দলের খোদ জেলা সভাপতির নির্বাচনী কেন্দ্রেই হেরে যাওয়ার ভয়ে একটি গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির ভোটে প্রার্থীই দিতে পারল না তৃণমূল। এর ফলে ফের ওই গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতি দখলে রাখার পথ মসৃন হয়ে গেল সিপিএমের। হারার ভয়েই প্রার্থী না দেওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বও।
পুরুলিয়ার বলরামপুরের মালতি ভ্রমর সিং স্মৃতি পাঠাগারের পরিচালন সমিতির নির্বাচন ছিল ৩০ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন। ওই পরিচালন সমিতির আটটি আসনের সব ক’টিতে সিপিএম প্রার্থী দিলেও তৃণমূল একটিও প্রার্থী দেয় নি। গ্রন্থাগারিক লছমন সিং সর্দার বলেন, “আটটি আসনে নিবার্চন হবে। এ দিন মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। আটটি মাত্র মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে।” সিপিএমের দাবি, জনসমর্থন নেই বুঝেই তৃণমূল তাদের সঙ্গে লড়াই করার সাহস দেখায় নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা ওই নির্বাচন জয়ী হল।
এক সময়কার সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি বলরামপুরে রীতিমতো লড়াই করে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল। ওই কেন্দ্র থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রীসভায় যান তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। তার পর এলাকায় তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তিও বেশ বৃদ্ধি পায়। যৌথবাহিনীর চাপে এবং তৃণমূল নেতা অঘোর হেমব্রম ও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতো-র যৌথ নেতৃত্বে মাওবাদীরাও অনেকাংশে গুটিয়ে যায়। মাওবাদীদের ডাকা পরের পর কয়েকটি বন্ধও এলাকায় তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু বছর ঘুরতেই দেখা যায়, সেই বলরামপুরেই কংগ্রেসের ডাকা বন্ধে প্রভাব পড়েছে। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই ফের এই গ্রন্থাগারের নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারল না তৃণমূল। অথচ স্থানীয় বেলা পঞ্চায়েত বাম বিরোধীদের দখলে। পঞ্চায়েতের মোট ১১টি আসনের মধ্যে ৫টি তৃণমূলের, ১টি বিজেপি ও ২টি ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির দখলে। এই যেখানে এলাকার রাজনৈতিক চিত্র, সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারল না কেন?
তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর দাবি, “গ্রন্থাগার নির্বাচনের খবর দেরিতে পাওয়ায় প্রস্তুতি নেওয়া যায়নি। তা ছাড়া গ্রন্থাগারে ভোটাধিকার থাকা সদস্যদের বেশির ভাগই সিপিএমের সমর্থক। সব সদস্যের ভোটাধিকার থাকলে আমরা প্রার্থী দিতাম। জিতেও যেতাম।” তাঁর স্বীকারোক্তি, এই পরিস্থিতিতে প্রার্থী দিলে তাঁদের পরাজয় হত। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তা প্রচার করে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করত সিপিএম। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য বলেছেন, “আমি তো বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” সিপিএমের বলরামপুর জোনাল কমিটির সদস্য তথা মালতি এলাকার বাসিন্দা ত্রিলোচন দাস বলছেন, “আমরা ওখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছি। এখন তো বলা যাবে না যে আমরা সন্ত্রাস করে অন্যদের দাঁড়াতে দিই নি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপের কটাক্ষ, “আসলে গ্রন্থাগার পরিচালনার কাজে তো টাকা নেই। তাই তৃণমূল প্রার্থী দিতে আগ্রহী হয়নি।” |