ডিসেম্বর পড়তেই জেলার শীতসন্ধ্যাগুলো ক্রমশ ভরে উঠছে নাট্যোৎসবে। কল্যাণী থেকে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট থেকে শান্তিপুর, চাকদহ থেকে নবদ্বীপসর্বত্র নাট্যোৎসব। জেলার নাট্যমোদীদের রীতিমতো দিনক্ষণ হিসেব করে চলতে হচ্ছে, কবে কোন উৎসবের কোন নাটকটি দেখবেন। আর দর্শকদের সেই উৎসাহে অভিভূত উদ্যোক্তারা।
জেলার অন্যতম প্রধান নাট্যোৎসবের আয়োজন করে কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র। তাঁদের উৎসব এ বার আঠারোতে পা দিল। ১৭ থেকে শুরু, চলবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর তার টিকিট বিক্রি শুরু হয় প্রতি বছর ডিসেম্বরের প্রথম রবিবার থেকে। সংগঠনের কর্ণধার নাট্য ব্যক্তিত্ব কিশোর সেনগুপ্ত বলেন, “এ বার রবিবারের কাউন্টারে প্রথম যে দর্শক এসেছিলেন, তিনি দাঁড়িয়েছিলেন সকাল সাড়ে পাঁচটায়। আমাদের কাউন্টার কিন্তু খোলা হয় বিকেল চারটেয়।” আশ্চর্য এই উৎসাহ মফসস্ল তো বটেই, কলকাতার ক্ষেত্রেও অবাক করা কাণ্ড। কিশোর জানান, প্রথম দিনেই তাঁদের এক লক্ষ চুরাশি হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ বার তাঁদের নাট্যোৎসব শুরু হচ্ছে শূদ্রকের দহনান্ত দিয়ে। বিভিন্ন দিন মঞ্চস্থ হবে বহুরূপীর নানা ফুলের মালা, নান্দীকারের অজ্ঞাতবাস, হৃদিমাঝারে, কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের আলিবাবা, স্বপ্নসন্ধানীর ম্যাকবেথ। টিকিটের লাইনেই দাঁড়িয়েছেন সারা জেলা থেকে আসা মানুষ। মজায় গল্পে কেটে গিয়েছে সময়টা। নাট্যোৎসবের আবহ যেন গড়ে দিয়েছে ওই টিকিট কাউন্টারই। টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ৫০ টাকা, সর্বনিম্ন ৪০ টাকা। যাঁরা প্রতিটি নাটক দেখবেন তাঁদের প্রতিটি টিকিটে পাঁচ টাকা করে ছাড়। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বাজেট। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি সহায্য। |
ডিসেম্বরের ১৭ থেকে ২৩ শান্তিপুরে রঙ্গপীঠ আয়োজিত নবম নাট্যমেলায় আবার ভিড় ভিন রাজ্যের নাট্য দলের। সাত দিনে মোট ১৩টি নাটক, অঙ্গনমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আরও ৬টি। অঙ্গনমঞ্চে শতাব্দী, সূচনা, পুরুলিয়ার সপ্তর্ষি যেমন থাকছে, তেমনই থাকছে ওড়িশা এবং কোরীয় নাট্যদলের প্রযোজনা। রঙ্গপীঠের কর্ণধার বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “অসমের পূর্বরঙ্গ, ওড়িশার নাট্যচেতনা, পুণের ধ্যাস, সিকিমের রেপার্টরি থিয়েটার। রয়েছে কালিয়াগঞ্জ ও বহরমপুরের নাটক। বাজেট তিন লক্ষ টাকা। সরকারি সাহায্য এবং নিজেদের সংগ্রহ মিলিয়ে উৎসবের খরচ উঠছে। রানাঘাটের নাট্যপ্রেমী সংস্থার উদ্যোগে শুরু হতে চলেছে দু’টি পর্বের নাট্যোৎসব। সহযোগিতা করছে রানাঘাট পুরসভাই। প্রথম পবে ৩-৬ জানুয়ারি দেখা যাবে দৃশ্যপটের অয়দিপাউস, পিএলটি’র জান-এ-কলকাত্তা প্রভৃতি নাটক। দ্বিতীয় পর্বে ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি হবে আরও দু’টি নাটক রংরূপ-এর জলছবি, নান্দীপটের ভ্রম। সংস্থা প্রধান দিব্যেন্দু বিশ্বাস বলেন, “বাজেট সাড়ে তিন লক্ষ টাকা।” তবে কৃষ্ণনগর পরম্পরা আয়োজিত একাদশ নাটকের মেলা আয়োজনে বিরাট। বারো দিনে চোদ্দটি নাটক। কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে এ বারের উৎসবে স্মরণ করা হবে শেক্সপীয়রকে। থাকবে পিএলটি, স্বপ্নসন্ধানী, নাটকওয়ালা, নাট্যআনন, শ্রীরঙ্গম, দৃশ্যপট, নান্দীপট ও নান্দীকারের প্রযোজনা। সংগঠনের প্রধান শিবনাথ ভদ্রের কথায়, “আমাদের বাজেট সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা। তবে টাকার সবটাই নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হয়। সরকারি সাহায্য নেই।” |