উদ্বিগ্ন কেন্দ্র |
আক্রোশ মেটাতে যদু-মধুর
হাতেও পার্সেল-বোমা
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
|
|
মালদহের পরে হাওড়া। ইংরেজবাজারের পরে শিবপুরের দক্ষিণ বাকসাড়া।
আধুনিক বোমা বা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিনবত্বের কারণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো সতর্কবার্তায় ফের জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাওড়ার দক্ষিণ বাকসাড়ায় পার্সেল-বোমা বিস্ফোরণে চৈতালি সাঁতরা নামে এক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী নিহত হন। ওই ঘটনার উল্লেখ করে দেশ জুড়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে সতর্ক করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
হাওড়ার আগে, গত বছরের ২৪ এপ্রিল মালদহের ইংরেজবাজারে পার্সেল-বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন এক স্কুলশিক্ষিকা। একটি বাঁধানো বইয়ের ভিতরে খোল তৈরি করে তার মধ্যে বিস্ফোরক ভরে বানানো হয়েছিল ওই আইইডি। তার পরে ওই বছরের মে মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের সতর্কবার্তায় মালদহের ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে যারপরনাই উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ভিআইপি-দের নিরাপত্তার জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
মালদহ ও হাওড়ার ওই দু’টি ঘটনায় অভিনবত্ব কোথায়?
দু’টি ক্ষেত্রেই অভিনবত্ব মূলত ত্রিমুখী।
•
বিস্ফোরক ব্যবহারের উদ্দেশ্য। নাশকতা বা অন্তর্ঘাতের জন্য কোনও জঙ্গি সংগঠন ওই বিস্ফোরক ব্যবহার করেনি। স্রেফ ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতেই দু’জায়গায় পার্সেল-বোমা তৈরি করা হয়েছিল।
• বিস্ফোরক তৈরির পদ্ধতি ও প্রয়োগ। মালদহে ‘প্রেশার রিলিজ’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ল্যান্ডলাইন টেলিফোনের ক্রেডল-এর সুইচ ব্যবহার করা হয়েছিল। যাতে পার্সেল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই বোমা ফেটে যায়। আর হাওড়ায় পার্সেলের মধ্যে রাখা বিস্ফোরকের সঙ্গে যুক্ত একটি মোবাইল ফোনে বাইরের অন্য একটি মোবাইল ফোন থেকে ‘কল’ করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।
• বিস্ফোরক তৈরির পিছনে যারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্বেগের মূল কারণ, পশ্চিমবঙ্গে পার্সেল-বোমা বিস্ফোরণের দু’টি ঘটনায় কোনও জঙ্গি সংগঠন ওই দু’টি আইইডি তৈরি করেনি। মালদহে এক জন ফোন মিস্ত্রি এবং হাওড়ায় এক বিদ্যুৎ-মিস্ত্রি পার্সেল-বোমা তৈরি করেছিল বলে পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে।
ওই দু’টি ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বাড়তি উদ্বেগের কারণ, তারা মনে করছে, সাধারণ মানুষই যদি এই ধরনের মারণাস্ত্র তৈরি করতে পারে, তা হলে তো নাশকতা ঘটাতে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠন কিংবা মাওবাদীদের আর বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে না। তারা মোটা টাকা দিয়ে এই ধরনের কাজ করার জন্য লোক নিয়োগ করেই কার্যসিদ্ধি করতে পারবে। সে-ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের পক্ষে হানাদারদের চিহ্নিত করাও দুষ্কর হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভিআইপি নিরাপত্তা বিষয়ক গত ২৩ নভেম্বরের বার্তা {নম্বর ২৫/ভিএস/২০১২ (১১)-৫৪৯২-৫৬০৭}-য় হাওড়ার পার্সেল-বোমা বিস্ফোরণের উল্লেখ রয়েছে। মন্ত্রকের যুগ্ম অধিকর্তা মনোজকুমার লালের পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়েছে, হাওড়ায় পার্সেল-বোমা বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে প্রায় এক কিলোগ্রাম উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক দিয়ে আইইডি তৈরি করা হয়েছিল।
দিল্লির উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য? রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বীরেন্দ্র জানান, ভিআইপি-দের অফিস বা বাড়িতে পাঠানো প্রতিটি পার্সেল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে নিরাপদ মনে হলে তবেই তা খোলা হচ্ছে। ভিআইপি-র ঘরে তা খোলা হচ্ছে না। নিরাপত্তারক্ষীরা ওই পার্সেল খুলছেন আলাদা একটি জায়গায়। নিরাপদ বলে নিশ্চিত হলে তবেই পার্সেল পাঠানো হচ্ছে ভিআইপি-র কাছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) পার্সেল ও চিঠি পরীক্ষার জন্য ‘মেল ডিটেক্টর’-এর মতো ছোট ও হাল্কা যন্ত্র ব্যবহার করে। এ রাজ্যে ভিআইপি নিরাপত্তায় মেল ডিটেক্টরের ব্যবহার শুরু হয়নি। কেন? বীরেন্দ্র বলেন, “মেল ডিটেক্টর ব্যাগেজ স্ক্যানারেরই ক্ষুদ্র সংস্করণ। ব্যাগেজ স্ক্যানারই বেশি কার্যকর।” |