|
|
|
|
 |
ফের হারের আতঙ্ক
ঢুকে পড়ল ধোনির শিবিরে
রাজীব ঘোষ • নাগপুর |
|
দৈনিক টিকিট বিক্রির খবর স্থানীয় খবরের কাগজ মারফত চাউর হতে জামথা স্টেডিয়ামের গ্যালারি যেন বেশ ভরাট। তা ছাড়াও আর একটা কারণ আছে। ভারতের ব্যাটিং দেখার আকাঙ্ক্ষা। ক্রিকেটপ্রেমীদের ধারণা ছিল, ইংরেজরা আজ বড়জোর ঘণ্টা খানেক ব্যাট করার পরই মাঠে নামবেন তাঁদের প্রিয় ব্যাটিং তারকারা। তাই সকালে স্টেডিয়ামে ঢোকার সময়ই দেখা গেল টিকিটপ্রার্থীদের লম্বা লাইন। কিন্তু ভারত তো ব্যাট করতেই নামল দিনের প্রায় অর্ধেক খেলা হয়ে যাওয়ার পর। গড়বড় উইকেটে ৩৩০ রানের বোঝা কাঁধে নিয়ে।
এবং অর্ধেক দিনেই টিম ধোনি ৮৭-৪। ২৪৩ রানে পিছিয়ে। হাতে ছ’উইকেট। ফলো অন বাঁচাতেই এখনও ৪৪ রান বাকি। ইংল্যান্ড দলের কনিষ্ঠতম (২১ বছর), টেস্টে অভিষেক হওয়া জো রুট একা যতক্ষণ (২৯০ মিনিট) ক্রিজে ছিলেন, ভারতের প্রথম চার ব্যাটসম্যান সবাই মিলেও ততক্ষণ বাইশ গজে কাটাতে পারলেন না! সহবাগ, গম্ভীর, পূজারা, সচিনইতিমধ্যে ড্রেসিংরুমে। শনিবার তৃতীয় দিন প্রথমে ফলো অন বাঁচাতে হবে ধোনি ও কোহলিকে, তার পর টেস্টে হার বাঁচানোর যুদ্ধ। হারের হ্যাটট্রিক রুখে সিরিজে চরম অপমানিত হওয়ার থেকে বাঁচার যুদ্ধও। কত কাজ এখন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের! |
জল্লাদের নাম জিমি |
 |
এই নিয়ে ন’বার সচিন তেন্ডুলকরকে ফেরালেন জেমস অ্যান্ডারসন। ভেঙে দিলেন মুথাইয়া মুরলীধরনের রেকর্ড।
• ১৯ মার্চ, ২০০৬ (মুম্বই)
লুজ ড্রাইভে খোঁচা, জমা কিপারের হাতে। রান ১।
• ২০ জুলাই, ২০০৭ (লর্ডস)
ইনসুইঙ্গার জমা প্যাডে। এ বার এলবিডব্লিউ। রান ৩৭।
• ১০ ও ১২ অগস্ট, ২০০৭ (ওভাল)
প্রথম ইনিংসে স্লিপে ক্যাচ। দ্বিতীয় ইনিংসে ইনসাইড এজে বোল্ড। রান ৮২, ১।
• ২২ ডিসেম্বর, ২০০৮ (মোহালি)
এ বার ক্যাচ গালিতে। রান ৫।
• ২৫ জুলাই, ২০১১ (লর্ডস)
বলের লাইনে গেল না ব্যাট। এলবিডব্লিউ। রান ১২। |
• ২৯ জুলাই, ২০১১ (ট্রেন্টব্রিজ)
মারাত্মক ইনসুইঙ্গারে আবার এলবিডব্লিউ। রান ৫৬।
• ৫ ডিসেম্বর, ২০১২ (ইডেন)
ইনসুইং নয়, আউটসুইং। পরিণতি একই। খোঁচায় জমা কিপারের হাতে। রান ৭৬।
• ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২ (নাগপুর)
ইনসুইং ব্যাটে চুমু খেয়ে ছিটকে দিল মিডল স্টাম্প। রান ২। |
|
প্রথম দিনের শেষে রবীন্দ্র জাডেজা বলেছিলেন, “উইকেট ভাঙার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।” এ দিন দুপুরে যখন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে পূজারার হাতে বল জমা দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান জেমস অ্যান্ডারসন, তখন পর্যন্ত জাডেজাদের অপেক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি। এমন উইকেটেই অবশ্য চার বছর পর টেস্টে নামা চাওলা চার শিকার করে ফেলেছেন। বেলের (১) ঘন্টি আগের দিনই বাজিয়েছিলেন, দ্বিতীয় দিন প্রায় ঘাড়ে চেপে বসা রুটের (৭৩) শিকড় উপড়ে দিলেন, সোয়ানের (৫৬) ধৈর্যচ্যুতি ঘটালেন এবং অ্যান্ডারসনকে (৪) বেশিক্ষণ দাঁড়াতেই দিলেন না। তবে তা ঘূর্ণি বলে নয়, একেবারে সোজাসাপটা বলে। অশ্বিন, ওঝারা হাপিত্যেশ করে বসে রইলেন, কখন উইকেট তাঁদের থালায় সাজিয়ে দেওয়া হবে। উইকেট অর্জনের রাস্তায় হাঁটলেন না ধোনির দুই প্রধান স্পিনারই। দিনের শেষে চাওলা কিন্তু বললেন, “উইকেট টার্ন করা সবে শুরু করেছে। আজ উইকেটটা কালকের চেয়ে ভাল ছিল। সকালে যখন বল করছিলাম, তখন বল ব্যাটে আসছিল, কাল থেকে আরও ঘূর্ণি পাওয়া যেতে পারে।”
