পুরসভার একমাত্র বিনোদন পার্ক চুক্তির ভিত্তিতে একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হল কালনায়। পুরসভার দাবি, পার্কটির দেখভালের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তাদের কাছে নেই।
কালনা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে বাম পরিচালিত পুরবোর্ড একটি বিনোদনমূলক পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। শহরে পার্ক তৈরির জন্য যথেষ্ট জমি না থাকায় কাছেই কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের জিউধারা এলাকায় একটি জমিতে ‘পুরবিতান’ নামে একটি পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ওই জমিটিকে জঞ্জাল ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করত পুরসভা। পার্কের মধ্যে ফোয়ারা, ফুলের বাগান, দোলনা-সহ বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শহরের বাইরে হওয়ায় প্রথম থেকেই সেখানে নানা অসামাজিক কাজকর্ম চলত। স্থানীয় বাসিন্দা রমেন ঘোষের অভিযোগ, “পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। অথচ সেখানে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেড়ানোর কোনও পরিবেশই নেই।” আর এক বাসিন্দা গোপেশ্বর শর্মার দাবি, “সন্ধ্যা নামলেই বাড়ে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা। এর জন্য পার্কের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।” |
স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, দীর্ঘ দিন ধরে পার্কের পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে কোনও নজরই দেয়নি পুরসভা। পুরুষ ও মহিলা শৌচাগার দু’টি ভেঙে গিয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ফোয়ারা, দোলনা। লম্বা ঘাস, আগাছায় ভরপুর পার্কে রক্ষণাবেক্ষণের লেশ মাত্র নেই।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ১৭ অক্টোবর বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠকে পুরবিতান নিয়ে আলোচনা হয়। ঠিক হয়, চুক্তির মাধ্যমে পার্কটি তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। পার্কটির দুর্দশার কথা স্বীকার করেছেন কালনার পুরপ্রধান তথা কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। তাঁর দাবি, “পার্কে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম চলে বলে শুনেছি। পার্কটি সঠিক ভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো আমাদের কাছে নেই। পাশাপাশি এটি অলাভজনকও।” তাঁর বক্তব্য, “নবদ্বীপ, মেমারি-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভা তাদের পার্ক চুক্তির ভিত্তিতে তুলে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে দরপত্র ডাকা হবে।”
বিশ্বজিৎবাবু জানান, প্রথমে ঠিক হয়েছিল পাঁচ বছরের চুক্তির ভিত্তিতে পার্কটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হবে। তবে বাসিন্দাদের অনেকেই তা দশ বছরের জন্য করতে বলেছেন। তাঁদের যুক্তি, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটিকে পার্কে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়তে হবে। এর জন্য ব্যয়ও হবে ভালই। তাই দশ বছর না থাকলে সংস্থাটির লাভের কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
পুরসভার উপপুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, “যে সংস্থা পুরসভার সঙ্গে চুক্তি করবে, তারা পার্কের ভিতরে অস্থায়ী পরিকাঠামো গড়ে তোলার অনুমতি পাবে।” |