|
|
|
|
তারাবাজি |
অঙ্কুরে অঙ্কুশ |
প্রথমেই বিগ ব্যানার। আর হিট। পরের ছবিতে ‘আনন্দবাজার’-য়ের আলোকচিত্রী।
অঙ্কুশ কি টালিগঞ্জের নতুন তারা? খোঁজ নিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
দেব-স্টেশনে পৌঁছতে আর ক’ বছর বাকি?
আমি দ্বিতীয় দেব না, প্রথম অঙ্কুশ হতে চাই।
দেব যদি ‘রোমিও’ হন, জিৎ ‘আওয়ারা’, আপনি তা হলে কী?
সিনেমার নাম দিয়ে যদি নিজেকে বর্ণনা করতে হয়, তা হলে তো আমার গন কেস। আমি তো আর নিজেকে ‘ইডিয়ট’ বলতে পারি না। একটা সময় নিশ্চয়ই নামের ট্যাগ জুড়ে যাবে। তবে সেটা দর্শকরাই ঠিক করবে।
বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে আগে থেকে কোনও কানেকশন নেই। তবু শুরুতেই এসকে মুভিজ-এর মতো বড় ব্যানার, বিপরীতে শ্রাবন্তীর মতো বড় অভিনেত্রী... সম্ভব হল কী করে?
সত্যি বলছি, আমার কাছেও কখনও কখনও অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। ‘ইডিয়ট’, ‘কানামাছি’র মতো ৫-৬ কোটির সিনেমায় আমার মতো ‘নিউকামার’কে নেওয়া! ভাবাই যায় না। আমি আজ এই যে ইন্টারভিউ দিচ্ছি পুরো ক্রেডিট কিন্তু অশোকজি (অশোক ধানুকা)-র। উনি আমাকে বলেছিলেন, “প্রথম তিনটে ছবি থেকে কোনও ব্যবসা চাই না। একদম খোলা মনে কাজ করো। চতুর্থ ছবি থেকে এক্সপেক্ট করা শুরু করব।” এ রকমই পরিবারের মতো ট্রিট করেছেন আমাকে। তবে উনি কিছু না চাইলেও আমার একটা দায় তো ছিলই। ‘ইডিয়ট’ ভাল চলায় তাই এখন বেশ রিলিভড লাগছে।
বর্ধমানের ছেলের কলকাতায় আসা কি তবে শুধু সিনেমায় নামার জন্য?
একদম। তবে সিনেমায় নামা মানে সিনেমায় নামার স্ট্রাগলটা শুরু করা। কলকাতায় ফ্ল্যাটটা ছিলই। তাই শিফট করতে অসুবিধা হয়নি। হেরিটেজ কলেজে বিবিএ কোর্সে ভর্তি হই। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে টালিগঞ্জ পাড়ায় পোর্টফোলিও নিয়ে ঘোরা। প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলাম ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় যাব না। যত স্ট্রাগলই করতে হোক না কেন, প্রথম মুখ ৩৫ মিলিমিটারেই দেখাব। একই কারণে কোনও রিয়ালিটি শোয়েও যাইনি। অভিনেতাদের একটা এক্সক্লুসিভ ব্যাপার থাকা উচিত। রিয়ালিটি শোয়ে ওটা আর থাকে না।
|
|
|
@AnkushLoveUAll |
|
|
কিন্তু সিনেমায় আসতে চাওয়ার কারণটা কী?
সিনেমায় নামার পোকাটা ছোটবেলা থেকেই মাথায় ঘুরছিল। কত দুপুর যে কেটেছে স্কুল বাঙ্ক করে সিনেমা দেখে, তার শেষ নেই। সিনেমায় রাজধানী এক্সপ্রেস পাঁচ মিনিট ধরে পার হচ্ছে। সেটাও হাঁ করে গিলেছি। নায়ক হওয়ার ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দেয় ক্লাস সেভেন-এইটের সময় থেকে। ফিল্মি-ফিল্মি ব্যাপারটা একদম ইনবর্ন আমার। মনে আছে, ‘কভি অলবিদা না কহে না’ দেখে শাহরুখের মতো ব্যাগ কাঁধে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। কেউ কেউ ভাবত, সত্যিই হয়ত পায়ে লেগেছে। তবে বেশির ভাগই বলত নৌটঙ্কি।
সেই ‘নৌটঙ্কি’গুলো করার পেছনে নিশ্চয়ই মেয়েদের ইমপ্রেস করার একটা ব্যাপার ছিল?
