নির্দিষ্ট কোনও আদালত বা বিচারপতি সম্পর্কে নয়, সামগ্রিক ভাবে সমাজের দুর্নীতি নিয়ে বলার জন্য কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালত অবমাননার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হবে, প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এ বিষয়ে আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য শুনলেও বেঞ্চ এ দিন রায় দেয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে এই মামলায় আদালতে হাজির হতে হবে কি না তা-ও স্পষ্ট হয়নি এ দিন। তবে আদালত অবমাননার অন্য এক মামলায় মমতার মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য বেচারাম মান্নাকে আজ মঙ্গলবার এই ডিভিশন বেঞ্চের সামনেই হাজির হতে হবে।
সম্প্রতি সিঙ্গুরে এক জনসভায় বেচারামবাবু অভিযোগ এনেছিলেন, টাটা আর সিপিএম তাদের অনুগত বিচারককে দিয়ে রাজ্য সরকারকে (সিঙ্গুর) মামলায় হারিয়ে দিয়েছে। এই মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল জারি করে তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি প্রতাপ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। বেচারামবাবুকে আদালতে এসে বলতে হবে, ওই মন্তব্যের জন্য কেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা আবেদন নিয়ে শুনানির সময় ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন মন্তব্য করে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে নির্দিষ্ট কোনও আদালত বা বিচারপতির সম্পর্কে বলা হয়নি। তিনি দুর্নীতি বিষয়ে বলতে গিয়ে ওই কথা বলেছেন। সমাজে যে দুর্নীতি
রয়েছে সেটা সত্য। বিচার ব্যবস্থা সমাজের বাইরে নয়। এ ক্ষেত্রে আদালতের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হবে কেন?
জবাবে আবেদনকারীর তরফে বিকাশবাবু দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী সামগ্রিক ভাবে বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, টাকা দিয়ে বিচার কেনা যায়। পুরো বিষয়টি যে তিনি জেনেশুনেই বলেছেন, তা তাঁর বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার। এই মন্তব্যের জন্য তাঁকে জেলে যেতে হতে পারে, এমন কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, কোথায়-কোথায় এমনটা ঘটেছে তা হাইকোর্টকে জানানো। না হলে সমাজে তাঁর বক্তব্যের প্রভাব পড়বে। বিচার ব্যবস্থার উপরে আস্থা কমবে সাধারণ মানুষের।
এই মামলাটি এ পর্যন্ত হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে ঘুরেছে। প্রথমে বিচারপতি কল্যাণজোতি সেনগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে এর শুনানি হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার আগেই বিচারপতি সেনগুপ্ত উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে বদলি হয়ে যান। এর পরে তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি প্রতাপ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য গঠনমূলক সমালোচনা না উদ্দেশ্যমূলক কুৎসা প্রচার, তা খতিয়ে দেখছিল ওই
বেঞ্চ। কিন্তু শুনানির মাঝপথেই অরুণ মিশ্র প্রধান বিচারপতি হন।
মামলাটি যায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ এর আগে দু’টি ইংরেজি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের প্রতিলিপি ও দু’টি বাংলা সংবাদ চ্যানেলের খবরের সিডি জমা নিয়েছিল। সবই রয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। চারটি সংবাদমাধ্যমই তাদের খবরের সত্যতা নিয়ে হলফনামা দিয়েছে। বেচারামবাবুর মামলাটির ক্ষেত্রেও টিভি চ্যানেলের সিডি দেখেছে হাইকোর্ট। |