রাতে আসবেন না, নোটিস দিয়ে বলছে হাসপাতালই
রকারি হাসপাতালে ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না, এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়। কিন্তু এ বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই নোটিস দিয়ে জানালেন, দুই ডাক্তার ডিউটি দিতে অরাজি। তাই রাতে চিকিৎসা মিলবে না।
সম্প্রতি এমনই নজিরবিহীন নোটিস পড়েছে বর্ধমানের কালনা মহকুমা হাসপাতালে। জরুরি বিভাগ থেকে মহিলা বিভাগ, দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, নার্সদের বসার জায়গা-সহ নানা দেওয়ালে সম্প্রতি সাঁটানো হয়েছে ওই নোটিস। যার মর্মার্থ: মেডিসিন বিভাগে কোনও চিকিৎসক নেই। বর্ধমানেরই কাটোয়া এবং নদিয়ার প্রতাপনগর হাসপাতাল থেকে দুই চিকিৎসককে সাময়িক ভাবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁরা রাতে কাজ করতে কিছুতেই রাজি হননি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নিতে পারেনি হাসপাতাল। উল্টে চিকিৎসক না থাকায় অন্যত্র ‘রেফার’ করা হলে রোগী ও তাঁর লোকজন যাতে ‘সহযোগিতা’ করেন, সেই আর্জি জানানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মেডিসিন বিভাগে শেষ দু’জন স্থায়ী চিকিৎসক ছিলেন বছর দেড়েক আগে। এঁদের এক জন স্থানান্তরিত হয়ে যান। বছরখানেক আগে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় আর এক জনের। সেই থেকে কখনও ঠেকা দিয়ে চলছে, কখনও একদমই চলছে না। মাস তিনেক আগে সুকুমার ঘোষ ও শ্রাবন্তী দাস মণ্ডল নামে দুই চিকিৎসককে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁরা রাতে থাকতে নারাজ। ফলে বিকেল ৫টা থেকে পরের দিন বেলা ১১টা পর্যন্ত ওয়ার্ডে কোনও চিকিৎসক নেই। রোগীরা নাকাল। এঁদেরই এক জন, কালনা শহরের রমলা তালুকদারের কথায়, “কয়েক দিন আগে রাতে আমার শ্বশুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু কালনা হাসপাতাল বলে দেয়, মেডিসিনের ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে গভীর রাতে ওঁকে কল্যাণীতে নিয়ে যেতে হয়।”
সম্প্রতি একটি ঘটনায় রোগীর বাড়ির লোকজনের জমতে থাকা ক্ষোভ বেরিয়েও আসে। সুপারের উপরে চড়াও হন তাঁরা। এর পরেই অসুস্থ হয়ে সুপার ছুটিতে গেলে সাময়িক ভাবে দায়িত্ব নিয়ে সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষচন্দ্র মণ্ডল ওই নোটিস জারি করেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘রাতে হাসপাতালে এসে মানুষ ভুল বুঝেছিলেন। মনে করছিলেন, মেডিসিনের ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও ডাকা হচ্ছে না। ভুল ভাঙাতেই এই নোটিস। তাতে অন্তত রোগীরা আগেভাগে সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে পারবেন।” সুপারের অনুযোগ, কয়েক দিন আগে মা মারা যাওয়ায় সুকুমার ঘোষ ছুটিতে গিয়েছেন। কিন্তু তার জন্য আপাতত ছুটি না নেওয়ার অনুরোধ অপর চিকিৎসক রাখেননি।
তবে শুধু ওই দুই চিকিৎসকই নন। সুভাষবাবুর আক্ষেপ, মেডিসিন বিভাগে দীর্ঘ দিন স্থায়ী চিকিৎসক না থাকায় যাঁরা অস্থায়ী ভাবে আসছেন, তাঁদের সিংহভাগই রাতে থাকতে রাজি হচ্ছেন না। স্থানীয় এক জনকে নিয়োগ করা হলেও তিনি কাজে যোগ দেননি। মেডিসিন ছাড়াও চর্ম, বক্ষ, কণ্ঠ এবং দন্ত বিভাগে চিকিৎসক নেই। চর্ম বিভাগ ফাঁকা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। ২০০ শয্যার হাসপাতালে স্থায়ী চিকিৎসকের সংখ্যা মোটে ১৮। সাময়িক ভাবে অন্য হাসপাতাল থেকে এসেছেন আট জন। চার জন আছেন চুক্তিতে। চিকিৎসক না থাকায় পরিস্থিতি সামান্য জটিল হলেই অন্য হাসপাতালে রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু যে দুই চিকিৎসক বারবার বলা সত্ত্বেও রাতে আসছেন না, তাঁরা ছাড় পাচ্ছেন কী করে?
নোটিসেই পরিষ্কার বলা হয়েছে, জেলা বা স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েও কোনও রকমের প্রতিকার হয়নি। হাসপাতালেরও ক্ষমতা নেই যে তাঁরা কাউকে তুলে এনে কাজ করাতে পারেন। সপ্তাহ দুয়েক আগেই হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এক চিকিৎসককে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে ভাবেই হোক রাতের বেলায় কাজ করতে হবে। অন্য জনকেও এই কথা জানিয়ে দিতে বলা হয়। সুপারের খেদ, “আমার হাতে শাস্তি দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দুই ডাক্তারকে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। জবাব মেলেনি।”
বহু রকমের চেষ্টাতেও সুকুমারবাবুর সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করা যায়নি। শ্রাবন্তীদেবী কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, “শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অবশ্য বলেন, “এই ঘটনার কথা কেউই আমায় জানাননি। তবে কেউ দিনের বেলা চিকিৎসা করবেন, রাতে করবেন না, এমন চুক্তি তো হতে পারে না! খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.