সম্পাদক সমীপেষু...
‘আমিও কথা রাখিনি’
২০০০ সাল। বইমেলা প্রাঙ্গণ। জমজমাট সন্ধ্যা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হেঁটে আসছেন, এক দল অনুরাগীর পুরোভাগে। উল্টো দিক থেকে আমি। পাশে স্ত্রী। আমি আগাগোড়াই তাকিয়ে তাঁর দিকে। কাছে এসে পড়তেই তাঁর চোখ পড়ল আমার উপর। আমাকে অবাক করে মৃদু হাসলেন তিনি। আমিও পাল্টা হেসে বললাম, ‘ভাল আছেন?’ বললেন, ‘হ্যা।ঁ’ তিনি এগিয়ে গেলেন তাঁকে ঘিরে থাকা ভক্তবৃন্দের জটলা নিয়ে। আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। হতবাক আমার স্ত্রীও। বলল, ‘আলাপ আছে না কি?’
‘না।’
‘হাসলেন যে?’
তখনও পর্যন্ত আমার সম্বল দুর্গোৎসবের সুভেনিরে বিজ্ঞাপন-চাপা একটা কবিতা, আর স্কুল ম্যাগাজিনে প্রাক্তন ছাত্রের দেড় পাতার গল্প।
২০১২ সাল। ৪ মার্চ। ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন, ‘পারিজাত’ অ্যাপার্টমেন্ট। বৈঠকখানায় নিজের আসনে সুনীলদা, চার পাশে অনেক লোকের বসার ব্যবস্থা। আছেনও বেশ কয়েক জন। আছেন কবি শ্রীজাত সস্ত্রীক। আমি আমার প্রথম উপন্যাস নুন চা-র একটা কপি তাঁর হাতে দিয়ে বললাম, ‘এ বার বইমেলায় বেরিয়েছে।’ বইটা হাতে নিয়ে প্রচ্ছদে চোখ বোলালেন। তার পর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “বিমল লামা তোমার ছদ্মনাম?’ আমি হেসে বললাম, ‘না, আমি খাঁটি গোর্খা।’ চোখেমুখে চমৎকৃত ভাব ফুটিয়ে বললেন, ‘তা হলে তো একটা নতুন ব্যাপার হয়েছে বলতে হবে।’
তার পর ফোনে কথা হয়েছে বেশ কয়েক বার। তিনি জানিয়েছেন, বইটি তিনি পড়েছেন এবং তাঁর বেশ ভাল লেগেছে। আমি ফোনেই প্রণাম জানিয়েছি তাঁকে। তিনি জানিয়েছেন আরও ভাল লেখার আশীর্বাদ।
১ অগস্ট, ২০১২। আনন্দবাজার পত্রিকা। সুনীলদা লিখলেন ‘উপন্যাসটির ভাষা ও তার চরিত্রের রেখাচিত্রগুলির সংলাপ এতই নিপুণ যে আমার এখনও একটুখানি খটকা রয়ে গেছে লেখক কি সত্যিই আমাদের পাহাড় অঞ্চলের নেপালি নাকি কোনও বাঙালি লেখকের ছদ্মনাম?’
ফোন করলাম, ‘সুনীলদা, খটকা কি এখনও সত্যিই রয়েছে?’ বললেন, ‘তা একটু তো রয়েইছে।’ বললাম, ‘আমি কী করে আপনার খটকা দূর করি?’ হেসে বললেন, ‘এক বার এসো আমার বাড়ি। খটকা দূর করে দিয়ে যাও।’ বললাম, ‘নিশ্চয়ই যাব।’
২৩ অক্টোবর, ২০১২। মণিকর্ণিকা ঘাট। বারাণসী। ভোর ভোর বেরিয়েছি হোটেল ছেড়ে। যাব দশাশ্বমেধ ঘাট। কী ভেবে রিকশাওয়ালাকে বললাম, ‘মণিকর্ণিকা চলো।’
গঙ্গার ওপরে তখনও রাতের হালকা সর ভাসছে। ঘাটে বিরাট বিরাট আগুনের কুণ্ড জ্বলছে দাউ দাউ করে। প্রতিটা অগ্নিকুণ্ডের ভেতর এক একজন মানুষ। বিষণ্ণ হয়ে যায় মন। বাঁধানো সিঁড়ির উপর বসে তাকিয়ে থাকি আগুনের দিকে। কত মুখ ভেসে ওঠে ঝাপসা চোখে। বাবা-মা। তরুণী এক ভাইঝি। বেশ কয়েক জন বন্ধু। ছলছল করে ওঠে গঙ্গার জল। মৃদু হাওয়া বয় দক্ষিণ দিকে। সূর্য ওঠে কোথায় অট্টালিকার পিছনে। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। কলকাতা থেকে। হ্যালো, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নেই!
