দৃশ্য ১: বাঁকুড়া শহরের লোকপুর মহাশ্মশানের কাছে দ্বারকেশ্বর নদের বালির চরে হাঁটতে হাঁটতে একটি বালির স্তূপ চোখে পড়ল। ওই স্তূপের উপরে একটি ছেঁড়া গামছা পড়ে রয়েছে। গামছা সরিয়ে বালি সরাতেই তিনটি কাচের বোতল বের হল। বোতলের ছিপি খুলতেই বোঝা গেল ভিতরের তরল পদার্থটি জল নয়। এক মাঝবয়সি ব্যক্তি এসে বললেন, “বোতলে ‘চুল্লু’ (চোলাই মদ) রয়েছে। ওরা রেখে গিয়েছে। সন্ধ্যের পর এখানে ঠেক বসবে।”
দৃশ্য ২: সন্ধ্যের পর বাঁকুড়া শহরের বাসস্ট্যান্ডে রমরমিয়ে বিক্রি চলছে চোলাইয়ের ‘পাউচ’। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চোলাই এখানে ‘পাউচ’ নামেই পরিচিত। ‘পাউচ’-এর টানে সন্ধ্যের পর থেকেই বাসস্ট্যান্ডে ভিড় জমায় বহু যুবক। আসেন কিছু মাঝবয়েসী লোকও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সন্ধ্যের পর প্রকাশ্যেই চোলাই বিক্রি হয় এই এলাকায়। পুলিশ সব জেনেও কিছু করে না।
উপরের দু’টি ছবি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমনকী, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের বাইরেও রাত বাড়লেই চোলাই বিক্রি বাড়ে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের ক্ষোভ, গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে বিষমদ কাণ্ডে ১৭২ জন প্রাণ হারানোর পরে পুলিশ কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল। হাসপাতাল চত্বরের বাইরে চোলাইয়ের ঠেক বন্ধ করতে তৎপর হয়েছিল স্থানীয় পুলিশ। বেশ কিছুদিন বন্ধও ছিল সেই ঠেক। এখন আবার পুরনো ছবিই ফিরে এসেছে। শহরবাসীর প্রশ্ন, খাস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরেই যদি এই অবস্থায় হয়, তা হলে গ্রামেগঞ্জে পুলিশ বা আবগারি দফতর চোলাই ঠেকাবে কী করে?
জঙ্গলমহল ব্লকগুলিও চোলাই কারবারে পিছিয়ে নেই। বারিকুল হাটে প্রকাশ্যেই চোলাই বিক্রি হয় বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমা হাট, বাঁকুড়া থানার শুনুকপাহাড়ি হাটের চিত্রও এক।
মগরাহাটের বিষমদ-কাণ্ডের জেরে গত বছর বাঁকুড়া সদর থানার বাসস্ট্যান্ড এলাকা, আগয়া, মৌলাডাঙ, ডুমুরজুড়ির মতো গ্রামগুলিতেও বেশ কয়েক বার অভিযান চালিয়েছিল আবগারি দফতর ও পুলিশ। গ্রেফতারও করা হয় কয়েক জনকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই সমস্ত এলাকায় ফের রমরমিয়েই চলছে চোলাই কারবার। বাঁকুড়া জেলা আবগারি দফতরের এক আধিকারিক জানান, গোটা জেলায় ৯টি সার্কেল রয়েছে। গাড়ি মাত্র তিনটি, যা ভাগ করে চালাতে হয় ৯টি সার্কেলকে। কর্মী সংখ্যা মাত্র ১৮। ওই আধিকারিকের কথায়, “তাই অভিযান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।” |