প্রচারে ঘাটতির কথা কবুল বিডিও-র
ফ্লোরাইড-ফিল্টার এখন বসার মোড়া, টবও
কেউ বসার ‘মোড়া’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন, কেউ বা তাতে গাছ লাগিয়েছেন। আবার অনেকে অযত্নে ফেলে রেখেছেন উঠোনে। এ ভাবেই ফ্লোরাইড ফিল্টার ব্যবহৃত হচ্ছে খয়রাশোলের ফুল্ল্যাচক এবং জামরান্দ গ্রামে। কয়েকটি পরিবার অবশ্য সেগুলিকে ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাঁদেরও নানান অভিযোগ রয়েছে।
পানীয় জলে ফ্লোরাইড মিশে থাকায় হাড়ের ক্ষয় জনিত রোগে ভুগছিলেন ওই দু’টি গ্রামের বাসিন্দারা। বিশেষত ফুল্ল্যাচক গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু কেন এমন অবস্থা?
জলদূষণের হাত থেকে এলাকার বাসিন্দারা যাতে রক্ষা পান, সেই জন্য দু’টি গ্রামের ১৯০টি পরিবারকে এক জোড়া করে ফ্লোরাইড ফিল্টার দেওয়া হয়েছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর থেকে। সময়টা ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। কথা ছিল ২ বছর যাবৎ ওই ফিল্টারগুলি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট দফতর। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তার পর দীর্ঘ সময় কেটেছে। বাসিন্দারা সেই ফিল্টার ব্যবহার করছেন কি না সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখেনি প্রশাসন। কিন্তু চিত্রটা যে এতটা খারাপ, সেটা হয়তো জানাও যেত না, যদি না কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ওই গ্রাম দু’টি ঘুরে বাস্তব অবস্থার কথা ব্লক প্রশাসন এবং জেলা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের নজরে আনত।

ফিল্টারেই বাড়ছে গাছ। খয়রাশোলে তোলা —নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রতিনিধি দল সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে ১৯০টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ২৬টি পরিবার ওই ফিল্টার ব্যবহার করেন। যা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার কারণ। পানীয় জলে দূষণের কারণে ইতিমধ্যেই ওই এলাকার বেশ কিছু মানুষ তাঁদের কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। এর পরেও যদি পরিস্রুত পনীয় জলের ব্যবহার না করেন তা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
এর পরেই টনক নড়ে প্রশাসনের। খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “আমি এই ব্লকে দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগেই ওই ফিল্টারগুলি দেওয়া হয়েছিল। তাই বিষয়টি নজরে ছিল না আমি ওখানে গিয়ে বাসিন্দাদের বোঝাব।”
তবে কেন ওই ফিল্টার ব্যবহার করছেন না এলাকার মানুষ? বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূলত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঠিক মতো পালিত হয়নি বলেই আনেকে ওই ফিল্টার ব্যবহার করছেন না। জামরান্দ গ্রামের মিতা পাল, সুদীপ ঘোষদের অভিযোগ, “ঠিকমতো জল পড়ত না, জলে একটা গন্ধ ছিল তাই আর ব্যবহার করি না।” আবার যাঁরা ওই ফিল্টার ব্যবহার করছেন তাঁদের মধ্যে জামরান্দের চায়না বাগদি বা ফুল্ল্যাচক গ্রামের শীতল কুনুইদের অভিযোগ, “ফিল্টার ভেঙে আকেজো হয়ে পড়ায় ইচ্ছে থাকলেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যাঁরা সারাতে আসেন তাঁরা না এলে কী করব।” ব্যতিক্রমও আছে। জলদূষণে আক্রান্ত ফুল্ল্যাচক গ্রামের সেন্টু পাল বা সরস্বতী মণ্ডলরা বলেন, “যত্নে ব্যবহার করছি। ঠিকই আছে।” তবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যপারে সন্তুষ্ট নন তাঁরাও। বললেন, “কখন ওই ফিল্টার দেখভালের লোকেরা আসেন সেটা জানা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।” জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র অর্ধেন্দু দত্ত বলেন, “যে দিন ফিল্টারগুলি দেওয়া হয়েছিল সেদিনই আমরা বাসিন্দাদের হাতে কলমে ওই ফিল্টার কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখিয়ে এসেছিলাম। একটি যোগাযোগের নম্বর দিয়ে বলা হয়েছিল দু’ বছরের মধ্যে কোনও অসুবিধা হলে ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে ফিল্টারগুলি সারিয়ে দেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, “কিন্তু প্রায় দু’ বছরে খুব কম আভিযোগই এসেছে। ফলে মানুষের সমস্যা হচ্ছে এটা জানা ছিল না।”
এলাকায় ঘুরে জানা গিয়েছে, বেশি পরিবারের বাস জামরান্দ গ্রামে। ফুল্ল্যাচক গ্রামে মাত্র ২২টি পরিবার বাস করলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সেখানে। প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ জল দূষণের স্বীকার। ফলে এই গ্রামে আধিকংশ বাসিন্দাই ফ্লোরাইড ফিল্টার ব্যবহার করছেন। জামরান্দ গ্রাম ফ্লোরাইড প্রভাবিত হলেও সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম। কারণ বেশির ভাগ গ্রামবাসী বেশ খানিকটা দূরের হিংলো নদীর জল পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করেন। ফলে ফ্লোরাইড ফিল্টার নিয়ে সচেতনতাও কম এই গ্রামে। তবে প্রশাসনও এই বিষয়ে গ্রামের মানুষকে খুব একটা সচেতন করেছে এমনটাও নয়।
খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কোথাও ঘাটতি হয়েছে বলেই এই হাল।” অর্ধেন্দুবাবুর আশ্বাস, “ওই গ্রামগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি জল প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। বছর দু’য়েকের মধ্যে এই সঙ্কট মিটে যাবে। তত দিন ওই ফিল্টারগুলি বিনামূল্যে রক্ষণাবেক্ষণ করে দেওয়া যাবে। কারণ, ওই খাতে টাকা এখনও মজুত আছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.