বাম সরকারের আমলে প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার সকলে আশা করেছিলেন এ বার তড়িঘড়ি কাজ শুরু হবে। কাজ অবশ্য কবে শুরু হবে তার সঠিক দিনক্ষণ জানা না গেলেও রবিবার নতুন করে ওই প্রকল্পের শিলান্যাস হল তৃণমূলের হাত ধরে। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় প্রস্তাবিত টাউন হলের শিলান্যাস করলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা মুকুল রায়। উপস্থিত ছিলেন, সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর প্রমুখ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের পুর নির্বাচনের আগে সিপিএম পরিচালিত গোবরডাঙা পুরবোর্ডের আমলে টাউন হল নির্মাণের জন্য শিলান্যাস হয়। শিলান্যাস করেছিলেন তদানীন্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ওই বছর নির্বাচনে হেরে যায় সিপিএম। টাউন হল নির্মাণ প্রকল্প চলে যায় বিশ বাঁও জলে। আগাছায় ঢেকে যায় শিলান্যাসের ফলক। সেই সঙ্গে ফিকে হয়ে যায় গোবরডাঙার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের টাউন হলের দীর্ঘ দিনের দাবি। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট সরকার। পুরবোর্ড ও সরকারে তৃণমূল থাকায় ফের জোরালো দাবি ওঠে টাউন হল নির্মাণের। সেই দাবি মেনে শনিবার টাউন হলের জন্য ফের শিলান্যাসের ব্যবস্থা করে বর্তমান পুরবোর্ড। কিন্তু একই প্রকল্পের দু’দুবার শিলান্যাস কেন প্রশ্ন করা হলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “গত ৩৪ বছরে সিপিএম গোবরডাঙা-সহ গোটা জেলায় দেড় হাজার পাথর পুঁতেছিল। সেগুলো সব জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। যেটা আমরা পুঁচতপুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, টাউন হল নির্মাণের জন্য খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত বলেন, “পুরসভার হাতে এখন এক কোটি টাকা রয়েছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।” |
তিনি আরও জানান, বনগাঁর সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্কর, বিধায়ক ও মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর এবং জ্যোতিপ্রিয়বাবু তাঁদের সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল থেকে অর্থ দিয়েছেন। প্রয়োজনে আরও টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে অর্থসাহায্য বাবদ ১৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে। তবে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সিপিএমের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। যদিও তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সিপিএম অবশ্য অনুষ্ঠান বয়কট করেছে বলে জানিয়েছে। দলের গোবরডাঙা লোকাল কমিটির সম্পাদক শঙ্কর নন্দী বলেন, “সরকারি অনুষ্ঠান হলেও তৃণমূলের পতাকা ও দলের নেত্রীর ছবি দিয়ে এলাকা মুড়ে দেওয়া হয়। সেই কারণেই আমরা অনুষ্ঠান বয়কট করি।” যদিও সুভাষবাবুর বক্তব্য, “পুরসভার তরফেই অনুষ্ঠান করা হয়। তাই তৃণমূলের লোকেরা তো থাকবেনই। তবে পতাকা লাগানো হয়নি।”
প্রথম বার শিলান্যাসের পরেও কেন টাউন হল তৈরিতে এত দেরি?
প্রশ্নের উত্তরে বর্তমান পুরবোর্ডের দাবি, টাকার সংস্থান না করেই সিপিএম পরিচালিত আগের পুরসভা টাউন হলের শিলান্যাস করে। তা ছাড়া পরিকল্পনাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। দমকলের অনুমোদন ছিল না। টাউন হল নির্মাণের জন্য রয়েছে ৫৭ একর জমি। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মে জমির ৬০ শতাংশ খালি রাখতে হবে। নির্মাণ কাজ হবে ৪০ শতাংশ জমিতে। ওই নিয়মে পুরসভাকে আরও তিন শতক জমি কিনতে হবে। যদিও শঙ্করবাবুর বক্তব্য, “আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলাম। শুধু রাজনৈতিক কারণেই দ্বিতীয়বার শিলান্যাস করা হল।”
তবে স্থানীয় মানুষের দাবি, শিলান্যাসের রাজনীতি নয়। তাঁরা চান তাঁদের দীর্ঘ দিনের আশাপূরণ। |