|
|
|
|
ফের অভিযুক্ত তৃণমূল |
বিক্ষোভে জেরবার দুর্গাপুরের হাসপাতাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর ও কলকাতা |
তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানার-পতাকা নিয়ে বিক্ষোভে জেরবার হল দুর্গাপুরের এক বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। জয় বালাজির ইস্পাত কারখানায় বিক্ষোভের নামে আধিকারিকদের হেনস্থার ঘটনার সপ্তাহ পেরোনোর আগেই ফের এমন ঘটনা রাজ্যের অন্যতম প্রধান এই শিল্পশহরে। টানা তিন ঘণ্টা বিক্ষোভে আতঙ্ক ছড়াল দ্য মিশন হাসপাতালে। হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসুর প্রশ্ন, “এ ভাবে হাসপাতাল চালানো যায়?” তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা এই বিক্ষোভের নিন্দা করেছেন। আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ, হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না।”
গণ্ডগোলের নেতৃত্বে ছিলেন অসীম প্রামাণিক, যিনি গত শনিবার জয় বালাজি কারখানায় বিক্ষোভের নামে আধিকারিক-হেনস্থায় মূল অভিযুক্ত। তাঁর দলবলের দাবি, স্থানীয় বেকারদের চাকরি চাই। কর্মীদের বোনাস বাড়ানো, ওভারটাইম, বাড়তি ছুটি, ২০% শয্যা গরিবদের জন্য সংরক্ষণ ও বিপিএল-দের চিকিৎসায় ছাড় দেওয়ার দাবিতে তিন ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলে।
জয় বালাজির কারখানায় হেনস্থার ঘটনায় আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব যে ভাবে দায় ঝেড়ে ফেলেছিলেন, এ ক্ষেত্রেও তেমনই করেছেন। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় গোড়া থেকেই ওই নতুন সংগঠনটিকে অস্বীকার করেছেন। বিক্ষোভকারীরা ব্যানারে তাঁর ছবি ব্যবহার করেছেন শুনে মন্ত্রী তথা আইএনটিটিইউসি নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিস্মিত। তিনি বলেন, “ওই হাসপাতালে আমার কোনও সংগঠন নেই।” |
হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ আইএনটিটিইউসি-র। শুক্রবার দুর্গাপুরে।—নিজস্ব চিত্র |
কোনও হাসপাতালেই তাঁদের সংগঠন নেই জানিয়ে দোলা সেন বলেন, “এ দিন দুর্গাপুরে যারা বিক্ষোভ করেছিল, তারা বহিরাগত। হাসপাতালের কোনও কর্মী ছিলেন না। ওখানে কর্মী-কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ নেই।” তবে দুর্গাপুরের মেয়র তথা বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কিছু ত্রুটি রয়েছে। তাই কিছু সমস্যা হয়েছে।”
স্থানীয় সিটু নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “ওই সংগঠন তাদের লোক নেওয়ার যে দাবি তুলছে, তা ভিত্তিহীন। দক্ষতা ও যোগ্যতাকে গুরুত্ব না দিয়ে লোক নিয়োগ করা হলে হাসপাতালের মান খারাপ হবে।”
হাসপাতালে নানা পদে কর্মী নিয়োগের দায়িত্বে রয়েছে একটি ঠিকা সংস্থা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুলাই প্রভাতবাবুর উপস্থিতিতে ঠিকা সংস্থার সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বেতন ও বোনাস সংক্রান্ত একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। কর্মীরাও তা মেনে নেন। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই সমস্যা শুরু হয়। আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘দুর্গাপুর মহকুমা সিকিওরিটি ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়ন’-এর তরফে পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের সভাপতি নিখিল মুখোপাধ্যায় হাসপাতালকে চিঠি দিয়ে দাবি করেন, এই চুক্তি বেআইনি। নতুন চুক্তি করতে হবে। অভিযোগ, এর পরে মাঝেমধ্যেই ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়।
শুক্রবার বিক্ষোভে অসুবিধায় পড়েন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। শহরের এ-জোনের বাসিন্দা শেখ জসিম বলেন, “বিক্ষোভের ঠেলায় অসুস্থ বাবাকে রাস্তাতেই গাড়ি থেকে নামিয়ে ভিতরে আনতে হল।” রোগীর আত্মীয় স্নিগ্ধা রায়ের কথায়, “ভয় হচ্ছিল, ওরা ভিতরে না ঢুকে পড়ে!”
কলকাতার বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তারাও উদ্বিগ্ন। সিএমআরআই-এর রূপক বড়ুয়ার কথায়, “আমরা জীবন নিয়ে কাজ করি। আমাদের এই ধরনের অশান্তির আওতা থেকে বাইরে রাখা উচিত। এ রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় দক্ষ কর্মীর অত্যন্ত অভাব। এমন ঘটনায় ভাল কর্মী তৈরির সমস্যা বাড়ে।” আর এন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস-এর কুণাল সরকার বলেন, “এমন ভয়ের বাতাবরণে কাজ করা কঠিন। যে কোনও সভ্য সমাজে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি আইন মেনে হয়। তা রাজনৈতিক কৌশলের উপরে রাখতে হয়।”
হাসপাতাল তার আর্থিক অবস্থা অনুসারে কর্মীদের কত দিতে পারবে, সেই আলোচনা যদি যুক্তিভিত্তিক না হয়ে রাজনীতি ভিত্তিক হয় তবে বোঝাপড়ার পদ্ধতিতে গণ্ডগোল চলতেই থাকবে। আর কেউ না কেউ তার ফায়দা তুলবে। “ফলে সফল শিল্প শ্মশানে পরিণত হবে,” বলেন কুণালবাবু। পরপর এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন দুর্গাপুরও। এলাকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, “এ রকম চলতে থাকলে তো সবাই ব্যবসা গুটিয়ে দুর্গাপুর ছেড়ে যেতে চাইবে।” |
|
|
|
|
|