কিন্তু সোয়ান, পানেসররা উইকেটে ঘূর্ণি পেলে তো ইংল্যান্ডের বদলে কাল ভারতকে ফের ব্যাট করতে নামতে হতে পারে। চাওলার আশা, “আমাদের দু’জন সেরা ব্যাটসম্যান (ধোনি ও কোহলি) ক্রিজে রয়েছে। মনে হয়, তা হবে না।” জামথা স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে বসে সামনে রাখা ল্যাপটপে সুনীল গাওস্কর নামের যে ভদ্রলোক মাঝেমাঝে লিখছিলেন, তিনি এ দিন কী লিখলেন জানা নেই। তবে তিনি যদি ভারতের পাল্লা সিরিজ হারের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখেন, তা হলে অবাক হবেন না। পরিস্থিতি মোটেই ভাল নয়। |

মাঠে একজন পানেসর। গ্যালারিতে অনেক। |
জাডেজা যে উইকেট ভাঙার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেই উইকেট নিয়ে এ দিন চায়ের বিরতিতে রাহুল দ্রাবিড় বললেন, “মনে তো হচ্ছে এই উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্পিনের বিরুদ্ধে ভালই খেলবে। বরং ওদের দুই পেসারকে একটু সমঝে খেলতে হবে।” এক পেসারকে সামলাতেই হিমশিম খেয়ে গেলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা, এমনকী, সহবাগ, সচিনও। দুজনেরই মিডল স্টাম্প ছিটকে দিলেন ছ’ফুট দু’ইঞ্চির ল্যাঙ্কাশায়ার পেসার অ্যান্ডারসন। তাঁর আউট সুইঙ্গার সামলাতে না পেরে খোঁচা মেরে প্রায়রের গ্লাভসবন্দি গম্ভীরও।
সৌরাষ্ট্রের নয়া ব্যাটিং তারকাকে আম্পায়ার রড টাকার ভুল আউট না দিলে হয়তো পূজারা-গম্ভীর জুটি টিকে যেত। ভারতীয় বোর্ডের ডিআরএস না চালু করার জেদই বাঁচাতে পারল না পূজারাকে। সোয়ানের বলে যে আউট ছিলেন না, বল যে গ্লাভসের পরিবর্তে কনুইয়ের নীচে লেগে, প্যাড হয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে বেলের হাতে জমা পড়েছে, তা টিভি রিপ্লে-তে বারবার দেখা গিয়েছে। কিন্তু আম্পায়ার যখন আঙুল তুলে দিয়েছেন, তখন তো কিছু করার নেই।
পূজারা ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিতেই সেই উল্লাসটা শুরু হল, যা সব ক্রিকেট কেন্দ্রেই হয়ে থাকে। তিন নম্বর ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর গ্যালারির এই উল্লাস সচিন তেন্ডুলকরের আগমনী বার্তা ভারতীয় ক্রিকেটে। কিন্তু পাশাপাশি এখন সচিনের দ্রুত ফিরে যাওয়াও ক্রমশ নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠছে যে!
যেমন টেস্টের বয়স দু’দিন গড়াতে না গড়াতেই ইদানীং হারের আতঙ্ক ঢুকে পড়ছে ধোনির শিবিরে। জামথাও ব্যতিক্রম নয়।
|
নাগপুরের স্কোরকার্ড |
ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস (আগের দিন ১৯৯-৫): |
রুট ক ও বো চাওলা ৭৩,
প্রায়র বো অশ্বিন ৫৭,
ব্রেসনান এলবিডব্লিউ ইশান্ত ০,
সোয়ান এলবিডব্লিউ চাওলা ৫৬,
অ্যান্ডারসন ক পূজারা বো চাওলা ৪,
পানেসর নঃআঃ ১,
অতিরিক্ত ১৭,
মোট ৩৩০।
পতন: ৩, ১৬, ১০২, ১১৯, ১৩৯, ২৪২, ২৪২, ৩০২, ৩২৫।
বোলিং: ইশান্ত ২৮-৯-৪৯-৩, প্রজ্ঞান ৩৫-১২-৭১-০,
জাডেজা ৩৭-১৭-৫৮-২, চাওলা ২১.৫-১-৬৯-৪, অশ্বিন ২৪-৩-৬৬-১। |
ভারত
প্রথম ইনিংস: |
ভারত প্রথম ইনিংস:
গম্ভীর ক প্রায়র বো অ্যান্ডারসন ৩৭,
সহবাগ বো অ্যান্ডারসন ০,
পূজারা ক বেল বো সোয়ান ২৬,
সচিন বো অ্যান্ডারসন ২,
বিরাট ব্যাটিং ১১,
ধোনি ব্যাটিং ৮,
অতিরিক্ত ৩,
মোট ৮৭-৪।
পতন: ১, ৫৯, ৬৪, ৭১।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৯-২-২৪-৩, ব্রেসনান ১০-১-২৫-০,
পানেসর ১৪-৪-২৪-০, সোয়ান ৭-৩-৯-১, ট্রট ১-০-২-০। |
|
|
|
|
 |
|
|