আলবাত। স্কুলে তখন নাটক-টাটক করে একটু-আধটু জনপ্রিয় হয়েছি। ইন্টার স্কুল কম্পিটিশনের দৌলতে বেশ একটা ফ্যান ফলোয়িংও হয়েছে। তা হলে কী হবে। আসলে তো আমি বেশ শাই। কোনও মেয়ের কাছে অ্যাপ্রোচ করতে গেলে হেব্বি ফাটত। ওই সব ফিল্মিপনা, ওভার দ্য টপ অ্যাটিটিউড সেই জন্য। যদি কোনও জুনিয়র মেয়ে ইমপ্রেসড হয়ে এগিয়ে আসে। সফলও হয়েছিলাম। ক্লাস এইটে এক গার্লফ্রেন্ড জোটে। সে তখন পড়ে ক্লাস সিক্সে।
তার পর কী হল সেই স্কুল সুইটহার্টের?
স্বাভাবিক ভাবেই এক বছরও টেকেনি।
কেন, স্বাভাবিক কেন?
ধুর। ওটা পুরো পাপ্পি লাভ। ইনফ্যাচুয়েশন আর কত দিন চলে! বোর্ড পরীক্ষার পর স্কুল চেঞ্জ হয়। হোলি রক ছেড়ে ভর্তি হই ইস্ট ওয়েস্ট মডার্ন-য়ে। ক্লাস ইলেভেনে আর একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম হয়। সেটার মেয়াদও ওই এক বছর। ক্লাস টুয়েলভের পর তো শুরু হয়ে গেল সিনেমায় নামার স্ট্রাগল। এখন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই আমার একমাত্র প্রেম।
শুনছি তো ‘সাত পাকে বাঁধা’র ঐন্দ্রিলার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন?
ওরে বাবা, আপনিও। (হেসে) এবার তো আমায় ‘আমাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই’ বোর্ড গলায় ঝুলিয়ে ঘুরতে হবে।
বুঝলাম, এ ব্যাপারে কিছু বলতে চান না। সিনেমার প্রসঙ্গে আসি তা হলে।
(হেসে) সেই ভাল। ‘ইডিয়ট’ সিনেমার ‘হেব্বি লাগছে’ গানটার ভিডিও ক্লিপ তো এখন সবার মোবাইলে ঘুরছে। নাচটা শিখলেন কোথায়?
সত্যিটা হল, আমি সিনেমায় আসার আগে কোথাও নাচ শিখিনি। আসলে ওই ‘ওয়ান-টু চা-চা-চা’ করে অ্যারোবিক টাইপ নাচ শেখা আমার ভীষণ বোরিং লাগে। ছবির শু্যটিংয়ের জন্যই প্রথম কোনও ডান্স টিচারের কাছে যাই। নাচের টিচার বলতে তাই বিভাস চৌধুরী, টুবান, বাবা যাদব। সাউথ সিটিতে একদিন একজন বললেন আমার নাচ নাকি ভাল লেগেছে। হয়তো সিনেমটা দেখেননি, শুধু ভিডিও ক্লিপ দেখেছেন টিভিতে। তবে সাউথ সিটির পাবলিকের থেকে কমেন্ট পেলে বেশ লাগে।
আপনার পরের সিনেমা ‘কানামাছি’ তো পুরোপুরি মাল্টিপ্লেক্স দর্শকের কথা মাথায় রেখে?
