শুধু দেখা নয়, শোনাও।
জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিতে থাকবে ‘অডিও-ভিসুয়্যাল’ ব্যবস্থা। যে সব প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী দর্শকেরা দেখতে আসবেন, গ্যালারির সামনে দাঁড়ালে তিনি মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শুনতে পাবেন সেই সব সামগ্রীর ঐতিহাসিক তাৎপর্য-বিষয়ক তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতা। শারীরিক সমস্যা থাকলে যাদুঘরের দোতলায় উঠতে হুইল চেয়ার পাবেন দর্শক। সে জন্য তৈরি হচ্ছে ঢালু মেঝে বা ‘র্যাম্প’।
এ ভাবেই আধুনিক সাজসজ্জায় সেজে উঠছে বাগনানের আনন্দনিকেতন কীর্তিশালা। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রকের দেওয়া ২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকায় সেই কাজ শুরু হচ্ছে।
মূল প্রকল্পের ৮০ শতাংশ টাকা দেবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রক। বাকি টাকা ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ হিসাবে দেবে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, কীর্তিশালাটি পরিচালনার দায়িত্ব আছে তারাই। ইতিমধ্যেই মোট টাকার ৫০ শতাংশ কেন্দ্র থেকে এসে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সম্পাদক শ্রীকান্ত সরকার। অন্য দিকে, কীর্তিশালার কিউরেটর বন্যা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “শীঘ্রই দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।” |
আনন্দনিকেতন কীর্তিশালা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। ২০০৮ সালে এটি জেলা জাদুঘরের মর্যাদা পায়। বর্তমানে যাদুঘরটি রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীনে। এই কীর্তিশালায় রয়েছে বহু উন্নতমানের প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী, পুঁথি, কাঁথার কাজ প্রভৃতি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন মৃৎপাত্র, টেরাকোটার কাজ, পাথরের মূর্তি, বাংলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করার প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের উপাদান।
এগুলি দেখতে নিয়মিত দর্শক আসেন। আসে বহু ছাত্র-ছাত্রী। অনেক গবেষকও আসেন এখানে। কিন্তু প্রত্নসামগ্রীগুলি সংরক্ষণের জন্য আধুনিক পদ্ধতি নেই। সংগ্রহশালাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন। গবেষকরা এসে কোনও সামগ্রীর নমুনা চাইলে তা দেওয়া যায় না। কারণ এখানে কোনও মাইক্রো-ফটোকপির ব্যবস্থা নেই। আধুনিকীকরণের পরে সেই সব অভাব মিটবে বলে জানালেন শ্রীকান্তবাবু।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জেলাগুলিতে নতুন সংগ্রহশালা তৈরি, তাদের উন্নতি ও আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে আনন্দনিকেতন কীর্তিশালাকে এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্য দিকে কীর্তিশালা সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে টাকা পেতে তারা বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিয়েছিল। তারই ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রক অক্টোবর মাসে টাকা বরাদ্দ করার কথা জানিয়ে দেয়।
বন্যাদেবী জানান, দু’টি পর্যায়ে আধুনিকীকরণের কাজ হবে। প্রথম পর্যায়ে পরিকাঠামোগত উন্নতি করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্যালারিগুলিতে অডিও-ভিস্যুয়াল ব্যবস্থা চালু, প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প, বাংলার লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি যথা ঢেঁকি, খড়ের চালের কুঁড়েঘর এই সব মডেল, ছবি এবং আলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালন সমিতির সদস্য তথা উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদ বলেন, “আমরা দ্রুত আধুনিকীকরণের কাজটি শেষ করতে চাইছি। প্রকল্পটি সুষ্ঠু ভাবে রূপায়িত হলে এই কীর্তিশালা একটি পর্যটনকেন্দ্রেও পরিণত হবে।” |