এম আর বাঙুরে দালালরাজ
সস্তা ওষুধের দোকানে পাঠালেই খুন করব, হুমকির মুখে ডাক্তাররা
রিব রোগীদের কম দামে ওষুধ দেওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের দোকান (ফেয়ার প্রাইস শপ) খোলা হয়েছে। আর সেই দোকান থেকে ওষুধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন পাঠালে ডাক্তারদের সরাসরি খুনের হুমকি দিল হাসপাতালের দালালচক্র!
বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালের ফেয়ার প্রাইস শপে প্রেসক্রিপশন পাঠানো হলে তাঁদের ‘জানে মেরে ফেলা’র হুমকি দিয়েছে দালালরা। গত ৭ ডিসেম্বর আতঙ্কিত চিকিৎসকরা যাদবপুর থানায় এ ব্যাপারে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ১১ ডিসেম্বর ওই ওষুধের দোকানটি খোলার কয়েক দিন আগে থেকেই দালালরা এই হুমকি দেওয়া শুরু করেছে।
বাঙুর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে বিষয়টি সামনে এলেও বিভিন্ন জেলা থেকে এই ধরনের অভিযোগ আসছে স্বাস্থ্য দফতরে। কোনও পরিকল্পনা রূপায়ণের প্রক্রিয়ায় দালালচক্রের এমন সক্রিয় বাধা দানের ঘটনা আগে ঘটেনি বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, এর পিছনে চিকিৎসকদের একাংশের উস্কানি রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।

এই সেই ওষুধের দোকান।—নিজস্ব চিত্র
ওষুধের চড়া দামে রাশ টানতে গত ১১ ডিসেম্বর রাজ্যের মোট ৬টি হাসপাতালে কম দামে ওষুধ বিক্রির দোকান চালু হয়। এর মধ্যে বাঙুর হাসপাতাল অন্যতম। সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই সব দোকানে সরকার নির্ধারিত ১৪২টি ওষুধের পাশাপাশি কিছু অন্য ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা হবে। এ জন্য বাছাই করা ১৫০টি সংস্থার থেকে ওষুধ কিনবে সরকার। ওই সব সংস্থা দামের ক্ষেত্রে বিপুল ছাড় দেয়। ফলে ফেয়ার প্রাইস শপ-গুলি থেকে ওষুধ কিনলে দামের ক্ষেত্রে ৪৮ থেকে ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে এই ধরনের দোকান খোলা হবে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ, ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাংশ এই সরকারি পরিকল্পনা বানচাল করতে সক্রিয়। আর এদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে দালালচক্র। চিকিৎসকদের একাংশও এতে জড়িত বলে অভিযোগ। বাঙুর হাসপাতালের সুপার সন্তোষ রায় জানিয়েছেন, হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলির অনেকেই হাসপাতালে দালাল রেখেছে। অনেক সময় হাসপাতালের ভাঁড়ারে কোনও বিশেষ ওষুধ না-থাকলে তা বাইরে থেকে কিনতে বলা হত। তখন এই দালালরাই গ্রাম থেকে আসা মানুষকে ভুলিয়ে বিভিন্ন দোকানে নিয়ে যেত এবং অনেক বেশি দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য করত। বিনিময়ে তারা দোকান থেকে কমিশন পেত। ফেয়ার প্রাইস শপ চালু হওয়ায় সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই হাসপাতালের দোকান চালুর আগে থেকেই ডাক্তারদের হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে এমন ওষুধের নাম লিখেছেন, যা বাজারে মেলে না বললেই চলে। হাসপাতালের দোকানে ওষুধ না পেয়ে রোগীর আত্মীয়রা ফের দালালদের খপ্পরে পড়ে চড়া দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাজারে পাওয়া যায় না এমন ওষুধ প্রেসক্রিশনে লেখা বন্ধ করার জন্য স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য অন্য উপায় ভেবেছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “চিকিৎসকদের বলে দিয়েছি, ১৫০টি সংস্থার বাছাই করা ওষুধ ছাড়া অন্য ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখা চলবে না। হাসপাতালের দোকানে ফোন করে জেনে নিতে হবে, কোন ওষুধটা আছে। সেটাই প্রেসক্রিপশনে লিখতে হবে।”
চিকিৎসকদের নিয়মের নিগড়ে বাঁধার চেষ্টা চললেও এ ধরনের ওষুধের দোকান খোলার পরে ওষুধ ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। গত মঙ্গলবার, ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান চালু হওয়ার দিনই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লাগোয়া ওষুধ ব্যবসায়ীরা প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে দোকান বন্ধ রাখেন। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মেদিনীপুর জোনের সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর দাবি, “ওষুধ কোম্পানিগুলি ফেয়ার প্রাইস শপকে যে দামে ওষুধ দিচ্ছে, আমাদের তার থেকে বেশি দামে তাদের থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। তাই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।” গত মঙ্গলবারই জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান খোলা হয়। পর দিনই ওই দোকানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাসপাতাল লাগোয়া ওষুধ ব্যবসায়ীরা বন্ধ পালন করেন।
তবে স্বাস্থ্য দফতর যে এ ধরনের কোনও রকম হুমকি বা চাপের কাছে মাথা নোয়াবে না, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব সতীশ তিওয়ারির কথায়, “বাঙুরের দোকানে এক-এক দিনে ৩৫ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে। তবে বারাসত হাসপাতালের ওষুধের দোকানের বিক্রিতে আমরা সন্তুষ্ট নই।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “সরকার যখন একবার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং কাজ শুরু করেছে, তখন সব হাসপাতালেই দোকান হবে।” বাঙুরের দোকানের উদ্বোধন করেছিলেন মন্ত্রী, বিধায়ক তথা ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “দালালচক্র এ বার হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।”
বাঙুরের চিকিৎসকদের দায়ের করা অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ কেন এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.