|
|
|
|
|
বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্দেশ্য নিয়েই তরজা
কুন্তক চট্টোপাধ্যায় |
|
কেউ বলছেন, পেশাদারি গবেষকদের পেশ করার জন্য উপযুক্ত নয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চ। কেউ বলছেন, নোবেলজয়ী বা বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সামনে গবেষণাপত্র পেশ করাটাই রোমাঞ্চের। কারও মতে আবার, বিজ্ঞান কংগ্রেস পেশাদারি বিজ্ঞানচর্চার সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর বিস্তৃত।
আগামী ৩ জানুয়ারি বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষের অধিবেশন শুরুর আগে এ ভাবেই তরজা জুড়লেন শহরের গবেষকেরা। পেশাদার গবেষকদের বেশিরভাগই বিষয়ভিত্তিক আলোচনাচক্রে গবেষণাপত্র পেশের দিকে ঝুঁকেছেন। তাঁদের দেখে অনেক ছাত্রছাত্রীরাও অধিবেশনে যোগ দিতে নারাজ। যদিও অন্য একটি অংশের দাবি, বিজ্ঞান কংগ্রেস এখনও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে কয়েক হাজার গবেষক অধিবেশনে যোগ দিতে আসতেন না।
গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, বিজ্ঞান কংগ্রেসে এত পরিমাণে গবেষণা পত্র থাকে, তাতে পড়ার খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। সে দিক থেকে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার অনেক গুণে ভাল। তা ছাড়া, নিজের বিষয়ের বাইরে বক্তৃতা শোনার বিষয়টিও তাঁদের কাছে আগ্রহ তৈরি করে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক দীপক ঘোষ বলেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেসে গবেষণাপত্র পেশ করার চেয়ে বিষয়ভিত্তিক সেমিনারে যোগ দেওয়াটা প্রতিষ্ঠিত গবেষকদের কাছে প্রাধান্য পায়। সেখানে আলোচনার সুযোগও বেশি থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বিখ্যাত গবেষকদের বক্তৃতাও দুর্লভ নয়।” একই মত পোষণ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্রী মৌটুসি দত্তচৌধুরীও।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যার এমিরেটাস অধ্যাপক প্রতিমা চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, বিজ্ঞান কংগ্রেসের মতো সংগঠনে সদস্যদের অন্তর্কলহ বিখ্যাত গবেষকদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাঁর কথায়, “সংগঠনের পদ পাওয়া নিয়ে একাংশ যে ভাবে রাজনীতি করে, তাতে অনেকেই বিরক্ত।” ষাটের দশক থেকে বিজ্ঞান কংগ্রেসের আজীবন সদস্য প্রতিমাদেবী এ বার বিজ্ঞান কংগ্রেসে যাবেন না বলেই জানিয়েছেন। প্রতিমাদেবীর সঙ্গে অনেকটাই সহমত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির গবেষক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেসে বক্তা নির্বাচনে কিছুটা পক্ষপাতিত্ব কাজ করে। সে কারণে প্রতিষ্ঠিত গবেষক-বিজ্ঞানীরা যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন।” তিনি বা তাঁর অধীনে কাজ করা গবেষকদের কেউই এ বার বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন না।
তবে বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগ দেওয়াটা শহরের নতুন গবেষকদের একাংশের কাছে এখনও রোমাঞ্চকর। এমনই এক জন ন্যানো-টেকনোলজির গবেষক মৈনাক পালিত। তিনি এ বারের অধিবেশনে গবেষণাপত্র পেশ না করলেও গোটা অধিবেশনেই হাজির থাকবেন। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বও পালন করবেন। মৈনাক বলেন, “আমার কয়েক জন সহপাঠী সময় মতো গবেষণাপত্র তৈরি না করতে পারার ফলেই বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন না।”
মৈনাকের মতোই আরও কয়েক জন গবেষক জানিয়েছেন, এ বারের বিজ্ঞান কংগ্রেসে নোবেলজয়ী এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের সামনে গবেষণাপত্র পেশ করাটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার।
অধ্যাপক দীপক ঘোষ অবশ্য বিজ্ঞান কংগ্রেসের অন্য একটি গুরুত্বের কথাও মনে করিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেসে দেশের প্রধানমন্ত্রী-সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। সেখানে ভবিষ্যতের নীতি-নির্ধারণটাও যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। এই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনমানসে বিজ্ঞান চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও হয়।”
বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চ যে পেশাদার গবেষকদের কাছে ততটা গ্রহণযোগ্য নয়, তা মেনে নিয়েছেন বোস ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা ও বিজ্ঞান কংগ্রেসের অন্যতম আঞ্চলিক সম্পাদক শিবাজী রাহা। তিনি বলেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেসের ক্ষেত্র অনেক বেশি বিস্তৃত। পেশাদার গবেষকেরা শুধু নন, ছাত্র ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও এখানে আসতে পারেন।” নতুন গবেষকদের কাছে এই মঞ্চ অনেক বেশি উপযোগী বলেও তাঁর দাবি। |
|
|
|
|
|