|
|
|
|
|
জাতীয় ব্রিজ |
বাংলার ব্রিজের জীর্ণ কুটিরে
জাতীয় টুর্নামেন্ট
অরিজিৎ গুহ |
|
আমি হলাম সেই হতভাগ্য রাজ্য ব্রিজ সংস্থার সচিব। আঠারো বছর এই দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি গত তিন বছর সর্বভারতীয় ব্রিজ সংস্থারও সচিব আমি।
হতভাগ্য এই কারণে যে, বাংলার ব্রিজ এখন যেন একটা জরাজীর্ণ কুটির। এই লেখাটার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ছুটব ময়দানে ক্রীড়া সাংবাদিকদের ক্লাবের তাঁবুতে জাতীয় ব্রিজ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রেস কনফারেন্সে। কিন্তু সত্যি বলতে কী, সেখানে দু’জনের বেশি তিন জন সাংবাদিককে আমাদের অনুষ্ঠানে দেখলে আমি অবাক হব।
অথচ একটা সময় ব্রিজ খেলাটা ছিল বাঙালির বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমার্থক। এমনকী বাংলা সাহিত্যের গোয়েন্দাদের ভেতর ফেলুদা অন্য ডিটেকটিভদের চেয়ে আলাদা ছিল, কারণ ফেলুদা ব্রিজ খেলত। সেই কলকাতায় এই নিয়ে ছ’বার জাতীয় ব্রিজ চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসছে ১৬ থেকে ২২ ডিসেম্বর। গোটা দেশের প্রায় দু’শো টিমের মধ্যে আশিটার মতো দল শুধু এ রাজ্যেরই। প্রত্যেক দলে ছ’জন করে প্লেয়ার ধরলে শুধু বাংলার প্রতিনিধিই থাকবে প্রায় পাঁচশো।
কিন্তু তাতে কী? ব্রিজ নিয়ে সেই আগ্রহ কোথায় এখানে? আমার কলেজ জীবনে মানে ষাটের দশকের কথা বলছি, দেখতাম প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে পর্যন্ত চুটিয়ে ব্রিজ খেলা চলতে। পরে জলপাইগুড়ি, আইআইটি-তেও অনেকটা একই ছবি দেখেছি। এখনও সেই ক্যান্টিন আছে, চেয়ার-টেবিলও আছে। কিন্তু ব্রিজের বদলে ‘রামি’ চলছে।
আসলে কলেজ পর্যায়, মানে যে স্তরটা ব্রিজের মতো মগজ-সর্বস্ব খেলার সাপ্লাই লাইন, সেটাই আর এখন এই খেলাটায় আগ্রহী নয়। বিশ্বে ব্রিজ-ই বোধহয় একমাত্র গেম যেখানে সত্তর বছরের বুড়োও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারে। কিন্তু অত দিন ধৈর্য দেখাতে বোধহয় এখনকার তরুণ প্রজন্ম রাজি নয়।
আর স্পনসরদের দাক্ষিণ্য? দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ব্রিজ এমন একটা খেলা যেটা টিভি-তে দেখায় না। দাবাতেও আনন্দ বনাম কাসপারভ হলে টিভি দেখায়। লোকে দেখে। স্পনসররা টাকা ঢালে। ব্রিজ সেটুকুও ‘স্পেকটেটর্স গেম’ নয়। ফলে বড় ব্রিজ টুর্নামেন্ট আয়োজনের সবচেয়ে বড় বাধা টাকার অভাব।
ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের কাছে দরবার করেও নেতাজি ইন্ডোর না পাওয়ায় শেষমেশ গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামের গ্যালারির নীচটা ঢেকে এ বার জাতীয় ব্রিজ করতে হচ্ছে। খেলা চলার সময় ব্রিজ প্লেয়ারদের নিশ্চিদ্র মনোসংযোগ ভীষণ দরকার। যেটা নিয়ে ইন্ডোরে কোনও সমস্যা থাকে না। নতুন জায়গায়ও আশা করি সমস্যা হবে না। তবে মনের ভেতর একটা খচখচানি থাকছেই।
এত প্রতিবন্ধকতা। তবু গত অগস্টে ফ্রান্সে বিশ্ব ব্রিজ চ্যাম্পিয়নশিপে যে ভারতীয় রেল দল খেলতে গিয়েছিল, সেই টিমের ছ’জন প্লেয়ারই বাংলার। শেষ ষোলো পর্যন্ত উঠে নক আউটে আমাদের টিম প্রচণ্ড শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র ‘এ’ দলের কাছে হারে। যেটাকে বেশ ভাল পারফরম্যান্স বলা যায়। কিন্তু তাতে বাংলার ব্রিজের জীর্ণ কুটিরের চেহারা ফেরার ইঙ্গিত কই? কোনও কোনও ব্রিজ-পাগল বোকা লোক নেশার মতো এই খেলাটাকে আঁকড়ে আছে। কিন্তু দরকার এ রকম আরও অনেক ‘বোকা’র। |
|
|
|
|
|