|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
অনুভব করা যায় প্রাচ্য চেতনার সুন্দর আবহ |
আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল ‘মার্জিং মেটাফর্স’ শীর্ষক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ। |
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস-এর উদ্যোগে কিছু দিন আগে দার্জিলিং-এ এক সপ্তাহ ব্যাপী একটি শিল্পকর্মশিবির অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে আশিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত এশিয়ার দশটি দেশের ২৫ জন শিল্পী আমন্ত্রিত হয়েছিলেন পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিনিময়ের মধ্য দিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য। ভারত ছাড়া অন্য ন’টি দেশ হল ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, তাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। ভারত থেকে ছিলেন আট জন শিল্পী। তাপস সরকার, পম্পা পাঁওয়ার, বিনয় ভার্গিস, গণেশ গোহাইন, প্রদীপ পি পি, সীমা কোহলি, সুজিথ এস এন এবং বিবেক বিলাসিনী। সেই কাজগুলি নিয়ে আইসিসিআর গ্যালারিতে একটি প্রদর্শনী হল ‘মার্জিং মেটাফর্স’। এই কর্মশিবির ও প্রদর্শনীর পরিকল্পনায় সুষমা বাহল ও অর্চনা সাপ্রা।
এই প্রদর্শনী আমাদের বুঝতে সাহায্য করল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই ছোট ছোট দেশগুলির সাম্প্রতিক শিল্প পরিস্থিতি। ভারতের সঙ্গে এ সব দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সুদূর অতীত থেকে। তা থেকে জেগে উঠেছিল শিল্পকলার একটি প্রাচ্য উত্তরাধিকার। তার পর পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক আধিপত্যে পাশ্চাত্য প্রভাব মিশেছে প্রাচ্য সংস্কৃতির সঙ্গে। উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে এই সমন্বয় রূপান্তরিত হয়েছে। |
|
শিল্পী: তাপস সরকার |
তাপস সরকারের ভাস্কর্যটি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কালীঘাটের পটের অনুসরণে তিনি ফাইবার গ্লাস দিয়ে গড়েছেন শাবক মুখে একটি বিড়ালের প্রতিরূপ। মা-বিড়ালের মাথার উপর বসে আছে একটি টিয়া। তাকিয়ে আছে শিশুটির দিকে। পটচিত্রের প্রাচ্য-অনুভবকে কৌতুকদীপ্তিতে যে ভাবে ভাস্কর্যে রূপান্তরিত করেছেন শিল্পী, তাতে আধুনিকতার এক স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় উন্মীলিত হয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শান্তিনিকেতনের শিল্পী পম্পা পাঁওয়ার ‘মিড-সামার ডে ড্রিমিং’ কল্পরূপাত্মক এঁকেছেন। আকাশ, মাটি ও জলের ভিতর জীবনের প্রবাহকে ধরতে চেয়েছেন। ধরা পড়েছে প্রাচ্যচেতনার বিশ্বায়ত উজ্জীবন। বরোদার শিল্পী সুজিথ এস এন-এর ‘সালমস অব সাইলেন্স অব ডার্ক’ শিরোনামে নিসর্গগুলি খুবই সংবেদনময় এবং স্বদেশচেতনাকে আন্তর্জাতিক মাত্রায় অভিষিক্ত করেছে। কেরলের বিবেক বিলাসিনী কাজ করেছেন আলোকচিত্রের মাধ্যমে। ‘নাইট সি ভয়েজ’ রচনাটিতে বুদ্ধের সঙ্গে মিলিয়েছেন ছুটন্ত ঘোড়া, দূরে সাদা মেঘাবৃত নীল আকাশের তলায় যিশুর প্রতিমূর্তি। এ ভাবেই মিলিয়েছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ধ্যানমগ্নতাকে। দিল্লির সীমা কোহলির ‘গোল্ডেন উম্ব’ চিত্রমালাতেও রৈখিক অলঙ্করণ আন্তর্জাতিকতায় অভিষিক্ত হয়েছে। ভিয়েতনামের শিল্পী স্যাক এনগো ভ্যান-এর ‘ডিসট্যান্স’ একটি উড-এনগ্রেভিং খুবই দক্ষ ও দীপ্ত রচনা। মাছেরা ভেসে বেড়াচ্ছে জলের ভিতর। প্রাজ্ঞ এক বৃদ্ধ মানুষের মুখ সমাপতিত হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে। ভিয়েতনামেরই আর একজন শিল্পী দাও হাই ফোং। ‘হোয়ার সেনসেশনস আর ইনট্যাক্ট’। মূর্ত ও বিমূর্ত নিসর্গের সমন্বয়ে রচিত তাঁর ছবিটিতে বাস্তব ও কল্পরূপের অসামান্য সমন্বয়। ইন্দোনেশিয়ার ইভান সাগিতা-র দু’টি অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস ‘ট্রিজ অ্যাজ পিপল’ প্রকৃতির ভিতর জীবনের স্পন্দনকে তুলে ধরেছে। সিঙ্গাপুরের কোয়েক কিয়াট সিং চাইনিজ ইঙ্কে এঁকেছেন বাঁশগাছের নিসর্গ। ব্রুনেই-এর ওসমান মহম্মদ ‘উইন্ডোজ অ্যান্ড স্টোরিবোর্ড’ শিরোনামে এঁকেছেন জ্যামিতিক বিমূর্ত ছবি। ইন্দোনেশিয়ার পুপুক দারু পূর্নোমো-র অভিব্যক্তিবাদী আত্মপ্রতিকৃতিটি পাশ্চাত্য আঙ্গিকেরই অনুশীলন। মালয়েশিয়ার সাম করুণা কাপড়ের উপর বাটিক মাধ্যমে কাজ করেছেন। তাঁর ছন্দিত বর্ণিল বিমূর্ত রূপারোপটির শিরোনাম ‘ডেস্টিনি’। লাওস-এর সেখাম উদোমসুক অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসে এঁকেছেন চাঁপা ফুল। ফুলের আভাসটিকে রেখে তাকে বিমূর্তায়িত করেছেন। খুবই মন্ময় তাঁর রচনা। কম্বোডিয়ার সডে সারেথ-এর মিশ্রমাধ্যমের বিমূর্ত রচনাটির শিরোনাম ‘এ ওয়র্ড ফ্রম ইউনিভার্স’। প্রাচ্যচেতনার আবহ অনুভব করা যায়। মালয়েশিয়ার ডাটো এস কে চু-র ‘টি ফর ওয়ান’ ও ‘টি ফর টু’ শিরোনামের ছবি দু’টিতে জলরঙের ব্যবহার খুব সংবেদনময়। কম্বোডিয়ার এম রিয়েম-এর ছবি ও ভাস্কর্য খুবই দুর্বল রচনা। |
|
|
|
|
|