|
|
|
|
|
|
ব্যাগ গুছিয়ে...
|
ডাকছে নদী ডাকছে পাহাড়...
কাঁচা রাস্তা এঁকেবেঁকে গিয়েছে জঙ্গলের গভীরে।
পথেই পড়বে তিনটি পাহাড়ি নদী। লিখছেন দেবাশিস দাশ |
|
রাজা বলল, “মনে হচ্ছে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।”
সুদীপ বলল, “হতে পারে হাতি তাড়াতে।”
নিতাইয়ের প্রশ্ন, “কিন্তু ওই অত উঁচু পাহাড়ের ওপর জঙ্গলে আগুন দেবে কে?”
বাংলোর বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে অপলক সেই আগুনের দিকে চেয়ে থাকা সাত জনকে চা দিতে এসে আগুনের রহস্য ভেদ করলেন শিবু কালিকোটে। আমাদের বনবাংলোর পাচিকা কাম কেয়ারটেকার।
বললেন, “আসলে শুকনো বাঁশের মধ্যে ঘষাঘষি হওয়ায় আগুন লেগে এই কাণ্ড। আগুনে বাঁশের গাঁট ফাটায় অমন বাজি ফাটার মতো শব্দ হচ্ছে।”
এতক্ষণে বুঝলাম, শিবু কী বোঝাতে চাইছেন। আমরা রায়মাটাং-এর বনবাংলোর গোল বারান্দায় বসে এতক্ষণ যা দেখছিলাম তা আসলে দাবানল। রাত যত গভীর হয়েছে সেই দাবানল কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে আমাদের বুকে। মনে হয়েছে, আগুন ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে গভীর রাতে আমাদের বাংলোয় এসে পড়বে না তো? যদিও তা হওয়ার নয়। কারণ যে-পাহাড়ে আগুন লেগেছে তার নীচ দিয়ে ক্ষীণকটি তরুণীর মত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বয়ে চলেছে জয়ন্তী নদী। সেই রুখে দেবে।
দোল পূর্ণিমার রাত পূর্ব ডুয়ার্সের জঙ্গলে কাটাবো বলে আগের দিন হাওড়া স্টেশন থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেসে ভোরবেলা নেমেছিলাম নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে শামুকতলা হয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রথমে পৌঁছেছিলাম ৪৫ কিলোমিটার দূরে ভুটান পাহাড়ের কোল ঘেঁষা ছোট্ট গ্রাম হাতিপোতায়। |
|
শামুকতলা পেরোতেই চোখ টেনেছিল চা বাগানের সবুজ গালিচা আর দূরে নীলাভ পাহাড়ের সারি। এর পরে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলার মতো সরু রাস্তা এঁকেবেঁকে এসে থেমেছিল একটি লোহার গেটের সামনে। গেটের ও পারেই ছবির মতো একটা বাংলো। বাংলোটি সেবিয়ার ফরেস্ট ইনস্পেকশন বাংলো নামে পরিচিত। কংক্রিটের পিলারের ওপর তৈরি বাংলোটির চারিদিকে কাঁটাতারের বেড়া। রাজ্য বনদফতরের এই বাংলোটি হল হাতিপোতায় একমাত্র থাকার জায়গা। বাংলোর পিছনে রয়েছে চা বাগান। বাঁদিকে জঙ্গল। দূরে নীল আকাশের বুকে সবুজ পাহাড়ের সারি।
