একই দিনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ এবং জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চালু হল ‘জন ওষধি’ কেন্দ্র। মঙ্গলবার সকালে জলপাইগুড়িতে ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এর উদ্বোধন করেছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা রাজ্যের বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। ওই দু’টি দোকানে প্রচুর ছাড়ে ওষুধ বিক্রি হবে। তবে প্রেসক্রিপশনে ওষুধটি কী উপাদান দিয়ে তৈরি সে কথা উল্লেখ করতে হবে বলে সরকারি নির্দেশ রয়েছে।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেই অনুযায়ী, বরাত পাওয়া সংস্থার দোকানে অন্তত ১৪২ রকম ওষুধ থাকার কথা। অন্য ওষুধ ওই দোকানে মিলবে। পাশাপাশি একই রকম ছাড়ে হাড়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ‘সরঞ্জাম’, পেস মেকার বসানোর সরঞ্জাম পরে সরবরাহ করা হবে। বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া শাখা কমিটি জানিয়েছে, সম্প্রতি আলোচনা করে ঠিক হয়েছে, কিছু ওষুধ তাঁরাও ৬০ শতাংশ কমে বিক্রি করবেন। |
এ দিন মেডিক্যাল কলেজে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। ওষুধের গুণমান যাতে ঠিক থাকে সে দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে জানান শঙ্করবাবু। এ বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত বলে মনে করেন রুদ্রবাবুও। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যেই হাসপাতালের বিভিন্ন গুণমান ঠিক রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সেগুলির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই মতো এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ওষুধের নমুনা আচমকা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য তাঁরা পাঠাবেন। জন ওষধি দোকানটি যেখানে চালু হল সেখানে রোগীর পরিবারের লোকদের বিশ্রামাগার ছিল। বিশ্রামাগার তুলে দিয়ে ওই দোকান করা হয়েছে। তবে এ দিন মেডিসিন বিভাগের কাছে ১৬ জনের রাতের থাকার ব্যবস্থা-সহ একটি নতুন প্রতীক্ষালয় চালু করেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি, দুটি জায়গার অনুষ্ঠান বাবদ অন্তত ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে। যেমন জলপাইগুড়িতে ৩০০ কাপ কফি, ফুল বাবদ খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। প্যান্ডেল, চেয়ার-টেবিল, কার্পেট ও অন্য খাতে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জলপাইগুড়িতে।
শিলিগুড়িতে খরচের বহর কিছুটা কম। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে অনুমান করছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই। মিষ্টির প্যাকেট, কফি-বিস্কুট, ফুলের তোড়ার জন্য ওই টাকা ব্যয় হয়। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, যা টাকা খরচ হয়েছে তা বাঁচিয়ে ‘অ্যাসিলক’ জাতীয় ইঞ্জেকশন কিনে বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীদের জন্য রাখার ব্যবস্থা করা যেত। অবশ্য দুটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের অর্থ খরচ হয়নি। জলপাইগুড়ি হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “যে সংস্থা ওষুধের দোকানের বরাত পেয়েছে, তারাই সব খরচ করেছে। হাসপাতালে ওষুধের তেমন সমস্যা নেই।” বরাত পাওয়া বেসরকারি ওষুধ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় জানান, কত খরচ হয়েছে তা হিসেব করে পরে জানানো হবে।
জলপাইগুড়ি শহর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “মাঝেমধ্যেই সদর হাসপাতালে ওষুধের সঙ্কট তৈরি হয়। গরিব রোগীরা সরকারি বিনামুল্যের ওষুধ না পেয়ে বাজার থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। তখন ওষুধের দোকান উদ্বোধনে এত খরচ বিলাসিতা ছাড়া আর কী? টাকাটা সরকারের না-হলেও বিষয়টি আমাদের কাছে দৃষ্টিকটূ।” |