আমি, আমার শাড়ি আর দিম্মা
শাড়িগুলো আজকে সকালেই বেরল।
বেরল সেই আলমারি থেকে।
নিজের হাতে নাতনি রাইমার জন্য তা বার করে দিলেন সুচিত্রা সেন।
আসলে এই বাড়িতে সর্বত্র তিনি।
বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড-এ সায়েন্স কলেজের উল্টো দিকের প্রাইভেট রোড দিয়ে ঢুকলে ডান হাতের শেষ ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকেন তাঁরা। ‘সেন’ পরিবার। আনন্দ প্লাস-এর জন্য এক্সক্লুসিভ ছবি তোলা হল সন্ধ্যাবেলা। রাইমা’র পরনে সুচিত্রা সেনের শাড়ি। কিন্তু তার আগেই সুচিত্রা সেনের বাড়িতে বকুনিও খাওয়া হল। সেই ‘সৌভাগ্য’ আর ক’জনের হয়।
মা তো চাবি দিয়েই খালাস। রাইমা আনিয়েছেন শিঙাড়া। কিন্তু শিঙাড়ার স্বাদ উড়ে গেল ঝড়ে। ঝড়ের নাম মুনমুন সেন।
“এত হাসাহাসি কেন তোমাদের,” রাইমাকে বললেন সোজাসুজি।
“তোমাদের মাথায় এই রকম আইডিয়া এলে তো মুশকিল। মায়ের শাড়ি বের করা কতটা ডিফিকাল্ট তোমরা জানো? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। মা নিজেই আমাকে মনে করিয়ে বললেন আজকে রাইমা শু্যট করবে আমার শাড়ি পরে। তার পর দিয়ে গেলেন একটা বিশাল চাবির গোছা। ব্যস, আমি চাবি দিয়ে সব আলমারি খুলি আর কী! আমার কি অত সময় আছে? মা তো চাবি দিয়েই খালাস। এই যে গোলাপি বেনারসিটা দেখছ, এটা অবশ্য মা সকালে নিজে হাতে বের করে আমায় দিয়েছে।
শুধু খেয়াল রেখো বেনারসিগুলো পঞ্চাশ বছরের পুরোনো। পিন লাগিয়ো না শাড়িতে,” এক নিশ্বাসে বললেন মুনমুন সেন।
আসলে এই বাড়ির মজাটাই আলাদা।
এখানে অন্তঃপুরবাসিনী হলেও সব আলোচনাতেই ‘তিনি’।
এই বেনারসি দিম্মা আমার মায়ের বিয়ের দিন পরেছিল ততক্ষণে মুনমুন সেনের মুড ভাল। “সরি, তোমাদের বকলাম। আমারও স্ট্রেন হয়।” তার পরে নিজেই বলতে শুরু করলেন মায়ের কথা। “মায়ের মতো অত স্টাইলিশ অভিনেত্রী আমি খুব কম দেখেছি। নিজের মা বলে বলছি না, মা ওয়াজ এ ক্লাস অ্যাপার্ট। আমাকে অনেকে বলত, আমি স্টাইল জানি না শুধু শিফন পরি। তারা জানে না মায়ের শিফন কালেকশন আমার থেকে অনেক বেশি।”
ততক্ষণে রাইমা পরে নিয়েছেন বেনারসি।
“জানো, এই বেনারসিটা দিম্মা আমার মায়ের বিয়ের দিন পরেছিল,” খুব ক্যাজুয়ালি বললেন রাইমা। এর মধ্যেই মেয়ের চুলটা অ্যাডজাস্ট করে দিলেন মুনমুন। বললেন, “মা কিন্তু ভুরুটা একটু ভারী করে আঁকত। আর মা মোটেই ম্যাচিং শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজের তোয়াক্কা করত না। আমার মনে আছে মা শাড়ির সঙ্গে একদম কনট্রাস্ট কালারের পেটিকোট পরতেন। শুধু কি তাই পেটিকোটগুলো হত সাটিনের।”
দরজাটার উল্টো দিকেই উনি ‘সেন পরিবারের এই ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমের এক দিকে ডাইনিং টেবিল। দেওয়ালে নানা পেন্টিং। বাড়িতে ঢোকার মুখে একটা আলমারি দেখালেন মুনমুন সেন। আলমারির পাল্লায় ষোল বছর বয়সে তাঁর আঁকা একটা পেন্টিং।
‘বাজুবন্ধ খুল খুল যায়’: পঞ্চাশ
বছর আগে এক পার্টিতে সুচিত্রা সেন
বাজুবন্ধ: তবে পঞ্চাশ বছর
বাদে এ বার পরেছেন রাইমা সেন
