এক বছর আগে বণিকসভা ফিকি-র বিনোদন সংক্রান্ত মঞ্চেই টালিগঞ্জের ছবিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিনেমা-বান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠে গেল সেই অনুষ্ঠানেই।
শুক্রবার কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে বিনোদন ও বাণিজ্যজগতের গাঁটছড়া বাঁধার অনুষ্ঠানে এ বার ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। তবে বাংলাকে বিশ্বসেরা করার লক্ষ্যে তাঁর ‘ভিশন’ তুলে ধরার ‘দায়িত্ব’ নেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিনোদনও যে একটি প্রধান শিল্প, সে-কথা বলে সওয়াল করেন পার্থবাবু। পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়-সমুদ্র-জঙ্গলের অপরূপ নিসর্গ যে নিছক দ্রষ্টব্য নয়, দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্যও লোভনীয় হয়ে উঠতে পারে একটি উপস্থাপনায় তা জানানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। আর তাতেই বাধল গোল।
যে-রাজ্যের মাথায় হিমালয় আর দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের সৌন্দর্য, সেখানে পর্যটন বা শ্যুটিংয়ের সুষ্ঠু বন্দোবস্ত আছে কি না, বড় হয়ে উঠল সেই প্রশ্ন। সিঙ্গাপুরের একটি প্রোডাকশন হাউসের কর্ত্রী প্রশ্ন তুললেন, দূর বিদেশে বসে কেউ পশ্চিমবঙ্গে শ্যুটিং করতে চাইলে কি অনলাইন ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করে থাকে রাজ্য? বরফ-ঢাকা সান্দাকফু যে দারুণ লোকেশন, তা তো বুঝলাম। কিন্তু সেখানে থাকার কী ব্যবস্থা আছে, তা কি জানা যাবে? সিঙ্গাপুরে শ্যুটিংয়ের খুঁটিনাটি তথ্য থেকে কাজ ও থাকা-খাওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত নেটের মাধ্যমেই সেরে ফেলা যায় বলে দাবি করলেন তিনি। এ রাজ্যের চলচ্চিত্র প্রযোজক বা ভিন্ রাজ্যের প্রোডাকশন সংস্থার কোনও কোনও কর্তাও এ দিন গোয়া বা সিঙ্গাপুরে শ্যুটিংয়ের সুবিধার কথা বলেন। তাঁদের দাবি, গোয়ায় একটি জায়গায় আবেদন করেই (‘সিঙ্গল উইন্ডো’ বা এক জানলা ব্যবস্থা) যাবতীয় ছাড়পত্র মেলার সুবিধে আছে। |
এর ফলে সেখানে অনেক বেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা ছবি করতে যাচ্ছেন। ‘লাইফ অফ পাই’-এর দৌলতে পুদুচেরিও এখন গোটা দুনিয়ায় পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি অনুরাগ বসুর ‘বরফি’তে উত্তরবঙ্গের নিসর্গ ফুটে উঠলেও সামগ্রিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আগ্রহ তত বাড়েনি।
এর পরে নিজেদের পর্যটনের উৎকর্ষ প্রচারে রাজ্যের খামতির কথাই কার্যত মেনে নেন পর্যটনসচিব বিক্রম সেন। পর্যটন বিভাগের ওয়েবসাইট যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্যে ঢেলে সাজা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “ওয়েবসাইটে শ্যুটিংয়ের ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থাও শীঘ্রই চালু হবে। পর্যটন বিভাগই দরকারে পুলিশ-স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ছাড়পত্র দেবে।”
গত বছরের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত দু’টি ফিল্মসিটি প্রকল্প কত দূর এগোল, উঠল সেই প্রশ্নও। শিল্পমন্ত্রীর দাবি, উত্তরপাড়া ও জলপাইগুড়ির ডাবগ্রামে জমি প্রস্তুত। নির্মাণকাজের বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহত্তর চলচ্চিত্র জগৎকে এ রাজ্যে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ছবির প্রসারেও কিছু জরুরি পদক্ষেপ করা হয়েছে এই সম্মেলনে। পয়লা বৈশাখের আগেই দুই বাংলার কিছু ছবি সীমান্ত পেরিয়ে দু’প্রান্তে মুক্তি পাবে বলে জানান সম্মেলনের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ। বাংলাদেশের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে জানুয়ারিতে ঢাকায় এই নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ভারতের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারির।
বিনোদন তথা চলচ্চিত্রের জগতে সীমানার ভেদাভেদ তৈরির চিরকেলে প্রবণতাও এ দিন বারবার ধাক্কা খেয়েছে। চিত্রনাট্য সংক্রান্ত কর্মশালায় এখানকার শিক্ষার্থীদের তালিম দিয়ে উড়ান ধরার তাড়া ছিল চিত্রনাট্যকার আঞ্জুম রাজাবলির। কিন্তু ‘চারুলতা’ মাধবী মুখোপাধ্যায়কে এক ঝলক দেখার জন্য তিনি অপেক্ষা করলেন। মাধবী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৃণাল সেনকে এ দিন কুর্নিশ জানাল ফিকি। সেখানেও সৌমিত্রের পাশে বসে ৫০ বছর আগে ঢাকার ‘বলাকা’ প্রেক্ষাগৃহে ‘অপুর সংসার’ দেখার স্মৃতিতে বিহ্বল বাংলাদেশের মন্ত্রী ইনু। এ-পার বাংলা ও-পার বাংলার ইলিশ, জামদানির কূটনীতি থুড়ি কুটুম্বিতার শরিক তখন চলচ্চিত্রও। |