নিয়োগে অনিয়ম
কাকে কাকে চাকরি, চুপিসারে তালিকা পাঠাল শিল্প দফতর
তুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, কোন কোন প্রার্থীকে চাকরি দিতে হবে, তার তালিকা বিভিন্ন দফতরকে পাঠিয়েছে শিল্প দফতর। সরকারি ভাবে এই তালিকা পাঠানো না-হলেও নগরোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য কারিগরি বা কৃষির মতো বহু দফতর নিজস্ব নোটে জানিয়েছে, শিল্প দফতরের কাছ থেকেই এই তালিকা পাওয়া গিয়েছে। লিখিত পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ, কিছু না-করেই এই সব প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ হচ্ছে এমন অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত মহাকরণের অলিন্দ।
২০১১-এর ১৯ অক্টোবর রাজ্য মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অস্থায়ী ভিত্তিতে তিন হাজার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। নিয়োগ হবে ৬৬০০ টাকা মাসিক বেতনে আপাতত এক বছরের চুক্তিতে। এক বছরে তাঁরা কেমন কাজ করলেন তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রিসভা। কাজের বিচার করার জন্য একটি কমিটি গড়ার কথাও বলা হয়। সরকারি কর্তাদের অনেকের ধারণা, টানা ২৪০ দিন কাজ করিয়ে ওই কর্মীদের চাকরি পাকা করে দেওয়া হবে।

শিল্প দফতরের পাঠানো তালিকার উল্লেখ করে নোট জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের।
এই তিন হাজার কর্মী নিয়োগ চুপিসারে সেরে ফেলতে সরকার গোড়া থেকেই সক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ। অভিযোগকারীরা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে যে কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রে (চুক্তিতে নিয়োগ হলেও) বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় স্বল্প প্রচারিত এক বাংলা দৈনিকে। গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত মাত্র চার লাইনের ওই বিজ্ঞাপনে একটি পোস্ট বক্স নম্বর দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়। সাধারণ প্রথা মেনে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের নামেও এই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এর আগে এমন ভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঘটনা মনে করতে পারছেন না মহাকরণের অভিজ্ঞ কোনও আধিকারিকই।
এই বিজ্ঞাপন প্রকাশের পরে বিভিন্ন দফতরে শিল্পমন্ত্রীর পাঠানো নোটে বলা হয়, “মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনার দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগ করার ব্যবস্থা করতে বলা হচ্ছে।” অভিযোগ, সেই সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে যে প্রার্থীদের নিয়োগ করতে হবে তাদের নামের তালিকা ও জীবনপঞ্জি। শিল্পমন্ত্রীর পাঠানো নোটে অবশ্য তালিকা বা জীবনপঞ্জির কোনও উল্লেখ নেই। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, “মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে নিয়োগের ব্যাপারে দফতরগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই কাজই করছি। কোনও তালিকা পাঠাইনি।” কিন্তু বহু দফতরই নিজস্ব নোটে জানাচ্ছে, শিল্প দফতর থেকেই তারা এই তালিকা পেয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের এক কর্তাও জানাচ্ছেন, বিজ্ঞাপন প্রকাশের কিছু দিন পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নামের তালিকা পাঠান তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় নেতা। সেই তালিকা দেওয়া হয় শিল্পমন্ত্রীকে। তিনি সেই তালিকাই বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এই ভাবে ঘোরতর অনিয়ম করে নিয়োগ করলে ভবিষ্যতে বিপদে পড়তে হতে পারে বলে আতঙ্কিত সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কর্তারা। এক দফতরের সচিবের কথায়, “যে ভাবে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই তালিকা পাঠিয়ে নিয়োগ করতে বলা হয়েছে, তাতে অফিসারদের কারাবাস পর্যন্ত হতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই তাঁরা সরকারি নির্দেশনামায় উল্লেখ করছেন যে, শিল্পমন্ত্রীর পাঠানো তালিকা মেনেই নিয়োগ হচ্ছে।”
যা হয়েছে হওয়া উচিত
• স্বল্প প্রচারিত কাগজে চার লাইনের বিজ্ঞাপন
• তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর বিজ্ঞাপন দেয়নি
• পোস্ট বক্সে জবাব দেওয়ার নির্দেশ
• লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ ছাড়াই নিয়োগ শুরু
• নামের তালিকা পাঠিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী
• বহুল প্রচারিত কাগজে নজরে পড়ার মতো বিজ্ঞাপন
• তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর বিজ্ঞাপন দেবে
• আবেদন পত্র সরকারি দফতরে পাঠানো
• লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ করে প্রার্থী বাছাই
• কোনও রকম সুপারিশ চলবে না
কয়েক জন অফিসার শিল্পমন্ত্রীর পাঠানো তালিকা মেনে নিয়োগ করতে রাজি হননি বলেও সরকারি সূত্রে খবর। মহাকরণে শিল্পমন্ত্রীর ঘরের কাছেই বসা এক অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ওই তালিকা নিতেই রাজি হননি। মহাকরণের বাইরে কমর্রত আর এক অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এমন বেআইনি কাজ করবেন না বলে দফতর থেকে বদলি নিয়ে নিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রীর দফতরের একটি অধীনস্থ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরও এ ভাবে নিয়োগে রাজি হননি। তাঁকে স্বরাষ্ট্র দফতরে বদলি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সমস্যা আর এক জায়গাতেও। মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিয়োগের প্রস্তাব পেশ করলেও সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে এই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনামা দীর্ঘদিন জারি করেনি অর্থ দফতর। কিন্তু তাদের নির্দেশনামা ছাড়া কোনও নিয়োগই বৈধ নয়। ফলে অনেক আধিকারিক অর্থ দফতরের নির্দেশনামা দাবি করেন। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ১৪ ও ২৭শে নভেম্বর দু’টি নির্দেশনামা জারি করে অর্থ দফতর। তাতে বলা হয়, সেচ দফতরে ১০৯২ জন, কৃষি ও কৃষি বিপণনে ১০১৫, জনস্বাস্থ্য কারিগরিতে ৪৬৭, শিল্প দফতরে ২০০, পূর্ত দফতরে ১০০, যুব কল্যাণে ৫৫ এবং নগরোন্নয়ন দফতরে ৫০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ করা যাবে। (অর্থাৎ, মোট ২৯৭৯ জন) ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হবে।
সব চেয়ে বেশি নিয়োগ হবে যেখানে, সেই সেচ দফতরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করে হলে তিনি বলেন, “আমি এক মাস হল দায়িত্ব নিয়েছি। নিয়োগের ব্যাপারে কিছু জানি না। খোঁজ নিতে হবে।”
যদিও বিতর্কের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে নিয়োগ সেরে ফেলা হয়েছে বলে মহাকরণ সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, শিল্প দফতরের অধীন খনি উন্নয়ন নিগম ও শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং ক্রীড়া দফতরের অধীন ক্রীড়া পর্ষদে নিয়োগেরকাজ শেষ। পরিবহণ নিগমগুলিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে সেচ, জনস্বাস্থ্য, কৃষি এবং নগরোন্নয়ন দফতরে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.