সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে ওঁরা-আমরা বিভাজনের অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে। মূলত মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুরে কংগ্রেস ও বাম জনপ্রতিনিধিরা ওই অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, চার দিন মালদহে ঘাঁটি গেড়ে দুই জেলায় অন্তত ১৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনের কর্মসূচি রূপায়ণ করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। অথচ যে সব এলাকায় অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেখানকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানায়নি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর।
সিপিএম পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু, মালদহের কংগ্রেস নেতা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী অথবা হরিশ্চন্দ্রপুরের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক তজমূল হোসেন একই সুরে বলেছেন, “উন্নয়ন নিয়ে এমন ওঁরা-আমরা বিভাজন মানুষ মেনে নেবেন না।” তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে এমন রাজনীতি হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতি দেখেন না। তাঁর যুক্তি, “আমরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোথায় কোন দল ক্ষমতায় রয়েছে তা দেখি না। সে জন্য মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এত প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে, যে কাজ ৩৪ বছরের বাম শাসনে হয়নি। তবে সব অনুষ্ঠানে সকলকে ডাকা সম্ভব হয়নি। যেখানে যাঁকে ডাকা দরকার, তাঁকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। বিভাজনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার পরে এলাকায় কাজ শুরু হওয়ায় মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দারাও খুশি বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী দাবি করেছেন।
যদিও কংগ্রেস-সিপিএম এবং অন্য বামশরিক দলের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বলে খবর আছে পুলিশ ও গোয়েন্দার কাছে। রবিবার মালদহে গৌতমবাবুর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভও দেখান কংগ্রেসের কর্মীরা। তাই সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর নিরাপত্তায় আরও পুলিশ মোতায়েন করেছে প্রশাসন। মালদহ প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি অনুষ্ঠানেও বাড়তি পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর মালদহে পৌঁছেছেন। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০টি রাস্তার কাজের সূচনা করবেন। সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরে ৪ রাস্তা, বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ১৬০ কিলো ভোল্টের জেনারেটরের উদ্বোধন করেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “বাম জমানায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের অনুমোদিত ৩৬১টি প্রকল্পের কাজ হয়নি। ১৮ মাসের মধ্যে সে সব কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। ৪১টি প্রকল্পের কাজ বাকি।”
এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মুর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের প্রকল্পের বকেয়া কাজ করার জন্য গৌতমবাবুর দফতর থেকে অর্থ অনুমোদন করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, কয়েকটি ক্ষেত্রে এলাকার রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর জেলা পরিষদকে না-জানিয়েই নিয়েছে বলে সভাধিপতির অভিযোগ। মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী জানান, অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের টাকয় কাজ হচ্ছে। সে তথ্য আড়াল করতেই কাউকে ডাকা হচ্ছে না। এর জবাব মালদহের মানুষ দেবেন।” |