একদম। সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। একটা কমার্শিয়াল ছবিকে মাল্টিপ্লেক্স দর্শকের মনে ধরানো। তবে স্টোরি লাইন তো ইয়ুথ কেন্দ্রিক। কলেজ-ইলেকশন-সংবাদ মাধ্যম-রাজনীতি। মনে হয় জেন ওয়াইয়ের ভালই লাগবে। (বলতে বলতে টেবিলে পড়ে থাকা ট্যাবে ‘কানামাছি’র ট্রেলারটা চালিয়ে দিলেন)। সিনেমায় শ্রাবন্তী আর আমি কিন্তু আনন্দবাজারের সাংবাদিক।
জীবনের শুরুতেই ‘বিগ ক্লাব’-এ ঢুকে পড়া। রাজীব-রাজ চক্রবর্তীকে পরিচালক হিসেবে পাওয়া, শ্রাবন্তী-আবীর চট্টোপাধ্যায়ের কো-স্টার। প্রথম প্রথম ভয় লাগেনি?
ভয় একেবারে পাইনি বললে মিথ্যে বলা হবে। তবে ওঁরাই সে ভয়টা কাটিয়ে দিয়েছিলেন। সবাই মিলে হেব্বি মজা হত শু্যটিংয়ে। তাই আস্তে আস্তে ওই ভয়-মেশানো জড়তাটা কেটে গিয়েছে।
বড় পরিচালকদের সহায়তা পেলেও অভিনেতা হিসাবে তো খাটতে হয়েছে খুব...
তা আর বলতে। অভিনয়ের ওয়ার্কশপ তো ছিলই। তার সঙ্গে জিম-নাচের ক্লাস নিয়ে আমি পুরো ফ্ল্যাট। আর ছিল ডায়েট। খাবারে শুধুই সেদ্ধ। টেস্টফুল বলতে দিনে বারোটা ডিম। যে দিন সসেজ বা বেকন খাওয়ার অনুমতি পেতাম, সোজা চলে যেতাম তাজে। এমন গোগ্রাসে খেতাম আশেপাশের লোকেরা হাঁ করে দেখত।
এই মুহূর্তে তো শু্যটিং নেই। এখন সময় কাটাচ্ছেন কী করে?
আমি আসলে বেশ অলস টাইপের। কাজ না থাকলে বাড়ির বাইরে বেরোতে জ্বর আসে। শু্যটিং না থাকলে বাড়িতেই ভিডিও গেম খেলি। (হাজরা রোডের ফ্ল্যাটে ঢুকেই দেখা গিয়েছিল কম্পিউটারে পজ করা আছে ‘কল অব ডিউটি’) আর ইউ টিউবে সিনেমা। নতুন যোগ হয়েছে টুইট করা (@AnkushLoveUAll)।
শেষ প্রশ্ন, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্য সদস্যদের থেকে কেমন ওয়েলকাম পেলেন?
এক কথায় বলতে গেলে, আই অ্যাম স্পিচলেস। সিনেমায় আসার আগে থেকেই আমি জিৎ-দার ফ্যান। ‘ইডিয়ট’ রিলিজের আগে ফোন পেয়ে বুঝলাম মানুষ হিসাবেও কত বড় ও। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে গল্প করল। ‘সাথী’ রিলিজের সময় কেমন নার্ভাস ছিল সেটা বলল। টেনশন অনেক কমে গেল ওই ফোনের পর।
দেখুন, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তো একটা পরিবার। সব সিনেমা ভাল চললে তবেই ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করবে। আর ছবি সুপারহিট হবে কি না সেটা তো আর আগে থেকে বলা যায় না। হয়ে যায়। তাই হোপ ফর দ্য বেস্ট।
|
সিভি |
• বয়স: ২৫
• স্টেটাস: সিঙ্গল
• ভাইটাল স্ট্যাটস: চেস্ট-৪২, কোমর-৩২, কাঁধ-১৯.৫
• জিম: আলিপুরের গোল্ডস্ জিম। সপ্তাহে পাঁচ দিন। দু’ ঘণ্টা করে।
• প্রিয় খাবার: ব্রেকফাস্টে চিকেন সসেজ। লাঞ্চ বা ডিনারে চাইনিজ
• প্রিয় খেলা: ক্রিকেট
• প্রিয় টিভি শো: কমেডি সার্কাস
• প্রিয় অভিনেতা: শাহরুখ খান
• টাইম পাস: ভিডিও গেম, ছবি আঁকা
• সিনেমা করেছেন: দু’টো। একটা হিট। |
|
|
|
|
|
|