আদতে বাড়িটির নাম ছিল কলিংটন। সত্তরের দশকে বাংলা সিনেমা লালকুঠির লোকেশন পড়ল কলিংটনে। পর্যটকদের কাছে দার্জিলিং পাহাড়ের আর এক আকর্ষণের নাম হয়ে উঠল লালকুঠি। দার্জিলিংয়ে বঙ্গদেশের একমাত্র দেশীয় রাজ্য কোচবিহারের মহারাজাদের অনেক বাড়ি ছিল। তার মধ্যে কলিংটন ছিল মহারাজাদের গ্রীষ্মাবাস। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুর এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন। কোচবিহারের রাজমাতা গায়ত্রী দেবীর স্মৃতিচারণায় সেই বাড়ি “দার্জিলিংয়ে আমাদের বাড়িটির নাম ছিল কলিংটন। শহরের সব চাইতে উঁচুতে ম্যাগনোলিয়ার বীথিপথ পেরিয়ে বিরাট এক বাগানের পাশে খুব সুন্দর জায়গায় দাঁড়িয়েছিল কলিংটন। বাগানের পরেই উত্তরের অরণ্য। আমাদের বাড়ি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত হিমালয়।” |
শরতে শিউলি মিসিং, ডিসেম্বরেও ন্যাপথলিনের লেপ বা রামধনু আর নেই, সৌজন্যে পরিবেশের পরিবর্তন। বিশ্বজুড়ে কোনও কিছু যদি আমূল বদলে যায়, তা হল পবিবেশ। আর তাই এখন আঁতুড়ঘরে নিউবর্ন বেবির মতোই পরিবেশ পরিচর্যায় সকলে কনসার্ন। কিন্তু মিছিলে হাঁটা, কাগজের প্রতিবাদ, আন্দোলন, জনমত তৈরির পরও কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। শুধুমাত্র ঘরের টবের গাছে জল কিংবা বাড়ির পিছনটা নিট অ্যান্ড ক্লিন রাখার পরও যাঁরা এর বাইরে পরিবেশ নিয়ে ভাবেন, তাঁদের জন্যই প্রকাশিত হল উত্তরপত্র। উত্তরবঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক প্রথম পত্রিকা। প্রথম সংখ্যার বিষয় উত্তরের নদী। পরেরটার বিষয় উত্তরের বন। এই রকম ইস্যুভিত্তিক পত্রিকা আগামী দিনে পরিবেশের ভবিষ্যৎ। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বাঁচাতে সবাই যখন উদাসীন, প্রত্যহ ফোর হুইলার কেনার ইচ্ছে বাড়ছে সকলের। তখনই উত্তরের প্রান্তিক জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে উত্তরপত্র প্রকাশ করে সকলের চোখ খুলে দেওয়ার দায়ভার নিয়েছে তুহিন। তুহিনশুভ্র মণ্ডল। নদী বাঁচাও কমিটি বা সাফাই অভিযান করেই ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া নয়। বরং সকলে নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ড্রইংরুমের সংকটে, হাজারও প্রশ্নের উত্তরপত্র। নদীবিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র উত্তরপত্রে তাঁর নদী ভাবনা নিয়ে কলম ধরেছেন। সর্বত্র যখন কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ নিয়ে কাগজের ছড়াছড়ি, তখনই স্রেফ গাছ, আলো, বাতাস, জল নিয়ে কাগজ করতে ছুটে এলেন তুহিন। অন্য পথে চলার সাহস দিয়েছে তাঁর স্পর্ধা, চেতনা, দর্শন, আদর্শ। তাই নামকরণেই যথেষ্ট বোল্ডনেস। নইলে কী করে প্রিন্টেড ম্যাটার হয় উত্তরপত্র? এখানে পত্রিকার স্বার্থকতা, স্মার্টনেস দেখার মতো। তাই সময়ের সাথে সাথে মিশে গিয়েছে উত্তরপত্রের প্রচ্ছদ। সব রং শেষে শুধু সাদা কালো। প্রকৃতি যখন বর্ণহীন তখন প্রচ্ছদও রং হারায়, চিনিয়ে দিল উত্তরপত্র। আর কনসাশনেস তৈরি করতেই উত্তরবঙ্গে আকাশ-বাতাস-নদীর ভাষার বর্ণমালা চিনিয়ে চলেছে উত্তরপত্র। উত্তরবঙ্গের পরিবেশকে শিশুদের বাসযোগ্য করে যাবে এই কাগজ। নবজাতকের কাছে অঙ্গীকার। ব্রাভো তুহিন! |
লেখা ও ছবি: সন্দীপন নন্দী।
|
লেখা পাঠান নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখে। |
|