চূড়ান্ত গোপনীয়তা। আর অনুষ্ঠানের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতীয় ঐতিহ্যের নির্ভেজাল ব্যবহার। বিদ্যা বালন-সিদ্ধার্থ রায় কপূরের শুক্রবারের বিয়ের অনুষ্ঠানের ‘ইউএসপি’ বলতে এই দুটোই। আর তাতেই বিস্মিত ভারত। নিজের জীবনের অন্যতম বিশেষ দিনটিতে বিন্দুমাত্র প্রচারের আলো পৌঁছতে দিলেন না খ্যাতির শীর্ষে থাকা বিদ্যা। দক্ষ চিত্রনাট্যকারের মতো শুক্রবারও ‘সাইডপ্লট’ করে রাখলেন সংবাদমাধ্যম ও গ্ল্যামার দুনিয়াকে।
ব্যতিক্রম অবশ্য রেখা। ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, শুক্রবার বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন বিদ্যার এই ‘আইকন’ অভিনেত্রী। বাস্তবিক। তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘পরিণীতা’য় রেখাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলেন বিদ্যা। নতুন জীবনের শুরুর লগ্নেও তাই রেখাকে নিমন্ত্রণ করতে ভোলেননি তিনি। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিদ্যা-ঘনিষ্ঠ দুই ফ্যাশন ডিজাইনারও। ওই অবধিই। এর বাইরে কোনও গ্ল্যামার দুনিয়ার ঠাটবাট ছিল না চলতি বছরের সর্বশেষ ‘সেলেব-ম্যারেজে’।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, বান্দ্রার এক অভিজাত বাংলোতে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। নিপাট নির্ভেজাল ভারতীয় ঐতিহ্যকে ‘থিম’ করেই সাজানো হয় পুরো বাংলোটি। বিদ্যা নিজেও ভারতীয় ঐতিহ্যপ্রেমী। হালফিলের বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিদ্যা বারবার ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন শাড়িতে। বিয়েতেও সেই ‘ট্রেন্ড’ই বজায় রাখলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানিয়েছেন, পুরো অনুষ্ঠানে তিন বার পোশাক বদলেছেন বিদ্যা। |
পরিণীতা:
বিয়ের পরে বিদ্যা বালন ও সিদ্ধার্থ রায় কপূর। ছবি: যোগেন শাহ |
তবে নিমন্ত্রিতদের একাংশের দাবি, সবুজ পাড়ের হলুদ রঙের শাড়ির সঙ্গে গোলাপি ব্লাউজে সব চেয়ে সুন্দর লেগেছে কনেকে। সঙ্গে ফুলের গয়না। এবং পুরো সাজটাই ছিল বাঙালি আদলে। অনেকটা পরিণীতা-র নায়িকা ললিতার মতোই লাগছিল তাঁকে। আর কাকতলীয় ভাবে, বিয়েটাও হল কিন্তু সেই ললিতা-স্টাইলেই। চুপিসাড়ে। আর এই বাঙালি পোশাকের ডিজাইনারটির নাম? বিদ্যা নিজে স্বীকার না করলেও সংবাদমাধ্যম গোড়া থেকেই বলে আসছে, শাড়িটির স্রষ্টা সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।
বাঙালি ছোঁয়া থাকলেও বিয়ে হয়েছে অবশ্য পঞ্জাবি এবং তামিল, দুই রীতি মেনেই। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলেছে বিয়ের ‘মিশ্র’ আচার-অনুষ্ঠান। যদিও বিদ্যা-ঘনিষ্ঠের সগর্ব ঘোষণা, খাবারের মেনু ছিল পুরোপুরি দক্ষিণ ভারতীয়। কিন্তু তাতে কী?
সিদ্ধার্থের বাস বান্দ্রার বাংলোর সামনে পৌঁছতেই পঞ্জাবি ধাঁচে অভ্যর্থনা পায়। অর্থাৎ পুরোপুরি ‘ব্যান্ড-বাজা-বারাত’। ঠিক যেমনটি হয় পঞ্জাবি বিয়েতে। এর পর চেন্নাইতে রিসেপশন দেবেন বর-কনে।
গত তিন দিন ধরেই বিদ্যার বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়িয়েছিল। এমনও শোনা যাচ্ছিল চেম্বুরের এক মন্দিরে বিয়ে করবেন বিদ্যা-সিদ্ধার্থ। এ দিনও প্রথম দিকে এই ধরনের খবরই ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য জানা গিয়েছে, আসল আয়োজনকে আড়ালে রাখতেই গুজব ছড়ানো হয়েছিল। এর আগে অবশ্য সইফ-করিনার বিয়েতেও কিছুটা একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল মুম্বইবাসীর। এরকম গোপনেই বিয়ে সারতে চেয়েছিলেন সইফ-করিনা। তবে এতটা কড়াকড়ি ছিল না সে বিয়েতে।
সিদ্ধার্থর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে কোনও দিনই অকপট ছিলেন না বিদ্যা। এমনকী জনসমক্ষে স্বীকার করেননি নিজের বিয়ের পরিকল্পনাও। বিয়ের দিনটিতেও বজায় রাখলেন সেই নীরবতাই। চুপচাপ নিজের কাজ করে যাওয়াটাই যে ‘সিগনেচার’ তাঁর। তা সে ‘রিল লাইফে’ই হোক, কিংবা ‘রিয়েল লাইফে’।
ভাল থেকো বিদ্যা ম্যাডাম। |