‘মেলবন্ধন’ নয় (২৬-১১) শীর্ষক চিঠিতে তপন রায়চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘অভিধান খুললে দেখবেন, ‘মেলবন্ধন’-এর কোনও মিলনাত্মক মানে নেই।’’
কিন্তু সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত ‘সংসদ বাংলা অভিধান’-এ মেলবন্ধনের অর্থ লেখা আছে ‘মিলন’ বা ‘মিশ্রণ’। কুলীনদের বিভাগ বিশেষ (যেমন, ‘ফুলিয়ামেল’) ছাড়াও
‘মেল’ শব্দটির অর্থ হিসেবে সেখানে লেখা আছে:
১. মিলন, ঐক্য।
২.জনতা, উৎসবাদিতে জনসমাবেশ।
রাজশেখর বসুর ‘চলন্তিকা’-য় ‘মেল’ শব্দের অর্থ মিলন, ঐক্য এবং বিবাহে কুলের মিলন (ফুলিয়া’) লেখা আছে।
অশোক মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সংসদ সমার্থশব্দকোষ’-এ ‘মেল’-এর সমার্থক শব্দ হিসেবে লেখা আছে ঐক্য, একতা, সংহতি, ঐক্যবদ্ধতা, ঐকাত্ম্য, সমন্বয়, একীভাব, একত্ব, একীভবন, সাজাত্য, মিলন, মৈত্রী, বন্ধুত্ব, অবিরোধ, জোট, মোরচা, সমবায়, সম্মেলন, সমাগম ইত্যাদি।
সম্ভবত পূর্ববঙ্গের প্রাক্তন প্রবীণ আবাসিক হিসেবে তপনবাবুর কাছে ‘মেল’ শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ এমনই ব্যাপক যে, তার অন্য অর্থগুলি সম্পর্কে তিনি হয়তো তেমন সজাগ নন। তাঁর মন্তব্য: ‘‘এই (মেলবন্ধন) শব্দজোটের মিলনার্থক কোনও তাৎপর্য নেই’’ আমার মতো হয়তো আরও অনেকে মেনে নিতে পারবেন না।
মনোজ ঘোষ। কলকাতা-৬১
|
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের (‘(অ) সুখী সিরিয়াল’, ২-১২) প্রশ্ন: ‘না কি নিজেদেরও কোথাও মিলিয়ে দিই সেই চরিত্রগুলোর সঙ্গে?’ সর্বনাশ! সামান্য সিরিয়াল দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, বেশির ভাগ সিরিয়ালে মহিলা ভিলেনদের ছড়াছড়ি। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো ষড়যন্ত্র করেন তাঁরা। দামি দামি শাড়ি আর গহনা পরে ছবির মতো সাজানো বাড়িতে দিনরাত অমানবিক এবং অবাস্তব প্ল্যান তৈরি করেন তাঁরা। সেখানে ‘দমচাপা দৈনন্দিন’-কে কোথায় পাওয়া যাবে?
শ্বেতা চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-১০৬
|
প্রসঙ্গ: ‘যদুভট্টের তানপুরা’ (কলকাতার কড়চা ১২-১১)। পঁচেটগড় রাজপরিবারে গচ্ছিত আছে সংগীতাচার্য যদুনাথ ভট্টাচার্যের স্বহস্তলিখিত গানের খাতা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক নির্জন পল্লি পঁচেটগড়। এই গ্রামের সুপ্রাচীন জমিদার চৌধুরী দাসমহাপাত্র। এই পরিবারের বংশানুক্রমিক মার্গসংগীত সাধনা ও পৃষ্ঠপোষকতা বাংলার উচ্চাঙ্গ সংগীতধারাকে সমৃদ্ধ করেছিল। এঁদের জলসাঘর প্রায়শই সুরমুখরিত হত দৌলত খান, বিশ্বনাথরাও ধামারী, আমির খান, যদু রায়, ছোটে খান পাখোয়াজি, হায়দ্রীবাঈ, বামাচরণ ভট্টাচার্য, আবদুল্লা সরোদি প্রমুখ বিদগ্ধ কলাবতের কণ্ঠে ও যন্ত্রে। পরিবারের প্রায় সকলেই মার্গসংগীত চর্চা করতেন। চৌধুরী যাদবেন্দ্রনন্দন ছিলেন সুর-সাধনার প্রাণপুরুষ। যাদবেন্দ্রনন্দন সেতার সুরবাহারে তালিম নিয়েছিলেন রামপুর দরবারের সভাগায়ক ওস্তাদ উজির খান-এর কাছে। |
১২৮১ বঙ্গাব্দের কাছাকাছি সময়ে বিষ্ণুপুরের সংগীতাচার্য যদুনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে পঁচেটগড় রাজপরিবারের যোগাযোগ ঘটে। যোগাযোগের প্রথম পর্যায়ে যদুভট্ট আমন্ত্রিত শিল্পী হিসাবে পঁচেটগড়ের ‘রাস’, ‘দোল’ প্রভৃতি উৎসব-অনুষ্ঠানে বছরে দু’এক বার সংগীত পরিবেশন করতেন।
পরে যদুনাথ এই পরিবারে সংগীতশিক্ষক হন। যাদবেন্দ্রনন্দনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা চৌধুরী ব্রজেন্দ্রনন্দন তালিম নিয়েছিলেন যদুভট্টের কাছে। শিল্পী এক জায়গায় বেশি দিন থাকতেন না। বাংলা ও ওড়িশার জমিদার-সামন্ত পরিবারগুলির সংগীতসভায় যোগ দিতেন। এক বার হঠাৎই যদুভট্ট পঁচেটগড় ছেড়ে চলে যান। আর ফিরে আসেননি। ফেলে রেখে যান তাঁর গানের খাতাটি। এই খাতা এখন ঐতিহ্যমণ্ডিত চৌধুরী পরিবারের অমূল্য সম্পদ। যদুনাথের স্বহস্তে লিখিত খাতাটিতে বহু বাংলা ও হিন্দি গান আছে।
শান্তিদেব ঘোষ ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’ গ্রন্থে লিখেছেন, “যদুভট্ট নিজে বহু সঙ্গীত রচনা করেছিলেন... তাঁর রচিত বহু গানে কবিত্বশক্তির প্রকাশ ফুটে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর হিন্দি গানের অনুকরণে বাংলা গান রচনা করতে দ্বিধা করেননি।” খাতাটিতে যদুনাথের রচিত কয়েকটি গান আছে। পাতকুমের মহারাজা শত্রুঘনাদিত্য যদুভট্টকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সংগীতানুষ্ঠানের পর দরবার থেকে শিল্পীকে মানপত্র প্রদান করা হয়। মহারাজার সিলমোহর যুক্ত এই মানপত্রের তারিখ ‘২ ভাদ্র শন ১২৭৪ শাল’। পাতকুমের দরবার থেকে শিল্পীকে দেওয়া হয়েছিল ‘মায়খোরাকি’ ১০০ টাকা। যে সব জমিদার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে শিল্পী সংগীত পরিবেশন করেছিলেন, তার একটি তালিকা আছে গানের খাতায়।
ভাস্বতী শর্মা। গবেষক, সংগীতভবন, বিশ্বভারতী |