অতিথি-অভ্যাগতদের অধিকাংশের বয়স পাঁচের কম। বাবা-মায়ের কোলে চেপে এসে দুধের বোতল, জলের বোতল, ন্যাপি, ঝুমঝুমির লটবহর নিয়ে শনিবার দুপুরে তারা টাউন হলে চাঁদের হাট বসিয়ে দিয়েছে। এক-দু’জন নয়, প্রায় পাঁচশো খুদের দাপাদাপি, কান্নাকাটি, লুটোপুটি আর খিলখিল হাসিতে টাউন হলের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে ঘন ঘন। দক্ষিণ কলকাতার একটি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা ক্লিনিকের আয়োজনে টাউন হলে এই অন্য রকম দুপুর। ওই ক্লিনিকেই গত পাঁচ বছরে সাফল্যের সঙ্গে চিকিৎসা করে এক হাজার দম্পতির কোলে সন্তান তুলে দেওয়া গিয়েছে। হাজারতম শিশুর জন্মের পরেই বিষয়টিকে উদ্যাপনের পরিকল্পনা করেন চিকিৎসকেরা।
অনুষ্ঠানে কোন্নগরের সুতপা নন্দীর কোলে বসেছিল বছর দেড়েকের সোহম এবং সোহিনী। এক মিনিট এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’জনের জন্ম। সুতপা শোনালেন, বিয়ের ষোলো বছর পরে যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার গল্প। বিয়ের আট বছর পরে চিকিৎসার মাধ্যমে যমজ মেয়ের জন্ম দিয়েছেন কসবা-র মৌমিতা ভাদুড়ীও। দেড় বছরের মধুরিমা এবং মধুঋতুকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তাঁদের মতো অসংখ্য বাবা-মা এ দিন শোনালেন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা। |
অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগিরের ব্যাখ্যায়, কত জটিল শারীরিক সমস্যার কত সহজ সমাধান হচ্ছে তা জানাতে এই ধরনের অনুষ্ঠান দরকার। তাঁর কথায়, “অনেক বাবা-মায়ের জিনগত ত্রুটির জন্য বার বার বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মায়। বিশেষ ধরনের চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় তাঁদের সুস্থ সন্তান হওয়া সম্ভব। পুরুষ বা স্ত্রী সহবাসে বা সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হলে তাঁকেও সন্তান দেওয়া যায়। পঞ্চাশ বছর বয়সের পরেও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকের সন্তান হচ্ছে।”
একই মত বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী, সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের মতো চিকিৎসকদেরও। বৈদ্যনাথবাবু বলেন, “চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন বদলেছে, তেমনই চিকিৎসার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলেছে। আগে নিজের টেস্ট টিউব বেবি হয়েছে বলে লোকে স্বীকার করত না, আর এখন অবলীলায় তাঁরা সারোগেট মাদারের মাধ্যমে বা দাতার স্পার্মের মাধ্যমে সন্তান নিচ্ছেন।”
সুদর্শনবাবুর আবার বক্তব্য, “এখন এত আধুনিক পদ্ধতিতে এতটা সাফল্যের সঙ্গে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা হচ্ছে যে ইউরোপ-আমেরিকা থেকেও রোগীরা এখানে আসছেন।” |