অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল নাই, নূতন দিল্লি এই সংবাদটি ফের জানাইল। সরকারি পূর্বাভাস, ২০১২-১৩ সালে ভারতীয় অর্থনীতি বড়জোর ৫.৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাইবে। গত বাজেটে যে বৃদ্ধির হার অনুমান করা হইয়াছিল, তাহার তুলনায় এই নূতন প্রত্যাশিত হার অনেকখানি কম। পূর্বের অভিজ্ঞতা মানিলে বলিতে হয়, প্রকৃত বৃদ্ধির হার আরও কম হইবারই সম্ভাবনা। এই অবস্থায় দিল্লি যে মুম্বইয়ের মুখ চাহিয়া আছে, অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম মাসখানেক পূর্বে সেই কথাটি বেশ স্পষ্ট করিয়াই বলিয়াছিলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও তাঁহার ষাণ্মাসিক আর্থিক সমীক্ষায় অর্থমন্ত্রীর সেই প্রত্যাশাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন নাই। এই দফায় অর্থমন্ত্রী আর মুখ ফুটিয়া প্রত্যাশার কথাটি বলেন নাই। তাহাতেও সুব্বারাওয়ের মন গলে নাই। তিনি ব্যাঙ্কের সুদের হার ও ক্যাশ রিজার্ভ রেশিয়ো অপরিবর্তিত রাখিলেন। বার্তা স্পষ্ট। অর্থনীতিকে স্বাস্থ্যে ফিরাইতে সরকারকে নিজের দায়িত্ব পালন করিতেই হইবে।
এই দফায় অবশ্য সুব্বারাওয়ের সিদ্ধান্ত লইয়া কয়েকটি প্রশ্ন তোলা সম্ভব। তাঁহার ঘোষিত লক্ষ্য মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা। নভেম্বরে পাইকারি মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও ভোগ্যপণ্য সূচক এখনও যথেষ্ট চড়া। এখন আর্থিক বৃদ্ধির হারের দিকে নজর ফিরাইলে সম্ভবত তাহা বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত হইত। তিনি বলিয়াছেন, এই বার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতি দেশের বৃদ্ধির হার বাড়াইবার দিকে নজর দিবে। কথাটি তিনি এক বৎসর পূর্বেও বলিয়াছিলেন। ব্যাঙ্ক নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে নাই। সুব্বারাও এত দিন যে ভাবে আর্থিক নীতি স্থির করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার সম্বন্ধে একটি প্রত্যাশা তৈরি হইয়া গিয়াছে তিনি সুদের হার কমাইবেন না। ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষণায় বাণিজ্যমহল অবাক হয় নাই। এই প্রত্যাশাকেই তিনি ভিন্ন পথে কাজে লাগাইতে পারিতেন। এই দফায় যদি নেহাত প্রতীক হিসাবেও সুদের হার খানিক কমাইতেন, বাজার অবাক হইয়াই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাইত। স্পষ্টতই, তিনি অবাক করায় বিশ্বাসী নহেন।
তবে তাঁহাকে দোষ দেওয়া কঠিন। অর্থমন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা রঘুরাম রাজন জানাইয়াছেন, এই বৎসর রাজকোষ ঘাটতির হার হইবে ৫.৩ শতাংশ। অনুমান করা চলে, বৎসর-শেষে সংখ্যাটি স্ফীত হইবে। তাহার উপর নির্বাচন যত আগাইয়া আসিবে, সরকারের হাতও ততই উদার হইবে। ইতিমধ্যেই এলপিজি-র ভর্তুকি বাড়াইবার সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা হইয়া গিয়াছে। নির্বাচনের মরসুমে এমন সিদ্ধান্ত আরও হইবে। ফলে রাজস্ব নীতিতে কোনও লাগাম পড়িবে, সেই প্রত্যাশা করিবার বিন্দুমাত্র কারণ নাই। অর্থাৎ, অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারে সরকার কুটোটি নাড়িয়াও সাহায্য করিবে না। এই অবস্থায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোন যুক্তিতে ঝুঁকি লইবে? ব্যাঙ্ক বহু চেষ্টায় মূল্যস্ফীতির হারকে নিয়ন্ত্রণে আনিতে সফল হইয়াছে। সরকারের সহযোগিতার স্পষ্ট আশ্বাস না থাকিলে ব্যাঙ্ক সেই পথ হইতে সরিবে কেন? |