|
|
|
|
জমি সমস্যায় দিশা চেয়েই ফের সরব বণিকসভাগুলি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যের প্রস্তাবিত নতুন শিল্পনীতিতে জমি নিয়ে স্পষ্ট দিশা চায় শিল্পমহল। তা না হলে সেই শিল্পনীতি যে অর্থহীন, প্রকারান্তরে সে কথাই বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। কলকাতার বিজয়া সম্মেলন, দিল্লির শিল্প বৈঠকের পরে এ বার রাজ্যের বণিকসভাগুলির সুপারিশেও উঠে এসেছে সে কথা। এবং অনেক স্পষ্ট ভাবে। শুক্রবার বেঙ্গল চেম্বারের সভাতেও একই কথা শুনলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কী উঠে এল সেই সভায়? বণিকসভা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল, জমি সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারি মধ্যস্থতার অভাব, দালালরাজের দৌরাত্ম্য, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনের গেরো এ সবই শিল্পায়নের পথে বাধা। নতুন শিল্পনীতির ক্ষেত্রে এগুলির দিকে নজর রাখা উচিত সরকারের।
শীঘ্রই নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করতে চায় রাজ্য সরকার। সে জন্য তারা শিল্পমহলের মতামত জানতে চাইছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা তথা সাংসদ সৌগত রায়ের কাছে জমা পড়ছে সেই সব সুপারিশ। মার্চেন্টস চেম্বার এর মধ্যেই সুপারিশ জমা দিয়েছে। শুক্রবার সুপারিশপত্র দিল বেঙ্গল চেম্বার।
এবং সেই সুপারিশপত্রে আরও এক বার উঠে এল সেই জমি-সমস্যার প্রসঙ্গই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘোষিত নীতি, শিল্পের জন্য তারা জমি অধিগ্রহণ করবে না। এর ফলে যে সব সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে শিল্পমহলকে, সে কথাই বেরিয়ে আসে সভায় এবং বেঙ্গল চেম্বারের সুপারিশে। বেঙ্গল চেম্বার তো বটেই, মার্চেন্টস চেম্বারের সুপারিশেও একই ছবি। বণিকসভাগুলির স্পষ্ট দাবি, জমি পেতে আরও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনও শিথিল করা হোক। তাদের বক্তব্য, জমি অধিগ্রহণ না করলেও রাজ্য তার দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারে না।
যেমন বেঙ্গল চেম্বারের প্রস্তাব, নতুন নীতিতে এলাকাভিত্তিক জমির ন্যূনতম দাম ঠিক করার কথা বলুক রাজ্য সরকার। একই ভাবে দালালরাজও যাতে মাথাচাড়া না দিতে পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। লগ্নিকারীদের অভিযোগ, নিজেরা জমি কিনতে নেমে তাঁরা দেখেছেন, এক এক জমির মালিক এক এক রকম দাম হাঁকেন। দালালরা তাতে ইন্ধন দেয়। অর্থাৎ, গোটা প্রক্রিয়ার উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণই থাকে না। এ ভাবে প্রকল্পের পুরো জমি জোগাড় করাই অবাস্তব। মার্চেন্টস চেম্বারও তাদের সুপারিশে স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘আমরা মনে করি যে, শিল্পায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ বাধা জমি অধিগ্রহণ এবং সরকারের উচিত এই বিষয়ে সাহায্য করা।’
জমির ঊর্ধ্বসীমা আইনও যে শিল্পায়নের পথে অন্তরায়, সে কথাও বলা হয়েছে বণিকসভাগুলির সুপারিশে। তাদের বক্তব্য, জমি যদি লগ্নিকারীকে কিনে নিতেই হয়, তা হলে কেন তাঁকে ওই আইনের গণ্ডিতে আটকে থাকতে হবে? বাড়তি জমির জন্য সরকারি অনুমতি নিতে কেন দফতরে দফতরে ঘুরতে হবে? এতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তাতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতেও সমস্যায় পড়েন লগ্নিকারীরা। অন্য রাজ্যে যে এই আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ করে দুই বণিকসভাই সুপারিশপত্রে দাবি করেছে, এই রাজ্যেও আইনটি তুলে নেওয়া হোক, বা শিথিল করা হোক। মার্চেন্টস চেম্বার বলছে, যে হেতু রাজ্য শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে নিজেদের পুরোপুরি সরিয়ে রাখছে, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন তুলে দেওয়া তাই জরুরি। একান্তই তা না হলে অন্তত ঊর্ধ্বসীমার ছাড় ১৫০ একর করা হোক (এখন ২৪ একর পর্যন্ত কোনও সংস্থা রাখতে পারে, বেশি হলে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়)।
শিল্পমন্ত্রী অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পরে তিনি বলেন, “সব বণিকসভা-ই সুপারিশ দিচ্ছে। সে সব একত্র করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাব।” জমির একটা ন্যূনতম দাম স্থির করার প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, সরকারি জমির নয়া বণ্টন নীতিতে তা বলা রয়েছে।
জমি পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে শিল্প না করে ফেলে রাখলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছে রাজ্য। কিন্তু শিল্পমহলের দাবি, বড় শিল্পের ক্ষেত্রে জমি ছাড়াও অনেক বিষয় থাকে। যেমন, ব্যাঙ্ক ঋণ, জল সরবরাহ, কয়লা বা খনিজ পদার্থ সরবরাহ, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি। সব অনুমোদন পেতে কখনও পাঁচ বছরেরও বেশি লাগে। তাই বেঙ্গল চেম্বারের আর্জি, নতুন শিল্পনীতিতে বড় শিল্পে (১০০ কোটি টাকার উপরে) ওই সময়সীমা সাত বছর করা হোক।
রাজ্য সরকার শিল্প আসছে বলে দাবি করলেও বিভিন্ন সরকারি নীতির ফলেই যে বাস্তবে তা বাধা পাচ্ছে, সেই আশঙ্কা বরাবরই করে আসছে শিল্পমহল। এই নিয়ে ইনফোসিস-এর প্রসঙ্গও এসেছে। এসইজেড-এ ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে রাজ্য সরকার যে অনড়, তা ইনফোসিস-এর লগ্নির পথে প্রধান অন্তরায়। রাজ্যের বিকাশের স্বার্থে মার্চেন্টস ও বেঙ্গল চেম্বার এসইজেড-এর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে। না হলে অন্তত অন্য ভাবে বাড়তি সুবিধা দিক রাজ্য, মত বেঙ্গল চেম্বারের।
এ দিন বেঙ্গল চেম্বারের কর্তারা আরও যে সব সুপারিশ করেছেন, সে সম্পর্কে অবশ্য শিল্পমন্ত্রীর দাবি, তার অনেকগুলি মুখ্যমন্ত্রী কার্যকর করেছেন। এ ছাড়া কিছু বিষয় কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত বলে সেগুলি দিল্লির কাছে পেশ করতে বণিকসভাটিকে পরামর্শ দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। |
|
|
|
|
|