সবুজের চাদর-মোড়া হাতিপোতায় পৌঁছলেই সময় যেন হারিয়ে যায়। বিশেষ করে বাংলোর বারান্দায় বসে যখন শুনতে পাবেন শুধু বাতাসের শব্দ আর দূর থেকে ভেসে আসা নানা পাখির ডাক, তখন ইচ্ছে হবে প্রকৃতির সঙ্গে আরও নিবিড় হতে। বেরিয়ে পড়তে চাইবে মন। আগে থেকে গাড়ি বলে রাখলে চালকই আপনাকে নিয়ে যাবেন ভুটান পাহাড়ে। জঙ্গলের পথে মিলবে হরিণ, অজস্র ময়ূর এমনকী বুনো শুয়োরও। এর পরে সীমান্ত প্রহরীদের অনুমতি পেলে যেতে পারবেন পাহাড়ের নীচে কুলকুল করে বয়ে চলা জয়ন্তী নদীর কাছে। সন্ধ্যা নামার আগেই চালক আপনাকে ফিরিয়ে দেবেন বাংলোয়। কারণ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনের পাহাড়টার পিছন থেকে উঠে আসবে গোল থালার মত একটা রুপোলি প্লেট। যার মায়াবী আলো ভাসিয়ে দেবে জঙ্গল, চা-বাগান এবং আপনাকে। বাংলোর কেয়ারটেকারকে বলে জ্যোৎস্নামাখা রাতে ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন করলেও মন্দ হয় না। কারণ দোলের সময় হাতিপোতায় ভালই ঠান্ডা থাকে। কিন্তু সাবধান! বাংলোর কাঁটাতার-ঘেরা এলাকার বাইরে বেরোনো যাবে না। কারণ রাত বাড়লেই বাংলোর চারপাশে প্রায়ই চিতাবাঘ ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এরা আসে মূলত গৃহস্থের বাড়ির গরু, বাছুরের লোভে।
|
|
জ্যোৎস্না-রাত কাটিয়ে এ বার হাতিপোতা থেকে চলুন রায়মাটাং। আলিপুরদুয়ারের আর একটি পর্যটন কেন্দ্র। দূরত্ব হাতিপোতা থেকে ৫০ কিলোমিটার। গাড়ি আগে থেকে বলে রাখাই ভাল। শামুকতলা থেকে ৩১-এ জাতীয় সড়ক ধরে মহাকাল চৌপাথির মোড় হয়ে নিমতি পৌঁছানোর আগেই কালচিনি থেকে রায়মাটাং-এ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় রেশন কিনে নিতে হবে। কারণ রায়মাটাং-এ কোনও বাজার নেই। সপ্তাহে এক দিন মাত্র হাট বসে। তবে দু’একটি ছোট মুদিখানা রয়েছে।
কালচিনির দু’পাশের চা-বাগানের গালিচা ছেড়ে গাড়ি যখন জঙ্গলের পথ ধরবে তখন দেখবেন অদ্ভুত ভাবে দৃশ্যপটও পাল্টে যাচ্ছে। দূরে নীলাভ ভুটান পাহাড়। কাঁচা রাস্তা এঁকেবেঁকে গিয়েছে জঙ্গলের গভীরে। পথেই পড়বে তিনটি পাহাড়ি নদী। যে নদীগুলি গ্রীষ্মে শুকিয়ে যায়। বর্ষায় হয়ে ওঠে তীব্র খরস্রোতা। শেষ নদীটা নেমেছে ভুটানের পাহাড় থেকে। নুড়ি, পাথরে ভরা শুকনো ওই নদীটার ওপারেই রায়মাটাং। পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা অদ্ভুত শান্ত, স্নিগ্ধ একটা পাহাড়ি গ্রাম।
গ্রামের পথ পেরিয়ে পাহাড়ের শেষ প্রান্তে রয়েছে বক্সা টাইগার রিজার্ভ (পূর্ব)-এর বনবাংলো। বাংলোর চার পাশে ঘন জঙ্গল। যখনতখন হাতি চলে আসে এই বাংলোর চার পাশে। বাংলোর উল্টো দিকে রয়েছে আর একটা পাহাড়। ওই পাহাড়ের ও পারেই ভুটান। রায়মাটাং-এ এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। তাই সন্ধ্যা নামলেই চার পাশ একদম নিশুতি হয়ে যায়। এর ওপর যখন ভরা পূর্ণিমার চাঁদ উঠে শাল, পিয়ালের পাতায় পড়ে পিছলে যায়, তখন মনে হয় আরও কয়েকটা দিন শহরের ধুলো, ধোঁয়া এড়িয়ে কাটিয়ে গেলে মন্দ কী?
ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন করলেও মন্দ হয় না। কারণ দোলের সময় হাতিপোতায় ভালই ঠান্ডা থাকে। কিন্তু সাবধান! বাংলোর কাঁটাতার-ঘেরা এলাকার বাইরে বেরোনো যাবে না। কারণ রাত বাড়লেই বাংলোর চারপাশে প্রায়ই চিতাবাঘ ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এরা আসে মূলত গৃহস্থের বাড়ির গরু, বাছুরের লোভে।
|
|
জ্যোৎস্না-রাত কাটিয়ে এ বার হাতিপোতা থেকে চলুন রায়মাটাং। আলিপুরদুয়ারের আর একটি পর্যটন কেন্দ্র। দূরত্ব হাতিপোতা থেকে ৫০ কিলোমিটার। গাড়ি আগে থেকে বলে রাখাই ভাল। শামুকতলা থেকে ৩১-এ জাতীয় সড়ক ধরে মহাকাল চৌপাথির মোড় হয়ে নিমতি পৌঁছানোর আগেই কালচিনি থেকে রায়মাটাং-এ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় রেশন কিনে নিতে হবে। কারণ রায়মাটাং-এ কোনও বাজার নেই। সপ্তাহে এক দিন মাত্র হাট বসে। তবে দু’একটি ছোট মুদিখানা রয়েছে।
কালচিনির দু’পাশের চা-বাগানের গালিচা ছেড়ে গাড়ি যখন জঙ্গলের পথ ধরবে তখন দেখবেন অদ্ভুত ভাবে দৃশ্যপটও পাল্টে যাচ্ছে। দূরে নীলাভ ভুটান পাহাড়। কাঁচা রাস্তা এঁকেবেঁকে গিয়েছে জঙ্গলের গভীরে। পথেই পড়বে তিনটি পাহাড়ি নদী। যে নদীগুলি গ্রীষ্মে শুকিয়ে যায়। বর্ষায় হয়ে ওঠে তীব্র খরস্রোতা। শেষ নদীটা নেমেছে ভুটানের পাহাড় থেকে। নুড়ি, পাথরে ভরা শুকনো ওই নদীটার ওপারেই রায়মাটাং। পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা অদ্ভুত শান্ত, স্নিগ্ধ একটা পাহাড়ি গ্রাম।
গ্রামের পথ পেরিয়ে পাহাড়ের শেষ প্রান্তে রয়েছে বক্সা টাইগার রিজার্ভ (পূর্ব)-এর বনবাংলো। বাংলোর চার পাশে ঘন জঙ্গল। যখনতখন হাতি চলে আসে এই বাংলোর চার পাশে। বাংলোর উল্টো দিকে রয়েছে আর একটা পাহাড়। ওই পাহাড়ের ও পারেই ভুটান। রায়মাটাং-এ এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। তাই সন্ধ্যা নামলেই চার পাশ একদম নিশুতি হয়ে যায়। এর ওপর যখন ভরা পূর্ণিমার চাঁদ উঠে শাল, পিয়ালের পাতায় পড়ে পিছলে যায়, তখন মনে হয় আরও কয়েকটা দিন শহরের ধুলো, ধোঁয়া এড়িয়ে কাটিয়ে গেলে মন্দ কী?
|
কী ভাবে যাবেন |
ট্রেনে আলিপুরদুয়ার। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে হাতিপোতা।
এর পরে হাতিপোতা থেকে গাড়ি নিয়ে রায়মাটাং। |
কোথায় থাকবেন |
বক্সা টাইগার রিজার্ভ (পূর্ব)-এর বনবাংলো ছাড়াও থাকার জন্য রয়েছে
কয়েকটি হোম স্টে ও দু’টি বেসরকারি হোটেল। |
|
|
|
|
|
|
|