সামনে কুয়াশায় ঢেকে থাকা পাহাড়ের সারি। টুপটাপ হিম ঝড়ছে মাথায়। কয়েক হাত দূরের রাস্তাও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ওরা যেন সবই দেখছে। বুঝতে পারছে কুয়াশার চাদরে মুখ ঢেকে থাকা পাহাড়ের রূপ লাবন্য সবই। হয়ত তাই খুশিতে হাততালি দিয়ে লাফালাফি করছিল নিত্যানন্দ বিশ্বাস, শিবু বর্মনরা। কে বলবে ওরা দৃষ্টিহীন! হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) প্রকৃতি পাঠ শিবিরে ওই ছেলেমেয়েদের দেখে কেউ বলবে না ওরা প্রতিবন্ধী। যে ভাবে পাহাড় বেয়ে প্রকৃতিকে জানার চেষ্টায় মগ্ন ওই শিশু কিশোররা তা দেখে শুধু অবাক হতে হয়। তারিফ জানানো ভাষা খুঁজে পায় না কেউ। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের ওই প্রকৃতি পাঠের আসর চলছে গরুবাথান ব্লকের সাকাম পাহাড়ে। দৃষ্টিহীন ছাড়াও সেখানে মূক ও বধির সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা জর্জরিত ৮০ জন শিশু কিশোর রয়েছে। ওদের কেউ স্পর্শ করে, শব্দ শুনে ও গন্ধে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করছে অচেনা পরিবেশ। আবার কেউ ম্লান চোখে আশপাশের দৃশ্য দেখে খিলখিল করে হাসছে। অস্ফুট শব্দে কিছু বলার চেষ্টা করছে। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু ছেলেমেয়েদের সাহায্য করছেন প্রকৃতি পাঠে। |
তিনি বলেন, “আমরা ঘরে বসে ডাক শুনে বুঝতে পারি বাইরে কাক ডাকছে। একই ভাবে শব্দ শুনে বুঝতে পারি বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য বাইরে বার হয়ে দেখার প্রয়োজন হয় না। না দেখেও প্রকৃতিকে কেমন করে জানা যায় সেটাই শিবিরে দৃষ্টিহীন শিশু কিশোরদের শেখানো হচ্ছে।” এই নিয়ে দ্বিতীয়বার প্রকৃতিপাঠ শিবিরে যোগ দিয়েছে শিলিগুড়ির জলেশ্বরীর দৃষ্টিহীন কিশোর নিত্যানন্দ বিশ্বাস। কেমন লাগছে জানতে চাইলে সে বলে “খুব সুন্দর জায়গায় এসেছি এটা বুঝতে পারছি। দারুন লাগছে।” নিত্যানন্দের মতো শিবুরা বাড়িতে ফিরে অভিজ্ঞতার কথা বলে সবাইকে চমকে দিতে পারবে বলে মনে করছেন শিবিরের আয়োজকরা। কেন চমকে দেবে না! সামনে কী জানতে চাইলে দৃষ্টিহীন শিশু কিশোররা পটাপট বলে দিচ্ছে বিরাট পাহাড়। ওই পাহাড়টা যে সাদা কুয়াশায় ঢেকে আছে সেটাও ওরা শিবিরে থেকে জেনেছে। কল্পনায় প্রত্যেকে নিজের মতো মনের ক্যানভাসে ছবিও এঁকেছে। তাই খুশিতে ভাসতে ভুলছে না কেউ। শুধু কী পাহাড়! পাখির কুজন, গাছগাছালি, পাহাড়ি পথঘাট সবই একটু একটু করে জেনে নিচ্ছে। হয়ত তাই শিবুর মতো ছেলেরা অকপটে বলছেও, “শিবিরে আসার আগে শব্দ শুনে বা স্পর্শ না-করে জিনিসটা কী বুঝতে পারতাম না। এখানে এসে সে বাধা দূর হয়েছে। অনেক কিছু বসে থেকে বুঝতে পারছি।” |