সংস্কার-রথে চিদম্বরম
অর্থনীতির অসুখ সারাতে তেতো ওষুধের নিদান
কাহিল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে অন্তত কিছু দিন তেতো ওষুধ গিলতে হতে পারে বলে জানিয়ে দিলেন পি চিদম্বরম। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্পষ্ট ইঙ্গিত, বৃদ্ধির হার ফের ৯ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে যেতে কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতেই হবে কেন্দ্রকে। কারণ, দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে ওই তেতো ওষুধ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই বলে মনে করছেন তিনি। একই মত বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অথর্নীতিবিদ কৌশিক বসুর।
বৃদ্ধির হারকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে যে প্রথমে শিল্পকে চাঙ্গা করা জরুরি, তা বিলক্ষণ জানেন মনমোহন এবং চিদম্বরম। সেই কারণে গতকালই পরিকাঠামোয় লগ্নির ক্ষেত্রে চটজলদি ছাড়পত্রের পথ প্রশস্ত করেছে কেন্দ্র। এ বার অর্থমন্ত্রীর লক্ষ্য, কর ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পমহলের যাবতীয় সংশয় ও আশঙ্কা দূর করা। সেই সঙ্গে চাঙ্গা করা রফতানিকেও।
শুক্রবার এ প্রসঙ্গে চিদম্বরম জানান, বৃদ্ধির হারকে চাঙ্গা করতে আগামী কয়েক সপ্তাহে বেশ কিছু পদক্ষেপ করবে মনমোহন-সরকার। সরকারি সূত্রে খবর, গুজরাত নির্বাচনের পরেই রফতানি ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে এক গুচ্ছ ঘোষণা করবেন বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা। বিশেষত সুদে ছাড় দেওয়া হতে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে।
সেই সঙ্গে, কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে নতুন নীতিও ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। বিশেষ করে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন (জেনারেল অ্যান্টি অ্যাভয়ডেন্স রুল বা জিএএআর) নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান শিল্পমহলের সামনে স্পষ্ট করতে চান তিনি। যাতে ভারতে ব্যবসারত দুই বহুজাতিক বিদেশের মাটিতে কোনও বাণিজ্যিক লেনদেন করলে, করের বিষয়টি কী হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়মবিধি চালু করা সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থ মন্ত্রক ছাড়ার পরই কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন পুরোদস্তুর হিমঘরে পাঠানোর দাবি তোলে শিল্পমহল। তাদের দাবি ছিল, এর আওতায় ফেলে ভোডাফোন-হাচিসনের মতো পুরনো বাণিজ্যিক লেনদেনেও কেন্দ্র সুদ ও জরিমানা আদায় করতে চাওয়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে লগ্নিকারীদের মধ্যে। এই অনিশ্চয়তা দূর করতেই এ বার মাঠে নেমেছেন চিদম্বরম। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এ বিষয়ে সংশোধনের খসড়া ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এ দিন ‘দিল্লি ইকনমিক্স কনক্লেভ’-এ বৃদ্ধির সুদিন ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে চিদম্বরম স্বীকার করেন, ২০০৮ সালের তুলনায় এখনকার পরিস্থিতি আলাদা। চ্যালেঞ্জও অনেক কঠিন। বড়সড় সমস্যার মুখে রফতানি শিল্প। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। সব থেকে বড় কথা, ইউরোপের হাল না-শোধরানোয় তার সমাধানও এখনও পর্যন্ত নজরে পড়ছে না সেভাবে।
রফতানিকারীদের সংগঠন এফআইইও-র সভাপতি এম রফিক আহমেদের মতে, “মার্কিন অর্থনীতি এখন তুলনায় স্থিতিশীল। কিন্তু ইউরোপের ধাক্কা সব দেশেই লাগছে।” ঠিক এই কথা মাথায় রেখেই রফতানিকে উৎসাহ জোগাতে চাইছে কেন্দ্র।
চিদম্বরমের আশা, বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসা ও বিমান ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র এবং এক হাজার কোটি টাকার বেশি পরিকাঠামো প্রকল্পে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। কিন্তু তবে এখনই তার ফসল ফলতে শুরু করেছে, এমনটা দাবি করছেন না তিনি। সেই কারণে সম্প্রতি শিল্পোৎপাদনের হার বাড়া নিয়ে মাতামাতি করতে রাজি নন অর্থমন্ত্রী বা তাঁর প্রধান উপদেষ্টা রঘুরাম রাজন। একই ভাবে, পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না পাইকারি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার কমা সত্ত্বেও। তাঁরা জানেন, খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি না-কমা পর্যন্ত স্বস্তির কোনও জায়গা নেই। কারণ, তা না-হওয়া পর্যন্ত সুদ কমাবে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
মূলত তেল সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি এবং এয়ার ইন্ডিয়াকে শেয়ার মূলধন জোগানোর জন্য লোকসভায় এ দিন সরকারি ব্যয় ৩২,১২০ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব পাশ করে কেন্দ্র। চিদম্বরমের যুক্তি, এয়ার ইন্ডিয়া ‘না-থাকলে’ টিকিটের দাম যথেচ্ছে বাড়াবে বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলি। সেই কারণেই সংস্থাটিকে অক্সিজেন জোগানোর সিদ্ধান্ত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.