প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে মোদী, দোটানায় সঙ্ঘ
গুজরাত ভোটের ফল বেরোনোর পরে প্রৌঢ়ার দু’চোখে আজ একটাই স্বপ্ন ছেলে এ বার প্রধানমন্ত্রী হোক। গুজরাত জয়ের হ্যাটট্রিক করার পরে ছেলে নরেন্দ্র মোদীর জন্য এমন মঙ্গল কামনা করতেই পারেন তৃপ্ত মা। কিন্তু বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার কি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে?
বিজেপি এবং আরএসএস নেতাদের অনেকেই মোদীকে রীতিমতো সমঝে চলেন। নাগপুরের সঙ্ঘ-কর্তারা যে ভাবে রিমোট কন্ট্রোলে নিতিন গডকড়ীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সে ভাবে কিন্তু মোদীকে তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তার উপর এ বার যাবতীয় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে পাশে সরিয়ে রেখে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি যে ভাবে রাজ্যে ১১৫টি আসন দখল করেছে, তাতে তাঁকে সামাল দেওয়া সঙ্ঘ-কর্তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়ল। এই জয়ের ফলে মোদী প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এক ধাক্কায় অনেকটাই এগিয়ে গেলেন বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ? নেতৃত্বের সঙ্কটে জর্জরিত বিজেপি কর্মীরা আজ মোদীকে সামনে রেখে অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। তাঁরা অনেকেই মনে করছেন, মোদীকে রাহুল গাঁধীর প্রতিপক্ষ করা হলেই বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি হতে পারে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিজেপিকে বাড়তে গেলে প্রয়োজন মোদীর হিন্দুত্ববাদী ভাবমূর্তিই।
তৃতীয় বার। জয়ের পর নরেন্দ্র মোদীকে সংবর্ধনা। ছবি: পি টি আই।
কিন্তু দলের সিংহভাগ কর্মী বা কিছু নেতা চাইলেই কি মোদীকে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রাখবে সঙ্ঘ পরিবার? সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত নিজে মোদীকে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রাখতে সে ভাবে উৎসাহী নন। তিনি বরং এই মুহূর্তে দলের বড় অংশের আপত্তি সত্ত্বেও গডকড়ীকে দ্বিতীয় দফায় বিজেপি সভাপতি করতে বেশি আগ্রহী। আর এ নিয়ে সঙ্ঘের অন্দরমহল রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত। বস্তুত মাত্র কয়েক বছর আগেও সঙ্ঘ পরিবার যেমন একজোট ছিল, এখন আর তা নেই। সঙ্ঘের মধ্যেই জন্ম হয়েছে একাধিক সঙ্ঘের। আর এ সবের ফলেই গডকড়ীকে নিয়ে সরসঙ্ঘচালকের ইচ্ছেয় বাদ সেধেছেন অন্তত চার জন প্রথম সারির সঙ্ঘ নেতা। কার্যত বিদ্রোহী হয়ে ওঠা এই নেতা চতুষ্টয় কিছু দিন আগেই সঙ্ঘপ্রধানকে প্রস্তাব দিয়েছেন, গুজরাতের ফল ভাল হলে মোদীকেই যেন নেতা হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জরুরি নয়, সে ক্ষেত্রে এখনই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। তাঁকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা যেতেই পারে। কংগ্রেসে যেমন রাহুলকে প্রচার কমিটির প্রধান করে আগামী নির্বাচনের মুখ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তেমনই বিজেপিতেও মোদীকে সেই দায়িত্ব দিয়ে নেতা হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে বলে মনে করেন সঙ্ঘের এই নেতারা।
কিন্তু এই প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে অনেকেরই। সঙ্ঘ তো বটেই, বিজেপি নেতৃত্বের একাংশও এখনই মোদীকে এ ভাবে তুলে ধরার বিরোধী। তাঁদের বক্তব্য, আসলে মোদী একটা নন, দু’টি চরিত্র। এক মোদী গোধরা-কলঙ্কিত ‘হিন্দু হৃদয়-সম্রাট’, অন্য মোদী ‘বিকাশ-পুরুষ’। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া মোদী
এখন নিজের গা থেকে সাম্প্রদায়িকতার ছাপ তুলে ফেলতে মরিয়া। কিন্তু এ-ও সত্য যে, তিনি গোধরা নিয়ে আজও ক্ষমা চাইতে রাজি নন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মুসলমানরা তাঁর মাথায় টুপি পরাতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। অর্থাৎ হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে আঘাত দিতে নারাজ মোদী। হিন্দুত্বের সঙ্গে মোদিত্বের এই সংঘাত থেকেই যাচ্ছে।
বিজেপি নেতারা অনেকে বলছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলেই নীতীশ কুমার তথা জেডি (ইউ) এনডিএ ছাড়বেন। তা ছাড়া ভবিষ্যতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পুরনো শরিককে সঙ্গে পাওয়াও কঠিন হবে। সেই সঙ্গে গোটা দেশে ফের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হবে। ফলে গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে মোদী প্রচারে নামায় কংগ্রেস যে রাজনৈতিক ফায়দা পেয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি হতেই পারে।
মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, দিল্লি, কর্নাটক-সহ মোট দশটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে। মধ্যপ্রদেশের ভোটের পর যদি শিবরাজ সিংহ চৌহানও হ্যাটট্রিক করেন, তবে নিম্নবর্গের এই ওবিসি-নেতাকেও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার চেষ্টা হতে পারে। আডবাণী-সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলি মুখে যা-ই বলুন, তাঁরাও চান না মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হোক।
এই অবস্থায় সঙ্ঘের ওই চার নেতার প্রস্তাবই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে চলেছে বিজেপি এবং সঙ্ঘের অন্দরমহলে। তা হল, নরেন্দ্র মোদীকে জাতীয় প্রচার কমিটির প্রধান করা এবং গডকড়ীকে সরিয়ে অরুণ জেটলি বা সুষমা স্বরাজকে সভাপতি করা হোক।
মোদী নিজেও প্রস্তুত। এ বারের নির্বাচনে একটি সংস্থার বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজ্য জুড়ে থ্রি-ডি প্রচার চালিয়েছেন তিনি। কৌশলী মোদী সেই থ্রি-ডি প্রচার সংস্থাটির সঙ্গে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চুক্তি করে রেখেছেন, যাতে অন্য কেউ, বিশেষত কংগ্রেস তা কাজে লাগাতে না পারে। দলের একাংশের বক্তব্য, মোদী প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেশ জুড়ে প্রচারাভিযানে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এ জন্য নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে গুজরাতের সিংহাসনে বসিয়ে দিল্লিতে অশোকা রোডে বিজেপির সদর কার্যালয়ে পিছনের একটি ছোট্ট ঘরে আরএসএস প্রচারকদের মতো থাকার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁরা। যেমনটা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থাকতেন। গুজরাতের সাবরমতী আশ্রম থেকে ভারতযাত্রা শুরু করার পরিকল্পনাও তাঁর আছে।
তিনি চাইছেন। দলীয় কর্মীরা চাইছেন। বিজেপি এবং সঙ্ঘের একাংশও চাইছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘ রাজি হবে তো? প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করে মোদীকে বিজেপি সভাপতি করার প্রস্তাব দেবে না তো সঙ্ঘ?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.