়ে তাকে তাহলে ভারী অন্যায়। শীতে কম্বল আবার চাইতে হবে কেন? আমি ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।”
গত কয়েক বছর ধরেই এই হাসপাতালটির দিকে নজর নেই স্বাস্থ্য দফতরের। পালাবদলের পরেও উন্নতি হয়নি হাসপাতালের। ৫০টি শয্যার বদলে আছে মাত্র ৩০টি। অথচ নিয়মিত এই হাসপাতালে অন্তত ৪০ জন রোগী ভর্তি হন। ফলে বাকিদের ভরসা মেঝে। ওয়ার্ডের ভিতরে গেলে দেখা যাবে সিলিং থেকে ঝুলছে ঝুল। ঘরের কোনে জমা হয়ে আছে আবর্জনার স্তূপ। দরজা-জানলাও বন্ধ হয় না। হাসপাতালে চিকিৎসক ও সুইপারের সংখ্যাও স্বল্প। আট জন ডাক্তারের পরিবর্তে রয়েছেন মাত্র চার জন। নার্স থাকার কথা ১৬ জন। আছেন ৯ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন ১১ জন। সুইপার ৪ জন থাকলেও প্রয়োজন অন্তত ৮ জন।
কম্বলহীন শয্যায় কাঁপতে কাঁপতে এক রোগীর তাই আক্ষেপ, “কবে যে এই হাসপাতালের স্বাস্থ্য ফিরবে!” কেউ জানে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.