ড্রয়িং রুমের অন্য দিকে সোফা। সেন্টার টেবিলে নানা কিউরিও। আর ড্রয়িং রুমে দু’টি সুচিত্রা সেনের ছবি। তা ছাড়াও গায়ত্রী দেবীরও ছবি।
রাইমা গায়ত্রী দেবীর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “গায়ত্রী দেবী আমার বাবার মাসি। পাশেই দাঁড়িয়ে শুনছিলেন মুনমুন। রাইমার কথার রেশ ধরে তিনি আদরের সঙ্গে বললেন, “গায়ত্রী দেবীর চোখ দেখেছ? রাইমারও কিন্তু একই রকম ‘কুচবিহার আইজ’। কী সুন্দরী লাগছে আমার মেয়েটাকে,” বললেন সুচিত্রাকন্যা।
এই বলে মুনমুনও দরজা খুলে চলে গেলেন মায়ের ফ্ল্যাটে। ছোট্ট প্যাসেজ ক্রস করে আর একটা ড্রয়িং রুম। তার পাশে বারান্দা। বারান্দার দরজা খুলেই যাওয়া যায় তাঁর ফ্ল্যাটে।
“ওই যে ওই দরজাটা। ওটার উল্টো দিকেই উনি থাকেন”, কানে কানে বলে গেলেন অনিরুদ্ধ চাকলাদার।
যাও, দিম্মাকে দেখিয়ে এসো
কিন্তু এর মাঝখানে রাইমার হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করারও দরকার পড়ল।
হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করে শু্যট করতে যাবেন, সেই মুহূর্তে ঘরে ফিরলেন মুনমুন।
“রাইমা, কী সুন্দর লাগছে তোমার চুল! যাও, দিম্মাকে দেখিয়ে এসো,” মেয়েকে বললেন মা।
রাইমা দ্রুত গেলেন দিদিমাকে সাজ দেখাতে।
ফিরে এসে বললেন, “দিম্মা লাইকস মাই হেয়ার। অ্যান্ড সে-জ্ আমার চোখের মেক-আপ একদম ওঁর মতো হয়েছে।”
মুনমুন ততক্ষণে শোনাচ্ছেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কথা। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল কত অজানা তথ্য। “মা সেই সময় লন্ডনে ফেশিয়াল করতে যেতেন। যেতেন এলিজাবেথ আর্ডেনের দোকানে। সেই সময় লন্ডনে মা মেফেয়ারে একটা ফ্ল্যাটে উঠতেন। এক বার মনে আছে মায়ের শরীর খারাপ হয়েছিল। ডাক্তার ছিলেন ডঃ ড্যানিয়েল। পরে জেনেছিলাম কুইনের হাউজ ফিজিশিয়ান উনি।
এ ছাড়াও মায়ের ছিল জুতোর শখ। মায়ের প্রচুর স্টিলেটো ছিল। কিছু জুতোর হিলে সোনার বর্ডারও লাগানো থাকত। আসলে মা সবার সঙ্গে সে রকম মিশত না। শি কুড অ্যাফর্ড টু। মুম্বইতে শ্রীদেবীও অনেকটা এরকম,” বলছিলেন মুনমুন।
দিম্মার মতো লাগছে না?
এ বার ফোটোশু্ট শেষের মুখে।
যে ঘরে রাইমা চেঞ্জ করছিলেন সেই ঘরের খাটে পর পর সাজানো সুচিত্রা সেনের শাড়িগুলো।
এর মধ্যেই মুনমুন সেন দেখালেন ‘হার মানা হার’-এর পোস্টার। “মায়ের কয়েকটা ছবির পোস্টার আছে আমার কাছে। এটা তার মধ্যে একটা।”
এ বার বেরবার পালা।
কিন্তু শেষ পাতে চকোলেট ম্যুস-এর মতো মুনমুন সেন তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের কিছু ছবিও দেখালেন।
“মায়ের কয়েকটা ব্যক্তিগত ছবি তুলেছিলাম আমি। তার পর ফ্রেম করেছি,” বললেন মুনমুন।
সাংবাদিকতার দোহাই দিয়ে ওই ছবিগুলো মোবাইল ক্যামেরাতে তুলেছিলাম বটে, কিন্তু যে ফ্যামিলিতে ‘প্রাইভেসি’ প্রথম ও শেষ শর্ত, তাঁদের বিশ্বাসভঙ্গ করতে ইচ্ছে হয়নি।
কিন্তু একটা জিনিস বেশ বুঝেছিলাম বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ‘সেন’ বাড়িতে।
অন্তঃপুরবাসিনী হলেও এ বাড়িতে আজও সর্বত্র ‘তিনি’।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.