বেড়াতে যাওয়া নিয়ে ছবি দেখার নেশাটা বাঙালির মজ্জাগত।
‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ থেকে ‘ছুটির ফাঁদে’, হালের ‘ছ-এ ছুটি’ থেকে ‘বাই বাই ব্যাঙ্কক’সব ছবিতেই ভ্রমণপিপাসুরাই চরিত্র হয়ে উঠেছে। কখনও দুর্গম তীথর্র্ ভ্রমণ, কখনও হালকা ফুরফুরে লং উইক এন্ড ছবির পর্দায় এসে মাত করে দিয়েছে বাঙালি দর্শকদের। ভ্রমণের সঙ্গে এসেছে হাসির খোরাক। হয়েছে পর্যটকদের চাওয়া-পাওয়া ভরা মনের নিভৃত কোণের উন্মোচন।
হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখ মিলিয়ে, বেড়াতে যাওয়া নিয়ে ছবির তালিকায় যোগ হল এ বার কুণাল ঘোষ প্রযোজিত ‘বালুকাবেলা ডট কম’। |
পুরী আর গোপালপুরের মাঝামাঝি চোখজুড়ানো নীল জলের সমুদ্র সৈকত বেছে নিয়ে পরিচালক পার্থ সেন তাঁর ছবির গল্প সাজিয়েছেন। প্রচেত গুপ্তের গল্প নিয়ে তৈরি ‘বালুকাবেলা ডট কম’-এর সব চেয়ে বড় পাওনা প্রেমেন্দু বিকাশ চাকির ক্যামেরায় সমুদ্রের উচ্ছল ঢেউ, তার পাশে ভাঙাচোরা বাড়ি, সমুদ্রবেলায় চিকচিকে বালির মাঝে টলটলে জলে ভরা ছোট দিঘি। আর আছে দমফাটা হাসির কিছু কিছু মুহূর্ত। বাকি গল্পের সবই বেশ এলোমেলো। ‘বালুকাবেলা’ সেই সমুদ্র সৈকতের একটি হোটেলের নাম। এবং এই হোটেলের মালিক পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অকৃতদার হলেও তাঁর মনের গোপন ইচ্ছে হল এক জন জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পাওয়া। সেই হোটেলেই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ওঠেন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সুদীপা বসু। সুদীপা আর পরাণ-এর রসালো অভিনয়ে জমে যায় ছবির বেশ খানিকটা সময়। অন্য দিকে বালুকাবেলা হোটেলে এসে হাজির হন চার যুবক যাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাহুল আর রুদ্রনীলের মতো জোরালো অভিনেতা। ফলবিস্তর মজা আর হইহুল্লোড়ের সিকোয়েন্স ওই চার যুবক আর কলেজের মেয়েদের নিয়ে। ঠিক যেমন মজা হয় গার্লস হোস্টেল আর বয়েজ হোস্টেল পাশাপাশি থাকলে।
তবে এই সব সিকোয়েন্সে মাঝে মাঝে জোর করে হাসাবার চেষ্টা বড্ড কষ্টকল্পিত মনে হয়। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আর লকেট চট্টোপাধ্যায় ‘হনিমুন’ দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁদের জায়গাটা আরেকটু বাড়ানো যেত।
নায়ক রাহুলের বিপরীতে নায়িকা পায়েলের অভিনয় আড়ষ্ট লাগে। বিপরীতে যখন রাহুল বা রুদ্রনীলের মতো দক্ষ অভিনেতা আছেন কলেজের মেয়েদের নির্বাচনে পরিচালক আর একটু ভাবনাচিন্তা করলে পারতেন।
যথারীতি এ ছবিতেও উকিলের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় কমেডি তৈরির কাজে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর কব্জিগত মুন্সিয়ানা। ব্রাত্য বসুও স্বল্প পরিসরে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর নিঃসঙ্গ মনের বেদনা।
মোদ্দা কথা, বড় অভিনেতাদের অভিনয়ই এ ছবির সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা।
চিত্রনাট্য ঠাসবুনোট না থাকলে যেটা হয়, দাপুটে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ের মুহূর্তগুলোই দর্শককে ধরে রাখার একমাত্র চুম্বকটান হয়।
এ ছবিতেও তাই হয়েছে। |