সেপ্টেম্বরে ৪১২ মিলিয়ন গ্যালন জল নিয়ে ডিভিসি-র কাছ থেকে বিল এসেছিল প্রায় সাড়ে ২১ লক্ষ টাকার। অক্টোবরে জল নেওয়া হয়েছে ৩৩৮ মিলিয়ন গ্যালন। অথচ বিল এসেছে ১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার। এমনিতেই কোষাগারের পরিস্থিতি ভাল নয়। তার উপরে প্রায় ৬ গুণ বেশি টাকার বিল আসায় মাথায় হাত দুর্গাপুর পুরসভার। মেয়র পারিষদ (পানীয় জল সরবরাহ) প্রমোদ সরকার জানান, বিষয়টি নিয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি-র কাছ থেকে দামোদরের জল কিনে তা শোধন করে সরবরাহ করে পুরসভা। ডিএসপি এবং ডিপিএলের এলাকার বাইরে শহরের সর্বত্র জল সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পুরসভা। এমনকী, ডিএসপি এলাকার মধ্যে যে সমস্ত বস্তি আছে, সেখানেও জল পাঠায় পুরসভাই। ডিভিসি-র সঙ্গে পুরসভার দৈনিক ১৫.২ মিলিয়ন গ্যালন জল নেওয়ার চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে গড়ে পুরসভা দৈনিক ১১ মিলিয়ন গ্যালন হারে জল নেয়। গ্রীষ্মে তা বেড়ে দাঁড়ায় গড়ে ১৪ মিলিয়ন গ্যালনে। প্রতি হাজার গ্যালন (সাড়ে ৪ হাজার লিটার) জলের জন্য পুরসভা ডিভিসি-কে দেয় ৫ টাকা ২০ পয়সা। সেই হিসেবে অক্টোবরে বিল আসার কথা ১৭ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা। কিন্তু এসেছে ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা।
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০-এর অক্টোবরে শেষ বার জলের দাম বাড়ানো হয়। সে বার প্রতি হাজার গ্যালন জলের দাম ২ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৫ টাকা ২০ পয়সা। এত দিন তা-ই চলছিল। দু’বছর পরে ফের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ বার আর কিলো গ্যালন হিসেবে নয়। নতুন দাম ধার্য করা হয়েছে প্রতি হাজার লিটার হিসেবে। নতুন নিয়মে, প্রতি হাজার লিটারে জলের দাম ধার্য হয়েছে ৬ টাকা ১৫ পয়সা। সেই হিসেবে প্রতি হাজার গ্যালনের দাম ২৭ টাকা ৯২ পয়সা। পুরসভাকে অক্টোবরের বিল পাঠানো হয়েছে এই নতুন হারে। তাই এক ধাক্কায় বিল বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা যে জল সরবরাহ করে তার ৪০ শতাংশ থেকেই কোনও অর্থ আসে না। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার ধারের ট্যাপকল, বিপিএল তালিকাভুক্তদের বাড়িতে দেওয়া জল ইত্যাদি। অন্য ক্ষেত্রে পরিবার পিছু দিনে ১৩৫ লিটার হারে জল দেওয়া হয়। প্রতি পরিবারের কাছ থেকে মাসে নেওয়া হয় ৭০ টাকা। মেয়র পারিষদ প্রমোদবাবু বলেন, “বছরে জল কেনা, পরিশোধন ও সরবরাহ বাবদ খরচ হয় ৯ কোটি টাকা। সরবরাহ করে আসে ৫ কোটি টাকা। বাকি ৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় পুরসভা। কিন্তু ডিভিসি নতুন যে দাম ধার্য করেছে তা মেটানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” তাঁর দাবি, পুরসভা ডিভিসি-র কাছ থেকে যে জল নেয় তা ব্যবহার করা হয় গৃহস্থালীর প্রয়োজনে। এই দিকটি ভেবে জলের দাম ধার্য করা উচিত। একই মত মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “কোনও রকম আলোচনা না করেই দাম বাড়িয়েছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। পুরসভার মতোই বিপদে পড়বে এডিডিএ, ডিএসপি-র মতো সংস্থাও।” ডিভিসি মুখ্য বাস্তুকারের দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরসভার বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তাঁরাই পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। |