সম্পাদকীয় ২...
ধ্বংসের কিছু বাকি
জ ২২ ডিসেম্বর। গতকাল পৃথিবী ধ্বংস হয় নাই। অবশ্য, মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডার ফুরাইলেও এই নীল গ্রহ বাঁচিয়া থাকিবে, এই কথাটি জানাই ছিল। তবু, অনেকেই হয়তো সঙ্গোপনে একটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়াছেন। এক নিশ্বাসেই একটি প্রশ্নও উঠিয়া আসিয়াছে। ধ্বংস কাহাকে বলে? নিজের কক্ষপথে আর না ঘোরাই কি ধ্বংসের প্রমাণ? তুষারযুগের ন্যায় বরফে ঢাকা পড়িয়া প্রাণের অস্তিত্ব লোপ পাওয়া বা কোনও প্রলয়ঙ্কর ভূমিকম্পে সব চুরমার হইয়া যাওয়াই কি ধ্বংস? সেই মাপকাঠিতে সত্যই পৃথিবী ধ্বংস হয় নাই। বিজ্ঞানে ভরসা করিলে বলিতে হয়, অদূর ভবিষ্যতে তেমন ধ্বংসের সম্ভাবনাও অকিঞ্চিৎকর। কিন্তু মানবসভ্যতা কি পৃথিবীর ন্যায় এমন দীর্ঘস্থায়ী? সভ্যতার যে ধারণা দীর্ঘ সময় ধরিয়া তিলে তিলে গড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার গায়ে বড় মাপের আঘাত পড়িতেছে। বারংবার। সভ্যতার ভরকেন্দ্রে কিছু বিশ্বাস থাকে। বস্তুত, সেই বিশ্বাসগুলিকে কেন্দ্র করিয়াই সভ্যতা আবর্তিত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে যখন প্রযুক্তি এই বিপুলা পৃথিবীকে একটি ‘বিশ্বগ্রামে’ পরিণত করিতেছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সভ্যতার কেন্দ্রের সেই বিশ্বাসগুলি আহত হইতেছে। এমন ভাবে, যাহাতে আশঙ্কা হয়, সভ্যতাকে মানুষ যে রূপে চিনিয়াছে, তাহা বুঝি অতীত হইয়া গেল। ইহাও তো ধ্বংসই।
পৃথিবীর এক প্রান্তে এক উন্মত্ত শাসক নাকি নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের পরিকল্পনা করিতেছেন। সেই অস্ত্র প্রযুক্ত হউক অথবা না-ই হউক, ক্ষমতা আঁকড়াইয়া থাকিতে মানুষ কত দূর যাইতে পারে, তাহার বহু উদাহরণ সেই দেশেই আছে, তাহার পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতেও আছে। যে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র এই দেশটিকে শাসন করিতে উদগ্রীব, তাহার রাষ্ট্রপ্রধান আবার পরিবেশের প্রশ্নে নিতান্ত উদাসীন। ক্ষয়ক্ষতির অন্তিম বিচারে বিশ্ব উষ্ণায়ন যে কোনও রাসায়নিক অস্ত্রের তুলনায় ঢের বেশি ক্ষতিকর। সভ্যতা দাবি করে, যে দেশটি ক্ষমতায়, বৈভবে বিশ্বে প্রথম, সেই দেশটিই স্বপ্রবৃত্ত হইয়া উষ্ণায়ন প্রতিরোধে উদ্যোগী হইবে। হায়! কোন চালে পরিবেশের প্রশ্নকে পিছনে ঠেলিয়া দেওয়া যায়, তাহাই মূল বিবেচ্য হইয়াছে। দরিদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলি যদি সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিতও হয়, তাহাতেও কি বিশ্বমঞ্চের নায়কের জীবনযাত্রায় আঁচড়টি ফেলা যায়? সভ্যতা যাহা প্রত্যাশা করে, বাস্তব তাহার বহু দূর।
ভারতেও উদাহরণের ঘাটতি নাই। দিল্লির গণধর্ষণ লইয়া আজ গোটা দেশ উত্তাল। কিন্তু নারীর বিরুদ্ধে এই জাতীয় বর্বরতার পশ্চাতে যে গভীর সামাজিক ব্যাধি রহিয়াছে, তাহাই তো সভ্যতার সংজ্ঞার বিপ্রতীপ। পরিবার যে ভাবে মেয়েদের দেখে, সমাজ যে চোখে দেখে অথবা চলচ্চিত্রের পর্দায় যে ভাবে নারীর প্রতিফলন ঘটে কোনওটিই কি সভ্যতার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ? আর এই অ-সভ্যতায় অভ্যস্ত হইয়া যাওয়া, ইহাকেই স্বাভাবিক জ্ঞান করা ইহা সর্বাধিক বিপজ্জনক। পৃথিবী দীর্ঘজীবী হইবে। কিন্তু এই বাস্তব পৃথিবীকে ছাড়িবে না। এমন পরিস্থিতি ধ্বংস অপেক্ষা কতখানি ভাল?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.