বিনোদন নাটক-নাচগানের টাকায় বন্দিরা
পড়ছেন, পড়াচ্ছেন সন্তানদেরও

লৌহকপাটের আড়ালে শারীরিক শ্রমের জন্য যে-পারিশ্রমিক জোটে, বন্দি সেটা পান শাস্তির মেয়াদ শেষে।
আর নাটক, নাচ, গান, আবৃত্তির মতো চারুকলার চর্চা করে বন্দিরা যা রোজগার করেন, সেটা দণ্ডভোগের মেয়াদের মধ্যেই কাজে লাগছে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনায় বা বিয়েতে। এমনকী নিজেদের লেখাপড়াতেও।
চারুকলার চর্চায় বন্দিদের মানসমুক্তি নিয়ে একটি চলচ্চিত্র সমাদৃত হয়েছে। জেলে বন্দিদের অবসাদ কমাতে এবং চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে শুরু করা হয়েছিল নাটক, নাচ, গান, আবৃত্তির তালিম, চিত্রকলার পাঠ। নাটক, নাচ, গানের অনুষ্ঠান করেই রোজগার করছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলের বন্দিরা। তাঁদের উপার্জনে তৈরি তহবিলে জমে গিয়েছে ৪৪ লক্ষ টাকা। সেই টাকাই খরচ হচ্ছে বন্দিদের মেয়ের বিয়ে, সন্তানের পড়াশোনায়। যে-সব বন্দি পড়াশোনা করতে চান, তাঁদেরও সাহায্য করা হচ্ছে ওই তহবিল থেকে।
রাজ্যের কারা দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে বহরমপুর জেলে বন্দিদের মানসিক অবসাদ কাটাতে প্রথম শুরু হয় নাট্যকর্মশালা। মাসখানেকের মধ্যেই জেলের গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই নাটক প্রকাশ্যে মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা নেয় কারা দফতর। বহরমপুর থেকে ‘তাসের দেশ’ যখন জেলের বাইরে সাফল্য পেল, তখন কারা দফতরের কর্তারা এই পরিকল্পনাকে অন্য জেলেও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন। একে একে রাজ্যের বিভিন্ন জেলে বন্দিদের নিয়ে তৈরি হল নাটকের দল, গানের দল, আবৃত্তির দল। হয়েছে চিত্রকলার কর্মশালাও। প্রদর্শিত হয়েছে বন্দিদের চিত্রকলা। জেলের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রায় সব দলই দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করছে। অনুষ্ঠান বাবদ পারিশ্রমিকের টাকা জমা পড়ছে তহবিলে।
ওই তহবিলের সাহায্যে রাজ্যের ৫৭টি জেলের বন্দিরা আরও বেশি করে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন বলে কারা দফতরের দাবি। কী ভাবে?
কারা দফতর সূত্রের খবর, জেলে অনেক বন্দিই পড়াশোনা করতে চান। কিন্তু এত দিন পরীক্ষায় বসার টাকা সংশ্লিষ্ট বন্দিকেই জোগাড় করতে হত কিংবা কারা দফতরে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে টাকার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত। নতুন ওই তহবিল তৈরির পরে আর সেই সমস্যা নেই। ফলে বেশি বন্দি পড়াশোনা করতে বা পরীক্ষা দিতে পারছেন।
বন্দিদের মধ্যে কতটা বেড়েছে লেখাপড়ার চল?
কারা দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ সালে জেল থেকে মাত্র দু’জন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন। ২০১২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ১০৭। উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছেন ২০ জন। আট জন স্নাতক পরীক্ষায় বসেছেন। ওই সব বন্দির লেখাপড়া, বইপত্র, পরীক্ষার ফি-র টাকা এসেছে ওই তহবিল থেকে। এ ছাড়াও বন্দিদের সন্তানদের পড়াশোনা বা বিয়ে কিংবা বাড়ির অন্য কোনও অনুষ্ঠানে ওই তহবিল থেকেই পাঁচ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।
কারা দফতরের এই বন্দি কল্যাণ তহবিল বন্দিদের আত্মসম্মান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাজে লাগায় খুশি এই কর্মকাণ্ডের প্রধান উদ্যোক্তা, প্রাক্তন আইজি (কারা) বংশীধর শর্মা। তিনি জানান, সাধারণত যে এক বার দুষ্কর্ম করে, তার মধ্যে বারবার অপরাধ করার প্রবণতা দেখা যায়। সেই অপরাধমূলক মানসিকতার পরিবর্তনের জন্যই পরীক্ষামূলক ভাবে গান, নাটক ইত্যাদিতে বন্দিদের যুক্ত করার চেষ্টা শুরু হয়। পরে দেখা গেল, এর থেকে টাকা রোজগারও হচ্ছে। শর্মা বলেন, “এতে বন্দিদের মানসিকতায় দু’ধরনের পরিবর্তন আসছে।
• ওরা সৎ উপায়ে টাকা রোজগার করতে পারছে, যা ওদেরই কাজে লাগছে।
• ওদের আত্মসম্মান বাড়ছে।”
প্রাক্তন আইজি-র সুর বতর্মান আইজি (কারা) রণবীর কুমারের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করার জন্য ওরা যে-পারিশ্রমিক পায়, তা জমা পড়ে এই তহবিলে। এটা বন্দিদের জন্যই তৈরি হয়েছে। ফলে বন্দিদের নানা কাজে টাকার দরকার পড়লে আর সরকারি অর্থের উপরে নির্ভর করতে হয় না।” তিনি জানান, কারা দফতরের তহবিল দেখার জন্য নজরদার কমিটি আছে। বন্দিদের দরকার অনুযায়ী তহবিল থেকে টাকার ব্যবস্থা করে তারাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.