বালি ব্রিজ
জোড়াতাপ্পিই ভবিতব্য
দায়িত্ব হস্তান্তর হয়েছে কয়েক বার। কিন্তু আজও স্থায়ী মেরামতি হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলে। অভিযোগ, এর ফলে বছরে অন্তত দু’বার ফাটল ধরছে। ব্যতিক্রম হয়নি এ বারেও। অভিযোগ, মাস কয়েক আগে সারানো হলেও ফের বালি ব্রিজের ডানলপমুখী রাস্তায় দেখা দিয়েছে ফাটল। স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের আশঙ্কা, এ বারেও জোড়াতালি দিয়েই কাজ হবে।
উত্তরবঙ্গে একটি সেতু ভেঙে পড়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতুর হাল কী তা খতিয়ে দেখে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু অভিযোগ, আশি বছরের পুরনো বালি ব্রিজের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশ ঠিকমতো পালন করা হয়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস ছ’য়েক আগে বালি ব্রিজের ডানলপমুখী রাস্তার তিন নম্বর এক্সপ্যানশন জয়েন্টের মুখে ফাটল দেখা দেয়। বেশ কিছু দিনের মধ্যেই তা বড় আকার নেয়। তখন পূর্ত দফতর সেখানে প্যাচ ওয়ার্ক করে। আবার একই জায়গায় আরও তিনটি সংযোগের মুখে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাসিন্দা ও যানচালকদের অভিযোগ, এর আগেও বেশ কয়েক বার ফাটল দেখা দিয়েছিল। প্রতি বারেই জোড়াতাপ্পি দিয়ে ফাটল মেরামত করা হয়।
প্রতি বার ফাটল দেখা দিচ্ছে কেন?
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ব্রিজের ডানলপমুখী রাস্তার নীচে রয়েছে ৭৭০ মিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ৮ মিটার প্রস্থের লোহার কাঠামো। ব্রিজের সাতটি স্তম্ভের উপরে রয়েছে সাতটি এক্সপ্যানশন জয়েন্ট। তার উপরে পাতা রয়েছে ঢেউ খেলানো ট্র্যাপ প্লেট। সেই প্লেটের উপরেই কংক্রিট করা রয়েছে। দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়: “এক্সপ্যানশন জয়েন্টগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। তার উপরেই প্যাচওয়ার্ক করা হয়। কংক্রিটের উপরে গাড়ির চাপ পড়ে ফের ফেটে যাচ্ছে। জয়েন্টগুলি বদলানো দরকার।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৭-এ নিবেদিতা সেতু তৈরি হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ দফতরের নির্দেশে বালি ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত দফতরের হাত থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়। এর পরে ২০০৮-এ ব্রিজের ডানলপমুখী রাস্তায় ফাটল দেখা দিলে তা মেরামতির দায়িত্ব কার সেই নিয়ে রেল, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পূর্ত দফতরের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পরে তৎকালীন হাওড়ার জেলাশাসক খলিল আহমেদের মধ্যস্থতায় মেরামতির কাজ হয়। খরচ হয় চার লক্ষ টাকা।
কয়েক মাস পরেই একই রাস্তায় ফের ফাটল দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন মেরামতি না হওয়ায় শেষে বেলুড় মঠের এক সন্ন্যাসী নিজে রাস্তায় নেমে খোয়া ফেলে সেই গর্ত মেরামতি করেন। এর ছ’মাসের মাথায় ফের ব্রিজের রাস্তার গর্ত বোজাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন সেই সন্ন্যাসী। পরে অবশ্য রাজ্য পূর্ত দফতর জোড়াতাপ্পি দেয়। খরচ বহন করেছিলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ফের বালি ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় পূর্ত দফতর।
স্থায়ী মেরামতিতে সমস্যা কোথায়?
পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ব্রিজের রাস্তা মেরামতির দায়িত্ব তাদের হলেও কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলের। তাই এক্সপ্যানশন জয়েন্ট পাল্টানোর দায়িত্ব রেলেরই। পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, “ব্রিজের কাঠামো মেরামতির জন্য কয়েক বছর আগেও আমরা পূর্ত দফতরকে সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু পাল্টানোর বিষয়ে কিছু করতে হলে পূর্ত দফতরকে রেলের সদর দফতরের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। খরচও পূর্ত দফতরকেই বহন করতে হবে।”
রাজ্য পূর্ত দফতরের বিশেষ প্রকল্প বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বঙ্কিম ঘোষ বলেন, “নতুন এসেছি। সমস্ত কাগজপত্র দেখতে হবে। তার পরে কাজের খরচের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।”

নিজস্ব চিত্র




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.