মালিকদের হিসেব মানলে ভাড়া ‘কমে যাবে’ ট্যাক্সির |
বেশি দূরত্বের জন্য যাত্রীদের হয়তো তুলনামূলক ভাবে কম ভাড়াই দিতে হত। কিন্তু তার মধ্যেও ‘অভিসন্ধি’ দেখল রাজ্য সরকার। সাধারণত বেশি দূরত্বে যাওয়ার জন্যই ট্যাক্সি ভাড়া করা হয়। তাই ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির প্রস্তাবিত ফর্মুলায় হয়তো লাভবান হতেন যাত্রীরাই।
খুচরো-বিতর্ক থেকে যাত্রী প্রত্যাখ্যান, ট্যাক্সি নিয়ে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের কথা মাথায় রেখেই নতুন ভাড়া বিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছিল ট্যাক্সিমালিক এবং চালক সংগঠনগুলি। কিন্তু অভিযোগ, সে সব গ্রাহ্য না করেই নতুন ভাড়া ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে, ভাড়া বাড়লেও তাতে নতুন করে সমস্যা হচ্ছে যাত্রীদের।
ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলির নেতাদের বক্তব্য, যে ভাবে প্রতি ২০০ মিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, সমস্যার শুরু সেখান থেকেই। ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতাদের দাবি, আগে যে ভাবে মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করা হত, তা এক রেখে তার সঙ্গে দশ টাকা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। এর ফলে, প্রথম চার কিলোমিটার পর্যন্ত এখনকার চেয়ে ভাড়া বেশি হলেও বেশি দূরত্বের জন্য যাত্রীদের কিন্তু এখনকার থেকে কম ভাড়াই দিতে হত। |
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহ বলেন, “যাত্রী-প্রত্যাখ্যান নিয়ে তত দিন অভিযোগ ভাল লাগত, যত দিন ভাড়া বাড়েনি। এখন আর তা ভাল লাগছে না। তাই আমরা এটি বন্ধ করার চেষ্টা করছি।” তিনি বলেন, “যে ভাবে ভাড়া বেড়েছে, তাতে খুচরো নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তার বদলে এখনকার মিটারের ভাড়ার দ্বিগুণের সঙ্গে যে দু’টাকা বাড়ত, আমরা তা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তাতে কম দূরত্বে ভাড়া বেশি হলেও বেশি দূরত্বে ভাড়া কম হত। সাধারণত যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের ঘটনা কম দূরত্বের ক্ষেত্রেই বেশি হয়। ভাড়া বেশি থাকায় সেটা খানিকটা এড়ানো যেত।”
আইএনটিইউসি-র কলকাতা ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল ঘোষের দাবি, সরকারের অযথা তাড়াহুড়োর কারণেই সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল। আমরা এই সব প্রস্তাব দিলেও তা মানা হয়নি।” তাঁর দাবি, “সরকার হুট করে ভাড়া বাড়িয়ে দিল। পর দিন থেকেই তা চালুও করে দেওয়া হল। তাতে সমস্যা আরও জটিল হয়ে গেল।” বর্ধিত ভাড়ায় ট্যাক্সি মালিকেরা লাভবান হচ্ছেন, এ কথা জানিয়েও বিমলবাবুর দাবি, “সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের কারণে ভাড়া নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। সরকারের উচিত ছিল, হয় সময় নিয়ে মিটার পরিবর্তন করে নতুন ভাড়া চালু করা, না হয় আমাদের সূত্র মেনে ভাড়া দ্বিগুণ রেখে সঙ্গে কিছু টাকা যোগ করার ফর্মুলায় যাওয়া। কিন্তু সরকার কোনওটিই করেনি।”
ট্যাক্সিমালিকদের এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “ট্যাক্সিমালিকেরা তো নিজেরা ভাড়া ঠিক করতে পারেন না। সরকার সেটা ঠিক করে। তবে সরকার তাঁদের প্রস্তাবের কথা মাথায় রেখেই নতুন ভাড়া-বিন্যাস ঘোষণা করেছে। এখন তাঁদের গলায় উল্টো সুর। এ সবই অভিসন্ধিমূলক।” |