বন্ধ জঙ্গলমহলের বাড়তি বরাদ্দ
রেশনে চালের আকাল
রেশনে চালের জোগান নেই। ফলে আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জঙ্গলমহলের বাড়তি বরাদ্দ। চলতি সপ্তাহে সঙ্কট এতটাই তীব্র যে এক ছটাক চালও মিলবে কিনা না সংশয়।
চালের সঙ্কট মেটাতে তড়িঘড়ি লেভি সংগ্রহে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু লেভির চাল এফসিআইকে দিতে হবে, এই নির্দেশ দিয়ে নিজেদের তৈরি নিয়মের গেরোয় পড়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ, এফসিআইয়ের গুদাম গমে ভর্তি থাকায় তারা চাল নিতে পারছে না। তাছাড়া, গুদাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের চালকল থেকে এফসিআই চাল নিতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬৫টির মধ্যে ১৯টি চালকল আর পূর্ব মেদিনীপুরের ৩৪টি চালকল ৪০ কিলোমিটার দূরে। ফলে, সেখান থেকে এফসিআই চাল নেবে না। এই কারণে ওই চালগুলিও ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অভাবী বিক্রি বাড়বে বলেই আশঙ্কা। ধান কিনে চাল করে এফসিআইয়ের গুদামে রাখা আবশ্যক করায় ধান কেনার সিদ্ধান্তই এর জন্য দায়ী। আর্থিক অটনের প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ সরকারকে সরাসরি চাল কিনতে হলে কেজি প্রতি প্রায় ২১ টাকা খরচ হত। কিন্তু এফসিআই থেকে চাল নিতে হলে কেজি প্রতি দিতে হবে মাত্র ৫ টাকা ১৫ পয়সা।
মেদিনীপুর রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপস রায় বলেন, “এফসিআইয়ের গুদাম খালি না থাকা ও ৪০ কিলোমিটার দূরের চালকল থেকে চাল না নেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে আমরাও ধান কিনতে পারছি না।” কিন্তু কেন এই নিয়ম? এফসিআইয়ের ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) তথা দুই মেদিনীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এরিয়া ম্যানেজার অরবিন্দকুমার পাঠক বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরিবহণ খরচ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা ধান নেব। কিন্তু ৪০ কিলোমিটারের বাইরে থাকা চালকলগুলির ক্ষেত্রে এখনই পরিবহণ খরচ দিতে পারব না। তাঁরা ধান বিক্রি করতে চাইলে নিতে পারি, যদি সরকার ৪০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রেও পরিবহণ খরচ দেয়। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।” রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অবশ্য বক্তব্য, “এফসিআই আমাদের কথা দিয়েছিল চাল কিনবে। এখন কেন এই কথা বলছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”
জেলায় রেশনে চালের সঙ্কট বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৬১ লক্ষ রেশন কার্ড রয়েছে। তার মধ্যে জঙ্গলমহলে বিপিএল তালিকায় থাকা ইউনিটের সংখ্যা ১৪ লক্ষ। আর জঙ্গলমহলের বাইরে থাকা বিপিএলের সংখ্যা ১১ লক্ষ। এছাড়াও অন্ত্যোদয় যোজনায় রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ ও অন্নপূর্ণা যোজনায় সাড়ে ৩ হাজার ইউনিট। আগে সবাইকে চাল দিতে সপ্তাহে ২৯০০ মেট্রিক টন চাল লাগত। তখন সব বিপিএল ইউনিট (প্রাপ্তবয়স্ক এক ইউনিট, অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্ধেক) ২ টাকা কেজি দরে ১ কেজি চাল পেতেন। পরে জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকের ক্ষেত্রে চালের পরিমাণ বাড়িয়ে ২ কেজি করা হয়েছে। ফলে, জেলায় চালের চাহিদা ২৯০০ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩০০ টনে। এই বাড়তি ১৪০০ মেট্রিক টন আবার এফসিআই গুদাম থেকেই নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এফসিআইয়ের যদি চাল না থাকে? সেই সমস্যার জেরেই গত ৫ সপ্তাহ ধরে জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকের বিপিএল মানুষ বাড়তি বরাদ্দ পাচ্ছেন না। অর্থাৎ তাঁরা ১ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। তবে চালের যা সঙ্কট তাতে চলতি সপ্তাহে কাউকেই চাল দেওয়া যাবে না বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। ধান কিনে চাল করে সঙ্কট মেটানোর আশায় ছিল প্রশাসন। কিন্তু ধান কেনার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা হচ্ছে না। গত ১৮ দিনে জেলায় ধান কিনে চাল করা হয়েছে মাত্র ২৪১৯ মেট্রিক টন। অথচ জেলায় রেশনের জন্যই সপ্তাহে ৪৩০০ মেট্রিক টন চাল লাগে।
রেশনে চালের সঙ্কট আগামী দিনে কতটা তীব্র হয়, সেই আশঙ্কাতেই রয়েছে জেলার দরিদ্র পরিবারগুলি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.