স্রোত উজিয়ে মরা মাছের মিছিল। হাঁটু জলে নেমে পড়ে অনেকেই সেই রুপোলি রঙা টাকি, বাটা, চাঁদা, বোরোলি গামছা দিয়ে তুলে ছুটছেন বাজারে। নদী ঘেঁষা বাজারে জলের দরে বিকোচ্ছে অগুন্তি মরা-মাছ।
নদীর নাম তিস্তা। আর শহরটা সেই জলপাইগুড়ি। যে শহর জানে, গত শীতে এ ভাবেই অন্য এক নদী, করলায় ভেসে উঠেছিল এমনই অজস্র আড়, রাইচাঁদা কিংবা আমেরিকান রুই। আর বাজার ভরে গিয়েছিল সেই সস্তায় বিকোনো মরা-মাছে।
কেন বার বার জলপাইগুড়ি শহরকে ঘিরে থাকা তিস্তা, করলা কিংবা গদাধরের খালে আচমকা ভেসে ওঠে মরা মাছ? কারণ খুঁজতে মঙ্গলবারই কলকাতা থেকে পরিবেশ দফতরের বিশেষজ্ঞরা রওনা দিয়েছেন জলপাইগুড়ি।
পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার জানান, কেন বার বার জলপাইগুড়িকে ঘিরেই এমন কাণ্ড ঘটছে সেটা খোঁজ নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, “এ দিনই বিশেষজ্ঞরা জলপাইগুড়ি গিয়েছেন। তাঁদের রিপোর্ট পেলেই আসল কারণ জানা যাবে।” তবে, জলে কীটনাশক মিশে যাওয়ার ফলেই এমনটা ঘটেছে বলে তাঁর অনুমান। |
জলপাইগুড়িতে তিস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া মরা মাছ। ছবি: সন্দীপ পাল |
স্থানীয় মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক শুভাশিস চক্রবর্তীও বলেন, “আসলে সব মাছের জীবনীশক্তি সমান নয়। ট্যাংরার মতো বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ রয়েছে যারা জলে সামান্য বিষক্রিয়া সহ্য করতে না পেরে মারা যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে মনে হয়।” জলজ প্রাণী নিয়ে দীর্ঘ দিন গবেষণা করছেন দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, উত্তর ও দক্ষিণ দুই বঙ্গেই চাষিরা জমিতে কীটনাশক দেওয়ার পরে খালি ব্যাগ বা প্লাস্টিকের পাত্রটি নদীর জলে ধুয়ে ফেলেন। তা যে জলের ক্ষতি করতে পারে এ ধারনাই তাঁদের নেই। তিনি বলেন, “সচেতনতার অভাবে এ ভাবে শুধু নদী নয়, পুকুরের জলেও বিষক্রিয়া ঘটে। কাতারে কাতারে মাছ মরে।”
শীতে নদীর কিনারে, পাথরের খাঁজে এসে আশ্রয় নেয় মাছের ঝাঁক। সেখানে জাল ফেলা যায় না। স্থানীয় প্রশাসনের অভিযোগ, অনেক সময়ে মাছ ধরতে তাই জলে সামান্য বিষ ছড়িয়ে দেন মৎস্যজীবীদের একাংশ। তার জেরেই ওই ঘটনা। স্থানীয় মৎস্য দফতর জানাচ্ছে, অন্তত ১৫টি প্রজাতির মাছ মারা গিয়েছে এ দিন।
সকাল থেকেই জলপাইগুড়িতে তিস্তার প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভেসে উঠতে দেখা যায় মরা-মাছ। সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন যাঁরা বিষয়টা তাঁদেরই চোখে পড়ে প্রথমে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁদের অনেকেই জলে নেমে ধরতে শুরু করেছিলেন মাছ। সেই সময়ে জলের উপরে তৈলাক্ত কিছু ভাসতেও দেখা গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
বেলায় পুরসভা অবশ্য মাইকে প্রচার শুরু করেছিল, কেউ যেন বাজার থেকে ওই মাছ না কেনেন। পুরকর্মীরা মরা-মাছ উদ্ধারে নেমে পড়েন নদীতে। বিকেল পর্যন্ত কেজি কয়েক মাছ উদ্ধারও হয়। পরীক্ষার জন্য তাদের পাঠানো হয়েছে গবেষণাগারে।
|
এক নজরে |
• ২৮ নভেম্বর ২০১১
করলায় মাছ মড়ক। নিষিদ্ধ কীটনাশক এণ্ডোসালফান জলে মিশেই বিপত্তি।
• ৩০ জুলাই, ২০১২
গদাধর ক্যানালে প্রচুর ছোট মাছের মৃত্যু। অভিযোগ, জলে বিষ
দেওয়াতেই অক্সিজেন কমে এই ঘটনা।
• ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২
তিস্তায় মাছের মড়ক। কারণ বিষক্রিয়াই, জানাল মৎস্য দফতর। |
|