সটান উঠে দাঁড়িয়ে পড়ি পাথুরে সিঁড়ির উপর। আগুনের দিকে পিঠ করে বলি, ‘সে কী! আমার যে দেখা করার কথা ছিল সুনীলদার সঙ্গে! ভেবেছিলাম পুজোর পর বিজয়া...’।
অনেক মানুষ কলরব করতে করতে নেমে আসে ঘাটের দিকে। তাদের কোলাহলে আর কোনও কথা শুনতে পাই না। আমার চার পাশ দিয়ে তারা নেমে যায় আগুনগুলোর দিকে। বহন করে নিয়ে আরেক জন মানুষকে। ফুল-চন্দন-ধূপ-ধুনো নতুন পট্টবস্ত্রে সাজিয়ে।
আমি আগুনের দিকে ফিরে দাঁড়াই। আর একটা নতুন আগুন জ্বালানোর উদ্যোগ করছে মানুষগুলো। তাদেরই প্রিয় এক জন মানুষের জন্য। সে অপেক্ষা করে আছে সেজেগুজে। আমি তার মুখ দেখতে পাই না দূর থেকে। মনে হয় তার চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। চশমার নীচে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আছে। তবু যেন সজাগ আছে তার শান্ত চোখ। অনন্তের প্রসারে স্নিগ্ধ। মগ্ন। নির্লিপ্ত। বিষণ্ণ বয়স বসে আছে তার দুই গালে। তবুও একমাথা চুল উদগ্রীব হয়ে আছে চিরতারুণ্যের কৌতূহলে। তাঁর প্রশস্ত চিবুকের দৃঢ়তায় তখনও সকলকে অতিক্রম করে যাওয়ার অঙ্গীকার।
আমিও নেমে যাই জলের দিকে। পাথরের বিশাল ধাপগুলো একে একে পেরিয়ে। দু’হাতে আঁজলা করে তুলি গঙ্গার জল। গঙ্গার মধ্যেই তাকে আবার ভাসিয়ে দিই ধীরে ধীরে। মনে মনে বলি, ‘সুনীলদা, ক্ষমা করো। আমিও কথা রাখিনি।’
পরীক্ষার চাপ
পূর‌্বে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে প্রায় এক মাস লাগত। কেননা, উচ্চমাধ্যমিকে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ আছে। অনেকগুলি বিষয় আছে। ২০১৩-র পরীক্ষা-সূচি ২০১২-র পরীক্ষার পরেই তৈরি করা হয়েছে। তাতে সময় কমিয়ে তেরো দিনে নামানো হয়েছে। হঠাৎ করে তেরো দিনে না-নামিয়ে প্রথম প্রচেষ্টায় কুড়ি দিনে, তার পরের বছর পনেরো এবং তার পর তেরো দিনে আনা যেত। এতে স্কুলগুলো চাপে পড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, যে সিলেবাস চলছে এ বছরই সেটির শেষ বছর। সুতরাং পরীক্ষা চলাকালীন প্রস্তুতির জন্য ছাত্রছাত্রীরা একটু বেশি সময় পেলে ক্ষতি কী! ২০১৩-র রুটিন দেখে মনে হচ্ছে, কলাবিভাগের ছাত্রছাত্রীরা একটু চাপে পড়তে পারে। এতে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক সকলেই চিন্তিত।
পরীক্ষাসূচিতে দেখা যাচ্ছে, ১৩ মার্চ বাংলা সাহিত্যের পরীক্ষা। ১৫ মার্চ ইংরেজি ও পরিবেশ বিজ্ঞানের পরীক্ষা। এর পরের দিনেই অর্থাৎ ১৬ মার্চ সংস্কৃত পরীক্ষা। ১৮ মার্চ শিক্ষা বিজ্ঞান ও ২০ মার্চ দর্শনের পরীক্ষা। পূর্বে একটু প্রস্তুতির সময় থাকত।
২০১৩-র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সূচিতে যেন তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা শেষ করার প্রবণতা দেখা গেল। এতে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফলের উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধিকর্তা, মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া ও শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করি, এ ব্যাপারে কিছু করা গেলে, করুন। অন্তত ইংরেজি ও সংস্কৃত পরীক্ষার মাঝে এক দিন প্রস্তুতির জন্য রাখুন অর্থাৎ এক দিন ছুটি রাখুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.