জেমস মিরলেস, এই-ইচি নেগেশি, স্যামুয়েল সি সি টিং, উয়ান টি লি, ও রাজেন্দ্র পচৌরি-একই সঙ্গে পাঁচ জন নোবেলজয়ীকে এ বার হাতের কাছে পাবেন কলকাতার গবেষকেরা। উপলক্ষ্য, ভারতের বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষ অনুষ্ঠান। ৩ জানুয়ারি কলকাতায় বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবার্ষিক অধিবেশন শুরু। তাতেই বিশেষ অতিথি হিসেবে আসছেন এই পাঁচ নোবেলজয়ী। শতবর্ষের অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
১৯১৪ সালের কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে তিন দিন ধরে (১৫-১৭ জানুয়ারি) প্রথম বিজ্ঞান কংগ্রেসের অধিবেশন হয়। সভাপতিত্ব করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই শতবর্ষে অধিবেশনের জায়গা স্থির করা হয়েছে এই শহরে।
জেমস মিরলেস। নোবেলজয়ী এই স্কটিশ অর্থনীতিবিদের গবেষণার মূল জায়গা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি। পড়েছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেমব্রিজের ট্রিনিট্রি কলেজে। কেমব্রিজে পড়ার সময়ই নোবেলজয়ী বাঙালি অমর্ত্য সেনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল বলেও শোনা যায়। পরবর্তী কালে তাঁর অন্যতম ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর এক বাঙালি অর্থনীতিবিদ পার্থসারথি দাশগুপ্ত। স্কটল্যান্ডের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গোষ্ঠীর সদস্য জেমস মিরলেস অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ-সহ বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। কেমব্রিজের এমিরেটাস অধ্যাপক মিরলেস যুক্ত রয়েছেন চাইনিজ ইউনিভার্সিটি অফ হংকংয়েও।
|
মাত্র ৪০ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যায় নোবেল জিতে চমক দিয়েছিলেন স্যামুয়েল চাও চুং টিং। বিষয় ছিল একটি পারমাণবিক কণা আবিষ্কার। সে ১৯৭৬ সালের কথা। গবেষণা করতেন ইউরোপীয় পরমাণু গবেষণা সংস্থায়, পরবর্তী কালে যার নাম হয় ‘সার্ন’। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যে আলফা ম্যাগনেটিক স্পেকট্রোমিটার বসানো হয়েছে, তারও নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে তাইওয়ানের নাগরিকদের মধ্যে প্রথম নোবেল জিতেছিলেন রসায়নবিদ উয়ান টি লি। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গতিবিদ্যায় সংক্রান্ত গবেষণাই তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছিল। ভৌত-রসায়নের সঙ্গে তাইওয়ানের রাজনীতিতেও প্রভাব রয়েছে উয়ানের। তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য সব সময় সওয়াল করে গিয়েছেন তিনি। ২০০০ সালে সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
২০১০ সালে জৈব রসায়নে বিশেষ অনুঘটক নিয়ে গবেষণার জন্য নোবেল পেয়েছিলেন জাপানি রসায়নবিদ এই-ইচি নেগেশি। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এই গবেষকের জীবনের বেশির ভাগটাই কেটেছে আমেরিকার পারদু বিশ্ববিদ্যালয়ে। নোবেল পাওয়ার পর ২০১১ সালে পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.এসসি দিয়ে সম্মানীত করে। ঘটনাচক্রে ১৯৬৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রথম গবেষণা-ডিগ্রি (পিএইচ.ডি) পান নেগেশি।
নোবেলজয়ীদের তালিকাতে এ বার এক মাত্র ভারতীয় পরিবেশবিদ রাজেন্দ্র পচৌরি। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ২০০৭ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। শক্তি ও কৃষি সংক্রান্ত একাধিক ভারতীয় গবেষণা সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও সমাজ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যানও এই ভারতীয়। পরিবেশবিদ হিসেবে বিখ্যাত হলেও অনেকেই জানেন না, পচৌরির জীবন শুরু হয়েছিল ভারতীয় রেলের স্পেশ্যাল ক্লাস রেলওয়ে অ্যাপ্রেন্টিস হিসেবে। তাঁর খাবারের তালিকায় থাকে বিশুদ্ধ নিরামিষ পদ।
ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের আঞ্চলিক সেক্রেটারি ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই পাঁচ নোবেলজয়ী ছাড়া অধিবেশনে আরও অনেক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আসছেন।” তালিকায় রয়েছেন ‘সবুজ বিপ্লবের’ জনক এম এস স্বামীনাথন, ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান কৃষ্ণস্বামী কস্তুরীরঙ্গন, পদার্থবিদ গিরীশশরণ অগ্রবাল, রঘু বরদান, রঘুনাথ মাসেলকরের মতো বিজ্ঞানীরাও। |