উত্তর মালদহের বিহার সীমানার কুশিধা, তুলসীহাটা থেকে কনুয়া, চাঁচল, সামসি গাজলের ৬৫ কিমি রাজ্য সড়ক ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। গাজোল থেকে কুশিধা রাজ্য সড়কের দু’পাশে অন্তত সতেরোখানা হাইস্কুল, ২১টি প্রাথমিক স্কুল, ১২টি হাইমাদ্রাসা, ৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ছ’খানা বড়বাজার, চারটি সাপ্তাহিক হাট, বিদ্যুৎ দফতরের আটটিরও বেশি অফিস, দুটি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ডিপো, ছয় খানা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং কয়েকশো দোকানপাট সত্ত্বেও সড়কের মরণখাদ সংস্কারের চেষ্টাই বিগত বছরগুলোতে চোখে পড়েনি। ভাঙা রাস্তার ঐতিহ্য এ অঞ্চলে বরাবরের। অতীতে মালদহ-গাজোল জাতীয় সড়কে বাস মালিকরা বাস ধর্মঘট করেছিলেন বাসের টায়ার, স্প্রিং পাতি, যন্ত্রপাতি রক্ষার জন্য। এ সব অঞ্চলে যে সব বাস চলাচল করে তাদের বয়স ২৫-৩০ বছরেরও বেশি। বাস মালিকদের আশঙ্কা, চাঁচল-সামসি রাস্তায় বাস দু’বার চালালেই ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যাবে। অতএব বাস না চালানোই তাঁরা শ্রেয় মনে করছেন।
সামনি স্টেশনে ঢুকবার মুখেই অন্তত ৮টা বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। সেখানকার কালো ঘোলা জল দিয়ে পার হতে গেলে বুদ্ধির অধিকারী হতে হবে। কিন্তু এগুলো কথার কথা। এক সামসী থেকে চাঁচলের রাজ্য সড়কের ছোট বড়, মাঝারি গর্তের সংখ্যা আটচল্লিশটিরও বেশি। কুশিধা সীমান্ত থেকে গাজোল পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা আড়াইশো ছাড়িয়ে যাবে। এত যেখানে গর্তের মালা, সেটা রাজ্য সড়ক থাকে কী করে? যেগুলো রাজ্য স্তরের গর্ত বা ওই ধরনের কোনও অভিধা দেওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মাটিগাড়া বাগডোগরা এন এইচ-৩১-এর বিশাল গর্তের সাইজ দেখে জনৈক বাসযাত্রী জাতীয় সড়ককে জাতীয় খাল অভিধা দিয়েছিলেন। |
তাই খানাখন্দময় এই রাস্তা দিয়েই তুলসীহাটার গরিব গুর্বোদের হাঁটাচলা, কৃষিপণ্য বাজারজাত করা, রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে মারা যাওয়ার ঘটনা তো আকছার। কিন্তু সেটা আর বড় কথা কী?
কিন্তু সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনারণ্যে সে কথা চাপা পড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি বুনিয়াদপুরে ওয়াগন কারখানা উদ্বোধনের পরে জাতীয় সড়ক ধরে অর্থাৎ বাগডোগরা দিয়েই মমতা দেবীর জলপাইগুড়িতে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় সড়ক এতটাই বেহাল যে মুখ্যমন্ত্রীকে ট্রেনে জলপাইগুড়ি পৌঁছতে হয়েছে। পূর্বতন রাজামন্ত্রীরা যখন জেলা সফরে বেরোতেন, তখন রাস্তায় তাপ্পি মারা হত। এখন আর তাপ্পির স্তরেও নেই রাস্তাঘাট। মুখ্যমন্ত্রীই আর সে পথে যাচ্ছেন না।
আর আমআদমি কী করবে? সে উত্তরটা সম্ভবত ঈশ্বর দিতে পারবেন।
শান্তনু বসু।
চাঁচল কলেজ, মালদহ
|