পরিবারের অমতে এক যুবককে বিয়ে করেছিলেন বছর উনিশের এক তরুণী। বিয়ের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বামীর সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক বাগানবাড়িতে। ওই রাতে সেই বাড়িতেই তাঁর স্বামী সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ডাকাতি করে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ।
কিন্তু ‘ধরা’ পড়ে যান ওই নববধূ। ফুলশয্যার বদলে সেই তরুণীর এখন ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দেয় উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম তিন নম্বর চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা অরবিন্দ দাসের বাড়িতে। পেশায় ছাপাখানার মালিক অরবিন্দবাবুর ওই পৈতৃক বাড়িটি আট বিঘা জমির উপরে। বিশাল সেই বাগানবাড়ির এক কোণে একটি মন্দির আছে। সেই মন্দিরের নীচে রয়েছে একটি কুঠুরি। উৎসবের সময় ছাড়া অন্য সময়ে ঘরটি বন্ধই থাকে।
অরবিন্দবাবু জানান, গভীর রাতে ছ’জন সশস্ত্র ডাকাত নীচের ঘরের তালা ভেঙে দোতলায় ঢোকে। তারা সবাই মুখোশ পরে ছিল। বাড়িতে সবাই তখন ঘুমোচ্ছিলেন। অরবিন্দবাবু বলেন, “ডাকাতদের এক জন আমার মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে আলমারির চাবি চাইল। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।” অরবিন্দবাবুর শ্যালক তপেশ মজুমদার বলেন, “ওরা আলমারি থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা, দশ ভরি সোনার গয়না, দু’টি মোবাইল ফোন, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে পালিয়ে যায়।”
এর পরেই ঘটে অন্য ঘটনা। ডাকাতেরা ঘর থেকে বেরোতেই অরবিন্দবাবুদের চিৎকারে জড়ো হন প্রতিবেশীরা। দেখা যায়, বাড়ির লাগোয়া সেই মন্দির থেকে বেরিয়ে পাঁচিল ডিঙিয়ে পালাতে চেষ্টা করছেন এক তরুণী। তাঁর পরনে জিন্স, টি-শার্ট। মাথায় সিঁদুর। ধাওয়া করে তাঁকে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর দেওয়া হয় বারাসত থানায়। পুলিশ এসে আটক করে ১৯ বছরের ওই তরুণীকে। মন্দিরের নীচের ওই কুঠুরি থেকে উদ্ধার হয় একটি মোবাইল ফোন ও সিঁদুরের কৌটো।
ওই তরুণীকে জেরা করে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বারাসতের বেঙ্গল কেমিক্যাল এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী হৃদয়পুর এলাকায় পরিচারিকার কাজ করতেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে এক যুবকের পরিচয় হয়। বাড়ির অমতে বৃহস্পতিবার বিয়ে করেন তাঁরা। ওই যুবক তাঁকে ওই মন্দিরের গোপন কুঠুরিতে এনে তোলে। রাতের অন্ধকারে ওই তরুণীকে অন্যত্র নিয়ে যাবে বলে যুবকটি বেরিয়ে যায়।
ওই তরুণীর দাবি, যুবকটি এক বার নিজের নাম বলেছিল বিভাস, আর এক বার সহদেব যাদব। পুলিশ এখন ওই তরুণীকে নিয়ে বারাসত-মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “মেয়েটির কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ডাকাতির সময়ে সে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না-থাকলেও ডাকাতদলের সঙ্গে সে যুক্ত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |